তাজউদ্দীন আহমদ: মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা ও ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র

প্রকাশিত: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২০

তাজউদ্দীন আহমদ: মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা ও ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র

Manual6 Ad Code

|| হাফিজ সরকার || ২৬ জুলাই ২০২০ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হল ১৯৭১ সালের নয়টি মাস। বাংলাদেশের চব্বিশ বছরের স্বাধিকার আন্দোলন ও সংগ্রাম রূপান্তরিত হয় স্বাধীনতার যুদ্ধে। ঐ নয়টি মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের হাল ধরে যিনি তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিকে বিজয়ের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তিনি হলেন তাজউদ্দীন আহমদ– বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের অনন্য নেতা ও রাষ্ট্রনায়ক। খাঁটি নেতা তিনিই যিনি অন্যের বেদনার ভার নিজ কাঁধে বহন করেন ও মুক্তির পিচ্ছিল পথটির পথপ্রদর্শক হন প্রজ্ঞা, সাহস, সততা ও দক্ষতার আলো ছড়িয়ে। রাষ্ট্রনায়ক ভাবেন শত বছর পরের কথা। সেই অনুযায়ী তিনি সমুখে চলার পথের মানচিত্র নির্মাণ করেন; জনকল্যাণভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র তিনি গড়েন গণমানুষকে সঙ্গে নিয়েই। নেতা ও রাষ্ট্রনায়কের বিরল গুণে ভূষিত তাজউদ্দীন আহমদকে তাই ভালোমত না জানলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসও রয়ে যাবে অসম্পূর্ণ।

মনীষীরা বলেন যে, ইতিহাসে কোনো ফাঁক রাখতে নেই। ফাঁক থাকলেই তাতে ঢুকে পড়ে জঞ্জাল। যার যেখানে স্থান নেই, সে সেখানে তখন স্থান দখল করে বসে। স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ, দ্বিধা-বিভক্তকারী ও সুযোগসন্ধানীরা তখুনি ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাতে সচেষ্ট হয়।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাজউদ্দীন আহমদ সেই প্রেরণাকে প্রবাহিত করেছিলেন সুনির্দিষ্ট পথে। পাকিস্তান কারাগারে অন্তরীন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাজউদ্দীন তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে শক্তি সঞ্চার করেছিলেন এক আপোষহীন স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে।

তাজউদ্দীন সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়রি ১৯৪৭-৪৮’ গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন–

Manual4 Ad Code

“তাজউদ্দীন তাঁর অসাধারণ গুণাবলী দিয়ে বাংলাদেশের আত্মঅধিকার ও পরে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী পার্টিতে প্রথমে কর্মী ছিলেন, পরে এর সাংগঠনিক হাল ধরেছিলেন এবং একাত্তরে একটা অত্যন্ত জটিল অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যে জাতির মুক্তিযুদ্ধে সফল রাজনৈতিক নেতৃত্ব দান করেন। এ জাতির ইতিহাসে, তথা বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাজউদ্দীনের এই অবদান, অদ্বিতীয় এবং অবিস্মরণীয়।”

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চে, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চোখ এড়িয়ে, দুর্গম যাত্রার সঙ্গী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের সঙ্গে ঢাকা ত্যাগ করার সময় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া এক চিরকুটে তিনি তাঁর স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন লিলিকে লিখেছিলেন–

“লিলি, আমি চলে গেলাম। যাবার সময় কিছুই বলে আসতে পারিনি। মাফ করে দিও। আবার কবে দেখা হবে জানি না…… মুক্তির পর।তুমি ছেলেমেয়ে নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও।

— দোলনচাঁপা।”

সৌরভ ছড়ানো ফুলবাগানের রচয়িতা ও প্রকৃতিপ্রেমিক তাজউদ্দীন আহমদের ছদ্মনাম ছিল দোলনচাঁপা। লাখো-কোটি ফুল বাঁচাতে সেদিন তিনি অনিশ্চিত অজানায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালে, বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে, দৈনিক বাংলার কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর দুর্যোগময় যাত্রাকালীন সময়ে গৃহীত ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের (৩০ মার্চ, ১৯৭১) সৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন–

“পালিয়ে যাবার পথে এদেশের মানুষের স্বাধীনতা চেতনার যে উন্মেষ দেখে গিয়েছিলাম, সেটাই আমার ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে অনিবার্য সুযোগ দিয়েছিল। জীবননগরের কাছে সীমান্তবর্তী টুঙ্গি (কুষ্টিয়া জেলায়) নামক স্থানে একটি সেতুর নিচে ক্লান্ত দেহ এলিয়ে আমি সেদিন সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তা হল একটি স্বাধীন বাংলা সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্যে কাজ শুরু করা।”

তাজউদ্দীন আহমদের এই যুগান্তকারী ও ইতিহাসের মোড়-পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন–

“আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ই ছিল তাঁর জীবনের সেরা সময়– ‘the finest hour’।”

