সহজ কথা সহজ করে যায় না বলা- কবিগুরু

প্রকাশিত: ১১:১০ পূর্বাহ্ণ, মে ১, ২০২০

ড. সুশান্ত দাস, ০১ মে ২০২০ : সহজ কথা সহজ করে যায় না বলা- কবিগুরু। সহজ কথা-বোরো ফসল দাবার ঘুঁটি। ১। শুরুর কথাঃ প্রশ্ন যখন জীবন না মৃত্যু, তখন জীবনকেই বেছে নিতে হবে।

ড. সুশান্ত দাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘অবিমৃশযকারী অপরাধ’ মোকাবিলা করে ‘করোনা সংক্রমন’ প্রতিরোধ করে দেশকে বাঁচতে হবে, মানুষকে বাঁচতে হবে। (ইচ্ছে করেই ‘বাঁচাতে হবে’ কথাটা লিখলাম না। কারণ, বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নাও নিতে পারে। তখন বাঁচতে হয়) । অজ্ঞতা, অন্ধত্ব নয়, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানই মানুষকে সাহায্য করবে। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, শেষ পর্যন্ত সুস্থ বুদ্ধিই বিজয়ী হয়, এটা ইতিহাসের অভিজ্ঞতা।

২। কি করতে হবে?
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন করার পর কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে পারলে আমরা জিতে যাব। আশা করা হচ্ছে, এ মৌসুমে প্রায় দু’কোটি মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন হবে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। সরকার ১৯ লক্ষ টন ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এটা হলে প্রথমেই আমরা হেরে যাব। বাকী ধান কি হবে? কৃষক বাধ্য হবে পানির দরে ধান বিক্রি করতে। তারপর নিঃস্ব হবে। মধ্যস্বত্বভোগী, চাতাল মালিক, অসৎ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ধান্দাবাজরা এ সুযোগ নেবে। একবার সোনার ফসল এদের হাতে গেলে, সরকারের কিছুই করার থাকবে না। করোনা যুদ্ধের প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ‘ অর্থনৈতিক মন্দা’। আমাদের মত নিম্ন(!) উন্নয়নশীল দেশে এই সংকট মোকাবিলা করার জন্য আছে আমাদের প্রকৃতির দান ‘কৃষি, কৃষি এবং কৃষি’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একাধিক বক্তৃতায় তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু, সরকারি পদক্ষেপ তাঁর সংগে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। এই মুহূর্তে ৪ টি সহজ এবং আশু কাজ কতে হবে।

(১) বোরো কাটার ব্যাপারে কৃষককে সর্বোচ্চ প্রনোদনা ও সহায়তা দিতে হবে। ( পত্রিকান্তরে প্রকাশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি হারভেস্টর মেশিন হাওর অঞ্চলে পাঠিয়েছেন। সঠিক পদক্ষেপ)

(২) উৎপাদিত সকল ধানই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি মনে করে সরকারকে কিনে নিতে হবে। পরিকল্পনা করলে তা সংরক্ষণ করা অসম্ভব নয়। সরকারী সংরক্ষণাগারের অপ্রতুলতা রয়েছে। সেটা কাটানোর জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে অস্থায়ী গোডাউন তৈরি করা, উপজেলাভিত্তিতে প্রয়োজনে গোডাউন ভাড়া করা, কৃষকের নিজের গোলায় ধান রাখার ব্যবস্থা করাসহ ( আরও অনেক সৃজনশীল পরিকল্পনা হতে পারে যা কৃষকরা দিতে পারে) বিভিন্নভাবে ধান সংরক্ষণ করা সম্ভব। ( অবশ্য চুরি ডাকাতি ঠেকানোর ব্যবস্থাও এর অন্তর্ভুক্ত)।

(৩) ধান ক্রয় ও বিক্রয় নিয়ে যে কোন দূর্নীতি হলে, তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। মোবাইল বিচারে শাস্তি বিধান করতে হবে, সাধারণ জনগণের দেওয়া খবরকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৪) এই সময়ে ধান ছাড়াও কৃষকের ক্ষেতে যে তরিতরকারি, সবজি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল রয়েছে ’সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার বিধি মেনে পরিকল্পিতভাবে তা সঠিক দামে ক্রয় করে শহরগুলোতে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রকে (হ্যাঁ রাষ্ট্রকে, বাজারকে নয়) এ ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে কৃষকের হাতে টাকা যাবে। কোনমতেই মধ্যস্বত্বভোগীদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
অন্যান্য সকল পরিকল্পনাকে বজায় রেখেই উল্লিখিত কাজগুলোকে ‘ভরকেন্দ্র’ হিসেবে নিতে হবে। করোনাযুদ্ধে জিততে এটা নতুন রক্ত সঞ্চার করবে। এ বিষয়ে এখনই সার্বিক এবং পূর্ণাংগ পরিকল্পনা নিতে হবে। সব ঠিক আছে পরিকল্পনা নয়। সব ঠিক নেই এটা ধরেই এগুতে হবে।

৩। শেষ কথাঃ
কৃষি ও কৃষক বাঁচলে ‘করোনা যুদ্ধে’ আমরা জিতে যাব । কোন সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না।

ড. সুশান্ত দাস: অধ্যাপক (অবঃ), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