‘বিপ্লবী কমিউনিস্ট কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার’

প্রকাশিত: ৭:০২ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০

‘বিপ্লবী কমিউনিস্ট কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার’

মহি উদ্দিন মহিম, ১১ জুন ২০২০ : বিপ্লবী কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার ওরপে কমরেড বশির ভাই একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট।

কিশোর বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যিনিব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, পাকিস্তানের শাসক শোষক বিরোধী স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াই সংগ্রাম করেছেন।
সংশোধনবাদ বিরোধী- সাবেক পূর্ব পাকিস্তান-
বাংলাদেশে- মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাও সেতুং -এর চিন্তাধারা রাজনীতির প্রধান নেতৃত্ব তিনি।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল – মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী (সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি – মার্কসবাদী লেনিনবাদী)-এর
প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক বিপ্লবী সুখেন্দু দস্তিদার ওরফে কমরেড বশির ভাই।
অাজ ১১ জুন তাঁর মৃত্যুদিবস (মৃত্যু ১১ জুন ১৯৭৬ সলে)।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশিক- শাসন শোষণ লুণ্ঠন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মাষ্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে- ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে- ব্রিটিশের অস্রাগার লুণ্ঠন, চট্টগ্রামের বাটালী হিলে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবী বীর মাস্টার দা সূর্য সেনের-
সহযোদ্ধা হয়ে সশস্ত্র লড়াই সংগ্রামে জড়িত ছিলেন -কিশোর বিপ্লবী সুখেন্দু দস্তিদার।
তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর।
বিদ্রোহের কারণে- ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ – তাঁকে আন্দামানে নির্বাসন দেয়।
দ্বীপান্তর আবস্থায়- তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতি গ্রহণ করেন।
১৯৪৬ সালে দ্বীপান্তর থেকে আসার পর -চট্টগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টিতে জড়িত হয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা শুর করেন।
১৯৫৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত -পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫৩ সলে মহান নেতা কমরেড স্তালিনের মৃত্যুর পর- সোভিয়েত রাশিয়ায় ক্রুশ্চভ চক্রের ক্ষমতা দখলের- মধ্য দিয়ে সংশোধনবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটে।
১৯৫৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির- ২০তম কংগ্রেসে শ্রমিক শ্রেণীর পার্টির নেতৃত্বে- শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের
শ্রেণী সংগ্রামের ভিত্তিতে, বল প্রয়োগের মাধ্যমে,
বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে- শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব কায়েম ও মার্কসবাদ- লেনিনবাদের মূল ধারকে বাদ দিয়ে, ক্রুশ্চভ শান্তিপূর্ণ উত্তরণ, শান্তিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের
সংশোধনবাদী তত্ত্ব হাজির করে।
ক্রুশ্চভ মনে করতেন যে বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্রের অধীনে, এবং বুর্জোয়া নির্বাচন বিধি বিধানের অধীনে- যদি সর্বহারা শ্রেণী পার্লামেন্টে এক স্থায়ী-
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে, তাহলে বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্রের অধীন – পার্লামেন্টে সর্বহারা শ্রেণীর এই স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন,
শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান প্রক্রিয়ায় তাহা নিজ থেকেই সর্বহারা শ্রেণি কর্তৃক রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন ও
বুর্জোয়া রাষ্ট্র যন্ত্র দখল নিশ্চিত করে।
ক্রুশ্চভ বলেন যে শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষে- দেশে শক্তিশালী বৈপ্লবিক অন্দোলন – বজায় থাকলে,
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এবং সেটাকে জনগণের ক্ষমতার- এক হাতিয়ারে রূপান্তরিত করার অর্থ হলো – বুর্জোয়া শ্রেণীর সামরিক –
আমলাতান্ত্রিক যন্ত্রের ধ্বংশ সাধন এবং পার্লামেন্টারি রূপে- এক নতুন সর্বহারা-