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তরক্ষী প্রধান ইন্সপেক্টর জেনারেল গোলোক মজুমদারের সঙ্গে তাঁর ও ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের প্রথম সাক্ষাৎ ঐ ৩০ মার্চেই। ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অনাহারে ক্লিষ্ট তাজউদ্দীনের প্রথম কথাই ছিল যে, ভারত সরকার তাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরূপে গ্রহণ করার পরেই তাঁরা ভারতে আশ্রয় গ্রহণের জন্যে ভারত সরকারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন।

তাজউদ্দীনের কথা শুনে শ্রদ্ধাবনত হয়েছিলেন আইজি মজুমদার। ৩ এপ্রিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তিনি বলেছিলেন–

“এটা আমাদের যুদ্ধ। আমরা চাই ভারত এতে জড়াবে না। আমরা চাই না ভারত তার সৈন্য দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে আমাদের স্বাধীন করে দিক। এই স্বাধীনতার লড়াই আমাদের নিজেদের এবং আমরা এটা নিজেরাই করতে চাই।”

তিনি এ ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীকে গড়ে তোলার জন্যে ট্রেনিং, অস্ত্র-সরবরাহ, শরণার্থীদের আশ্রয়, আহার, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণার জন্যে নিঃশর্ত সাহায্য চেয়েছিলেন এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অপর এক বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে।

মুক্তিযুদ্ধকালের মাত্র নয় মাসে তিনি যেন সমাপ্ত করেছিলেন শত বছরের কর্ম। স্বাধীন রাষ্ট্রের উপযোগী খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, পুনর্বাসন প্রভৃতি অঙ্গ সংগঠনগুলি তিনি সৃষ্টি করেছিলেন, বিশ্বজনমত গঠন আর দেশগড়ার জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় মিলিশিয়া গঠনের বিশাল পরিকল্পনা। বিজয়ের আগেই ১৩ ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভায় রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তাকারী দালালদের বিচারের বিষয়টিও গৃহীত হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি পারিবারিক জীবন যাপন করবেন না। মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার ছেড়ে যদি যুদ্ধ করতে পারে, তাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি কেন পারবেন না?

প্রথম বাংলাদেশ সরকারের চার নেতা, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান

৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমানে শেক্সপিয়ার সরণী) অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পাশের ছোট কক্ষে তিনি থাকতেন। যুদ্ধকালে তাঁর সম্বল ছিল একটিমাত্র শার্ট যা নিজ হাতে ধুয়ে শুকিয়ে তিনি পরতেন। ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, জাতির চরম দুর্যোগের সময় গঠিত প্রথম বাংলাদেশ সরকারকে বাংলাদেশের সবচাইতে দক্ষ ও সফল সরকার অভিহিত করেন, তা অত্যুক্তি নয়।

রাজনীতিবিদ তাজউদ্দীন স্বাধীনতাকামী সামরিক ও বেসামরিক দলগুলিকে বৃহত্তর জাতীয় কাঠামোয় সংগঠিত করেছিলেন এবং প্রথম বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। এই বিষয়গুলি স্মরণ না করলে আমরা আমাদের সত্তাই হারিয়ে ফেলব। অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন–

“১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর তাজউদ্দীন ও প্রথম বাংলাদেশ সরকার ছাড়া কি স্বাধীন বাংলাদেশ হত?”

বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং সেদিনই স্বাধীন বাংলা বেতারযোগে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন বিশ্ববাসীকে নবজাত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান। ১১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্যে তিনি বিভিন্ন সেক্টরের নাম ঘোষণা করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ এবং প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের খুঁজে বের করেন। দেশের মাটিতেই শপথগ্রহণ হবে, এই ছিল তাঁর ইচ্ছা।

সেই অনুসারে, ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। তাজউদ্দীন তাঁর প্রিয় নেতার নামে এই ঐতিহাসিক স্থানটির নতুন নামকরণ করেন মুজিবনগর যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধাবস্থায় সরকার যেখানে যাবে সেখানেই রাজধানী স্থানান্তরিত হবে।

সরকার গঠনের শুরুতেই তাজউদ্দীনকে জটিল অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হয়েছিল, যার জের চলতে থাকে দেশ স্বাধীন হবার পরেও। শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে যুবলীগের এক অংশ তাঁর এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনাস্থা প্রকাশ করে। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী’র সহায়তায় তারা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থে মুজিব বাহিনী গড়ে তোলে যা স্বাধীনতা অর্জনের পথে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করে।

ওদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন-কিসিঞ্জার সরকারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করে স্বাধীনতা নস্যাৎ করার উদ্যোগ নেয়। তাজউদ্দীনের ভাষায়–

“পাকিস্তান তার বন্ধুদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল কিন্তু সফল হয়নি… সংগ্রামের এক পর্যায়ে আমেরিকা প্রশ্ন তোলে, স্বাধীনতা চাও নাকি মুজিবকে চাও। এর উত্তরে আমি বলেছিলাম স্বাধীনতাও চাই, মুজিবকেও চাই।”

