অবিলম্বে পোশাক কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের ‘জীবন রক্ষার’ দাবি

প্রকাশিত: ৪:৩২ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২০

ঢাকা, ০১ মে ২০২০ : করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন, যেখানে অবিলম্বে পোশাক কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের এই মহামারী

কমিউনিস্ট পার্টির মিছিল

ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সমাবেশ   থেকে সুরক্ষার দাবি জানানো হয়েছে।

শুক্রবার সকালে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ন্যায্য পাওনা ও আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটের ওপর গুলিবর্ষণে নিহত ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এসব কর্মসূচি থেকে।
সিপিবি কার্যালয়ের সামনে সিপিবি ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। দূরত্ব বজায় রেখে ১০-১৫ জন নেতাকর্মী হাতে লাল পতাকা ও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সেখানে বক্তব্যে সিপিবির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, “শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম একশ বছর আগে শুরু হয়েছিল সেই সংগ্রামে শ্রমিকরা জীবন দিয়েছিলেন, আত্মাহুতি দিয়েছিলেন আজকে তাদের আমরা স্মরণ করছি। আজকে এই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মেহনতী মানুষদের নিয়ে যে অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে, সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আমরা মেহনতী মানুষ শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আগামী দিনে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব এই প্রত্যাশা আমরা ব্যক্ত করছি। মহান মে দিবস সফল হোক, লাল সালাম।”
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’, ‘সফল হোক মে দিবস, সফল হোক মে দিবস’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
চন্দন বলেন, “আমরা অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আগামী ৫ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। অথচ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, আজকে বর্তমান সরকার গার্মেন্ট মালিকদের স্বার্থে তারা গার্মেন্টগুলোকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক পায়ে হেঁটে তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেছে।
“সরকার একদিকে বলছে আপনারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, অন্যদিকে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বলেছিলাম যে, গার্মেন্ট বন্ধ রাখতে হবে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসের বেতন শ্রমিকদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। আমরা মুনাফালোভী মালিকেরা কোটি কোটি ডলারের জন্য তাদের এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
“আমরা মুনাফালোভী গার্মেন্ট মালিকদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, অবিলম্বে গার্মেন্ট বন্ধ করুন এবং শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা দিন এবং তাদের মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসের বেতন দিয়ে ছুটি দিয়ে দিন। ৬০ ভাগ বেতন নয়, ১০০ ভাগ বেতন দিতে হবে।”
পরে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কর্মসূচি পালিত হয় সংগঠনের সভাপতি মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে। অনুষ্ঠানে কাজী রুহুল আমিন, জলি তালুকদার, মঞ্জুর মঈন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবিলম্বে পোশাক কারখানা বন্ধের দাবি জানান তারা।
এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন করে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। তারাও এই সময়ে পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার কঠোর সমালোচনা করেন এবং অবিলম্বে লকডাউনে শ্রমিকদের বকেয়াসহ তিন মাসের বেতন দেওয়ার দাবিও জানান। পরে একটি মিছিল বের করে তারা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতাকর্মীরাও মানববন্ধন করেন।
১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মূল্য ও আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করছিলেন। সেই আন্দোলন দমনে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগে গড়ে উঠে বিক্ষোভ।
প্রবল জনমতের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে আন্তর্জাতিক মে দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখ ‘মে দিবস’ পালিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে ভাইরাসের বিস্তার রোধে মে দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা এবার বাতিল করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