জনগণের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকরণ।
ক্রুশ্চেভ কমিউনিস্ট পার্টিকে- ‘শ্রমিক শ্রেণীর পার্টি’-র বদলে জনগণের পার্টি হিসাবে মত দেন।
১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির- ২২ তম কংগ্রেসে তিনি ঘোষণা দেন যে –
২০ বছরের মধ্যে- তাঁরা সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
কিন্তু বাস্তবে বিশ্বের কোথায়ও
শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বা
সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।
বরং ক্রুশ্চভ কমিউনিস্ট পার্টিকে – শ্রমিক শ্রেণীর পার্টির বদলে সমগ্র জনগণের পার্টিতে- রূপান্তরিত করতে গিয়ে সামন্ত বুর্জোয়া শ্রেণীকে –
কমিউনিস্ট পার্টিতে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
এনিয়ে মস্কোতে ১২ পার্টির সম্মেলন, ৮১ পার্টির সম্মেলন এর মধ্য দিয়ে, মহান নেতা ও শিক্ষক কমরেড মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে -চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে – সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব -ক্রুশ্চভ চক্রের তীব্র বিতর্ক আরম্ভ হয়।
১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে -সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির ২২তম কংগ্রেসে
ক্রুশ্চভের সংশোধনবাদী তত্ত্ব গৃহীত হয়।
ক্রুশ্চভ চক্রের সংশোধনবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে বিশ্বে বিতর্কের ঝড় উঠে,
মাও সেতুং এর নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সহ বিভিন্ন দেশের -কমিউনিস্ট পার্টিতে মার্কসবাদ লেনিনবাদী ধারা এবং ক্রুশ্চভীয় সংশোধনবাদী ধারার- মতাদর্শিক সংগ্রাম ভিন্নতায় রূপ নেয়।
তখন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও
এনিয়ে মতাদর্শিক সংগ্রাম শুরু হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির –
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য –
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার ( কমরেড বশির) ,
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য –
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা (কমরেড খালেদ) ,
পার্টির কৃষক সাব-কমিটির সদস্য-
কমরেড আবদুল হক ( কমরেড রহমত) –
পার্টিতে সংশোধনবাদী ধারার বিরুদ্ধে,
মার্কসবাদ লেনিনবাদ ও মাও সেতুং এর –
চিন্তাধারার পক্ষে অবস্থান নেন।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের নেতৃত্বে –
একটি দলিল পেশ করা হয়,
যাহা বশির-খালেদ-রহমত দলিল নামে খ্যাত।
তখনকার সময় –
পূর্ব পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টির
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
৩ বছর সময় ক্ষেপণ করেও –
কোন সিদ্ধান্তে না যাওয়ায়-
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার,
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা,
কমরেড আবদুল হকের নেতৃত্বে
মার্কসবাদ, লেনিনবাদ,
মাও সেতুং এর চিন্তা ধারায় বিশ্বাসী –
কমরেডদের নিয়ে ১৯৬৭ সালে ১- ৩ অক্টোবর-
সিলেটের চা বাগানে কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
কংগ্রেসে পার্টির নামকরণ করা হয়-
পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি-
( মার্ক্সবাদী -লেনিনবাদী)।
উক্ত কংগ্রেসে কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারকে
পার্টির সাধারন সম্পাদক,
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা এবং
কমরেড আবদুল হককে-
সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
কংগ্রেসে গৃহীত দলিলে শ্রমিক শ্রেণীর-
পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের-
শ্রেণী সংগ্রামের ভিত্তিতে, বল প্রয়োগের মাধ্যমে-
বুর্জোয়া ব্যবস্থা ভেঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর-
একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করা হয়।
দলিলে উল্লেখ করা হয়-
“পূর্ববাংলার জনগণের উপর সাম্রাজ্যবাদ তথা
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, পাকিস্তানের সামন্তগুষ্ঠী ও
তাদের সহযোগী আমলা প্রধান-
পুঁজির উলঙ্গ ও নিষ্ঠুর শোষণ-
এই তিন শোষণ এবং উহাদের স্বার্থ রক্ষক
স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থাই
পূর্ববাংলার জনগণের প্রধান শত্রু।
তাই পূর্ব বাংলা বাঁচার ও মুক্তির
এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার
অর্জনের একমাত্র পথ হলো-
এই ঘুণধরা প্রতিক্রিয়াশীল শাসন ও