সত্যিই তাজউদ্দীন সেদিন সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জাতির জনকের নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করেছিলেন। এই সুবিশাল অর্জনে তিনি কোনো কৃতিত্ব দাবি করেননি। তিনি বলেছিলেন–

“আমি তো শুধু ধাত্রীর কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।”

১৪ ডিসেম্বরে ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। ঐ দিনই তাজউদ্দীনের কাছে গোপন খবর আসে যে, ১৫ ডিসেম্বরে ঢাকার গভর্নর হাউসে শিক্ষিত বাঙালিদেরকে এক সভায় আমন্ত্রণের নামে একত্রিত করে হত্যা করা হবে। এ খবর জানতে পেরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিত্রবাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়, অবিলম্বে গভর্নর হাউসে বোমা বর্ষণ করে ঐ নারকীয় হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিতে। ঐ বোমাবর্ষণের জন্যে বেঁচে যায় আরও অনেক নিরীহ প্রাণ। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।

মুক্তিযুদ্ধকালের প্রধানমন্রীী ও একইসঙ্গে দেশরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দীনের গুরুত্বপূর্ণ আরও অর্জনের মধ্যে রয়েছে–

১.

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের এই মর্যাদাশীল চুক্তি (তিনি ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম যা যুক্তভাবে সই করেছিলেন) যে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার পরেই ভারতীয় সহায়ক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

২.

বাংলাদেশ সরকার যখুনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে বলবে তখুনি তারা চলে যেতে বাধ্য হবে। আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে (২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৪) এ প্রসঙ্গে তাজউদ্দীন বলেন–

জীবন দিয়ে হলেও দেশকে মুক্ত করব, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে মুক্তিযোদ্ধার বজ্রকঠিন অঙ্গীকার

“এমনকি যুদ্ধের দিনে, সবচেয়ে বিপর্যয়ের সময়ে ভারতীয় বাহিনীকে বলেছি, শ্রীমতী গান্ধীকে বলেছি, বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে তুমি আমাদের দেশে যাবে। বন্ধু তখুনি হবে যখন তুমি আমাদের স্বীকৃতি দেবে। তার আগে সার্বভৌমত্বর বন্ধুত্ব হয় না।… ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়ে ভারতীয় বাহিনী আমাদের সঙ্গে এসেছিল। সেদিন, শুনে রাখুন আমার বন্ধুরা, কোনো গোপন চুক্তি ভারতের সঙ্গে হয়নি। একটাই চুক্তি হয়েছে… যেখানে লেখা ছিল আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে সহায়ক বাহিনী হিসেবে তোমরা বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এবং যেদিন আমরা মনে করব আমাদের দেশে আর তোমাদের থাকার দরকার নেই সেই দিন তোমরা চলে যাবে। সেই চুক্তি অনুসারে যেদিন বঙ্গবন্ধু শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন যে, ৩০ মার্চের মধ্যে তোমাদের বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যাবে, তখুনি মিসেস গান্ধী ১৯৭২এর ১৫ মার্চের মধ্যে সহায়ক বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে গেলেন।”

তাজউদ্দীন আহমদের কথা ও তাঁর প্রতিটি কাজের মধ্যে আমরা দেখি মাতৃভূমির মর্যাদারক্ষায় তীক্ষ্ণ, সজাগ, দূরদর্শী ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ এক আত্মপ্রচারবিমুখ ত্যাগী নেতা ও মানুষকে। নতুন প্রজন্ম তাঁকে ও তাঁর মতো ইতিহাস নির্মাণকারীদের যতই চিনবে ততই উজ্জ্বল হবে ইতিহাসের আকাশ ও ভবিষ্যতের পথটি।

তথ্যসূত্র:

১. তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি, ১৯৪৭-৪৮

সম্পাদনা: সিমিন হোসেন রিমি

ঢাকা, প্রতিভাস, ১৯৯৯

২. তাজউদ্দীন আহমদ ইতিহাসের পাতা থেকে

Manual6 Ad Code

সম্পাদনা: সিমিন হোসেন রিমি

ঢাকা, প্রতিভাস, ২০০০

Manual3 Ad Code

৩. অনুকরণীয় সেই মানুষটির কথা

ড. আনিসুজামান, তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা

তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৬

৪. মূলধারা ৭১

মঈদুল হাসান

ঢাকা, দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ১৯৮৬

৫. তাজউদ্দীন আহমদ ও প্রথম বাংলাদেশ সরকার

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা

তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৪

৬. আমার ছোটবেলা ১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমদ

সিমিন হোসেন রিমি

ঢাকা, প্রতিভাস, ২০০১

৭. তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা

শারমিন আহমদ

Manual4 Ad Code

ঢাকা, ঐতিহ্য, ২০১৪।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code