বিভ্রান্তির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির ‘দুঃখ প্রকাশ’

প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২০

বিভ্রান্তির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির ‘দুঃখ প্রকাশ’

Manual3 Ad Code

ঢাকা, ১৯ জুন ২০২০: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারী কতদিন থাকতে পারে, সে বিষয়ে বক্তব্যে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হওয়ায় ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

Manual5 Ad Code

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, বক্তব্যের স্ক্রিপ্টটি দ্রুততার সঙ্গে তৈরি করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় তিনি সেটি ‘ভালো করে পরীক্ষা করার সুযোগ পাননি’। সেই স্ক্রিপ্ট পড়েই বৃহস্পতিবার তিনি অনলাইন বুলেটিনে বক্তব্য দেন।

“পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন ওই বক্তব্যে অস্পষ্টতা তৈরি হতে পারে। তাই প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে পাঠানো স্বাস্থ্য বুলেটিনে বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।”

সেখানে অধ্যাপক আজাদ তার আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি, তার বদলে কেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দুই বা তিন বছর স্থায়ী হতে পারে- সে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন।

বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের ১০৩ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়।

সদ্য করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা আবুল কালাম আজাদ সেদিন স্বাস্থ্য বুলেটিনে হাজির হয়ে বলেন, নতুন করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশের অচিরেই মুক্তি ঘটছে না।

“বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি দিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।”

তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকার যখন দিনরাত পরিশ্রম করে মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখারা নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তখন করোনার আয়ুষ্কাল নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কোনো কোনো কর্মকর্তার অদূরদর্শী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য জনমনে হতাশা তৈরি করছে।”

সেতুমন্ত্রী কাদের ‘এ ধরনের সমন্বয়হীন, অযাচিত বক্তব্য’ দেওয়া থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতনদের বিরত রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “স্পর্শকাতর এই সময়ে দায়িত্বশীল পদে থেকে কারো দায়িত্বহীন বক্তব্য রাখা সমীচীন নয়।”

এর কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে মহাপরিচালকের ‘দুঃখ প্রকাশের’ কথা জানিয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সেখানে বলা হয়, মহাপরিচালকের যে বক্তব্যটি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যাতে গণমাধ্যম বিষয়টি বুঝতে পারে।

প্রেস রিলিজে ডা. আজাদের বক্তব্যের অংশটুকু ব্যাখ্যা করে বলা হয়, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি সারাবিশ্বে এক দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। একটি সফল টিকা আবিষ্কার এবং পর্যাপ্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সফল প্রয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দেশগুলোতে করোনার অস্তিত্ব থাকবে, ফলে এটি একবছরের বেশি, এমনকি দুই বা তিন বছর বা এর ও বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। যদিও আমরা মনে করি, সংক্রমণের মাত্রা অনেক হ্রাস পাবে।”

Manual1 Ad Code

মহাপরিচালক দেশের মহামারী পরিস্থিতি নিয়ে বুলেটিনে যা বলেছেন, সেসব বিষয়ও এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, “বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন কিছুকাল পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করলে অনেক লুক্কায়িত এবং মৃদু কেসও শনাক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যায় পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।”

মহামারী প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথাও বুলেটিনে সবিস্তারে তুলে ধরেন আজাদ, যা এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়, “এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্যক উপলব্ধি করেন। এই মুহূর্তে তিনিই দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ব্যক্তি। করোনা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য অর্থাৎ জীবনের সকল উপজীব্যকে ঘিরে। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে অধিকতর জোরালো নজর দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি ২০০০ চিকিৎসক ও ৫০০০ নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তার নির্দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতা তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে।”

এরপর উদ্যোগগুলোর বিবরণ দিয়ে আজাদ বলেন, “আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে ভরসা রাখুন এবং বিশ্বের করোনা বাস্তবতাও লক্ষ্য করুন। বাংলাদেশে বিষয়টি ব্যতিক্রমী হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী যা করা সম্ভব এবং যা করা বাস্তবমুখী, সরকার সেরকম ব্যবস্থাই নিচ্ছে।

Manual6 Ad Code

“একটি কথা বলতে চাই আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই। মনোবল হারাবেন না। সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। যতদিন কোভিড থাকবে ততদিন প্রত্যেককেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আপনার অবহেলা বা অসাবধনতা আপনারই ক্ষতি করতে পারে । লক্ষণ থাকলে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।”

Manual8 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code