শোষণ ব্যবস্থাকে
সমূলে উচ্ছেদ করিয়া উহার স্থলে
পূর্ব বাংলা স্বাধীন সার্বভৌম
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা।
পূর্ব বাংলার এই –
নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের
বিপ্লব হইল জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব।”
সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ‘৬২ আন্দোলন,
‘৬৮/’৬৯ এর গণজোয়ার, গণ অভ্যুত্থান সহ
পাকিস্তানের শাসক শোষকগুষ্ঠিীর-
শোষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি ( এম- এল) এর সাধারন সম্পাদক হিসাবে
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের
ব্যাপক ভূমিকা ছিল।
‘৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সময়
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার পার্টিতে ১ নং দলিল,
কমরেড আবদুল হক ২ নং দলিল পেশ করেন।
১ নং দলিলে কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের ব্যক্তব্য ছিল
পাকিস্তানের শাসকগুষ্ঠি ও
পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে
পূর্ব বাংলার জনগণের লড়াই হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব।
২ নং দলিলে কমরেড আবদুল হকের ব্যক্তব্য ছিল
‘৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও
মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে দুই কুকুরের লড়াই।
২ নং দলিলের রচয়িতা কমরেড আবদুল হক ও
তাঁর সহযোগীদের কারনে
একক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি,
তাঁদের কারনেই পার্টি ভেঙ্গে যায়।
১ নং দলিলের ভিত্তিতে কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার,
কমরেড তোয়াহার নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী,
রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ- ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম,
ফরিদপুর, বরিশাল,সিলেট, খুলনা সহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে পার্টির কমরেডগণ ও
মেহনতি জনতা পাক হানাদার ও
তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-
আলশামস এর বিরুদ্ধে
সশস্র লড়াই সংগ্রাম শুরু করেন।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার,
কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বে-
সাম্যবাদী–শ্রমিক-কৃষক-
মেহনতি জনতার গণফৌজ
সশস্ত্র লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে
পাক হানাদার বাহিনী ও
তাদের দালালদের পরাজিত করে
লক্ষ্মীপুর-রামগতি,নোয়াখালী সদরের
২০০ বর্গমাইলের বেশি অঞ্চল নিয়ে
একটি মুক্ত অঞ্চল গঠন করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যান্ত
সাম্যবাদী- গণফৌজ-
উক্ত অঞ্চল মুক্ত রাখে ও
সেখানে জনগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্টির নামকরণ করা হয়
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল(মার্কসবাদী -লেনিনবাদী)।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার কে
পুনরায় পার্টির সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৭৬ সালের ১১ জুন মৃত্যু পর্যান্ত-
তিনি পার্টির সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার সারাটা জীবন-
সশস্র লড়াই সংগ্রাম দ্বীপান্তর
হুলিয়া মাথায় নিয়ে
শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের-
রাজনীতি করেছিলেন।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী
আন্দোলন-লড়াই,
পাকিস্তানের শাসক –
শোষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন,
পাকিস্তানের শাসক শোষক লুটেরাদের
এ দেশ থেকে বিতাড়নে
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের ভূমিকা অতুলনীয়।
এদেশে অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত –
সমাজ গড়ার আন্দোলন লড়াইয়ে
তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা অনন্তকাল
এদেশের মার্কসবাদী লেনিনবাদীদের হৃদয়ে,
চিন্তা চেতনায় –
বিপ্লবী পথপ্রদর্শক হিসাবে-
তিনি জাগ্রত থাকবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার ছিলেন-
একজন সত্যিকারের কমরেড,
একজন সত্যিকারের কমিউনিস্ট,
তাঁর ছিল যথেষ্ট নেতৃত্বগুণ,
সমাজ-রাজনীতি বিচার বিশ্লেষণ ও
পার্টি পরিচালনায় তিনি ছিলেন
দক্ষতাসম্পন্ন বস্তুবাদী রাজনীতিবিদ।
রাজনৈতিক পথচলায়-
তিনি যথেষ্ট দৃঢ়তা ও
ধৈয্যের পরিচয় দিতেন।
তাঁর তাত্ত্বিক জ্ঞান ,দক্ষতার সহিত সংগঠন ও
কমরেডদের পরিচালনায় তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
সৎ নিষ্ঠাবান লোভ লালসা মোহ এর উর্ধে থাকা
সহয সরল জীবন যাপন,
একজন সত্যিকারের সাম্যবাদী,
আচার আচরণে, কথায় কাজে, জীবনযাপনে,
মনেপ্রাণে শ্রমিক শ্রেণীর চেতনা ধারণকারী,
সকল প্রকার সুবিধাবাদ বর্জনকারী –
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার ছিলেন-
সত্যিকারের বিপ্লবী কমিউনিস্ট,
যাঁর অভাব আমরা অনেক-
অনেক সময় ধরেই অনুভব করছি।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের-
মত পথ চিন্তাধারা যে সঠিক ছিল,
তা বিশ্ব সহ বাংলাদেশের-
বাস্তব অবস্থার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়।
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার-
ক্রুশ্চভ এর সংশোধনবাদী বিরোধী পক্ষের
এদেশের প্রধান নেতৃত্ব,
তাই এর ভালমন্দ দায় তাঁর উপরও বর্তায়।
সংশোধনবাদ বনাম মার্কসবাদ,লেনিনবাদ,
মাও সেতুং এর চিন্তাধারা – এই মহা বিতর্কে-
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদারের ভূমিকা যে সঠিক
তা পরবর্তি ইতিহাস প্রমাণ করে।
ক্রুশ্চভ সংশোধনবাদী তত্ত্ব ইন্দোনেশিয়া,
চিলি, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ সহ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করে শুধু ব্যর্থই নয়,
বুর্জোয়া নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টায়
অনেককেই জীবন দিতে হয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে-
জনমনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে
সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা শুধু বিফল নয়,
আরও পিছিয়ে গেছে।
আমরা কি অতীত ইতিহাসকে এড়িয়ে যেতে পারবো,
এর দায়ভার কে নেবে?
ক্রুশ্চভ এর পথ ধরে সংশোধনবাদী রাজনীতি চর্চার ধারাবাহিকতায় এলো গর্বাচেভ,
তার গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রাইকা তত্ত্বের প্রয়োগ,
সাম্রাজ্যবাদের দালাল গর্বাচেভ এর অশুভ তৎপরতা,
রাতারাতি আরও খোলামেলা হওয়া,
আরও সংস্কার,আরও গণতন্ত্রায়ণের নামে
পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদকে সুযোগ করে দেয়া,
পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী পথে হাঁটা,
অবশেষে কমিউনিস্ট পার্টিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া,
এই ছিল সংশোধনবাদী রাজনীতির পরিণতি।
সংশোধনবাদের বিপর্যয় থেকে এই প্রমাণিত হয় –
কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার মার্কসবাদ,লেনিনবাদ,
মাও সেতুং এর চিন্তাধারাকে –
তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে ভুল করেননি,
তিনি সঠিকই ছিলেন।
আজ কমরেড সুখেন্দু দস্তিদার নেই,
তাঁর অর্জন, তাঁর তাত্ত্বিক লিখন-
রাজনৈতিক কর্মধারা
আমরা ধরে রাখতে পারিনি।
আমরা সুখেন্দু দস্তিদারের যোগ্য শিষ্য হতে পারিনি।
তাঁর অর্জন- সৃজনকে-
আমরা যথাযথ মূল্য দিতে পারিনি।
যে পদ্ধতিতে –
কমিউনিস্ট পার্টিকে আগায়ে নিতে হয়,
তা থেকে আমরা অনেকটা অনুপস্থিত।
একটি কমিউনিস্ট পার্টির জন্য
প্রথম প্রয়োজন বিপ্লবী তত্ত্ব,
বিপ্লবী পার্টি সংগঠণ- বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী,
শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রসরমানদের নিয়ে-
কমিউনিস্ট পার্টির দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তি,
শ্রমিকদের শ্রেণীচেতনার ওপর গুরুত্ব দেয়া,
রাজনৈতিক সংগ্রাম ও
অর্থনৈতিক সংগ্রামের সমন্বয়সাধন এবং
এর আলোকে শ্রমিকশ্রেণীর
শক্তিশালী গণসংগঠন গড়া,
গড়তে হয় কৃষক,নারী, যুবক, ছাত্র,
মেহনতি মানুষের বলিষ্ঠ গণসংগঠন,
এসব না হলে –
কমিউনিস্ট পার্টি শুধু নামসর্বস্বই হয়,
একসময় হারিয়ে যায়।
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ, সাম্প্রদায়িতাবাদ –
সারা বিশ্বেই তাণ্ডব চালাচ্ছে,
শোষণ লুণ্ঠন নিপীড়ন চালাচ্ছে।
বাংলাদেশেও এই অবস্থা বিরাজমান।
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ-
ঘোষিত অঘোষিত জোটবদ্ধ ভাবে লুটপাট চালাচ্ছে।
ভবিষ্যতেও লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে-
ক্ষমতার যত হাত বদলই হোক,
এসব লুটেরাগুষ্ঠি কখনও
জনগণের মৌলিক সমস্যা-
অন্ন, বস্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার-
পূর্ণ সমাধান করতে পারবেনা।
বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক,
নারী, যুবক, ছাত্র,বুদ্ধিজীবী,
মেহনতি জনতা লুটেরাদের উপর
আর আস্থা রাখতে পারছেনা,
তারা লুটেরা বলয় থেকে বের হতে চায়।
বিকল্প আছে কমিউনিস্ট-বাম,
কিন্তু গণমানুষ কমিউনিস্ট- বামদের উপর
ভরসা রাখবে কি ভাবে?
আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা,
নীতি কৌশল প্রয়োগে ব্যর্থতা,
নিজদের পেটিবুর্জোয়া ও
সুবিধাবাদী মানসিকতা,
বুর্জোয়া লেজুড়বৃত্তি ও
বুর্জোয়াদের দালালির কারণে-
মেহনতি জনগণ কমিউনিস্ট-বামদের প্রতি
আগ্রহ দেখাচ্ছনা।
কবে কমিউনিস্ট বামদের বোধদয় হবে?
শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করতে হলে-
বিপ্লবী তত্ত্ব, বিপ্লবী পার্টি সংগঠন,
ব্যাপক ভিত্তিক গণসংগঠন গড়ার মধ্য দিয়ে
আমাদের আগাতে হবে।
আজকের করোনাভাইরাস কবলিত
বিশ্ব-বাংলাদেশে
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ,
সাম্প্রদায়িকতাবাদ-
আজ গণমানুষের-
মৌলিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ,
গণমানুষকে সুরক্ষা দিতে ব্যার্থ।
আবহমানকাল থেকেই
তারা শাসন শোষণ লুণ্ঠন
নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে,
বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়,
বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে এখানে
কখনও গণমানুষের অর্থনৈতি সহ
সার্বিক মুক্তি আসবেনা,
জনগণের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রও কায়েম হবে না।
আজকের করোনাভাইরাস কবলিত
বিশ্ব অবস্থায় প্রতীয়মান হয়-
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ,
সাম্প্রদায়িকতাবাদী ব্যবস্থা
গণমানুষের সংকট সমস্যা –
মহামারি দুর্যোগকালে
পথ দেখাতে সক্ষম নয়,
কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত সমাজব্যবস্থাই
যেকোনো সংকটময় সময়ে
সকল প্রকার প্রতিকূলতার
মোকাবেলা করতে পারে,
দেশ-জনগণকে রক্ষা করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আর
খণ্ডখণ্ড কমিউনিস্ট গ্রুপ নয়,
বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের এখনই সময়-
বস্তুবাদ ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ভিত্তিক –
কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রধান্য দিয়ে
সকল কমিউনিস্টদের নিয়ে
একটি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি গঠন,
সকল কমিউনিস্ট, বাম,
প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে
মেহনতি জনতার স্বার্থরক্ষায় কর্মসূচী ভিত্তিক
একটি শক্তিশালী কার্যকর ঐক্যজোট গঠন।
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ ও
সাম্প্রদায়িকতাবাদ বলয়ের বাহিরে
কমিউনিস্ট বাম প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী
শ্রমিক কৃষক নারী যুবক ছাত্র বুদ্ধিজীবী
মেহনতি জনতাকে নিয়ে জোটবদ্ধ ভাবে
সাম্রাজ্যবাদ, লুটেরা পুঁজিবাদ,
সাম্প্রদায়িকতাবাদ বিরোধী শ্রেণী সংগ্রাম,
গণআন্দোলন-গণজোয়ার-গণজাগরণকে
আরও বেগবান করে গণঅভ্যুত্থান,
এই বিপ্লবী –
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়েই
শোষণমুক্ত সমাজ- জনগণতন্ত্র-
সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে।

মহান বিপ্লবী সুখেন্দু দস্তিদার ওরফে
কমরেড বশির এর মৃত্যুদিবসে
তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও
লাল সালাম।