সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০
সুমন সুপান্থ, ২১ জুন ২০২০ : হুমায়ূন আহমেদ বলে দিলেন বলেই যে সারা পৃথিবীর বাবারা সব ভালো হয়ে গেলেন, তা কিন্তু না। বরং দেখতে পাই মন্দ বাবা হয়তো নয়, কিন্তু অভিযুক্ত বাবায় ঠাসা এই জগত-সংসার। মা’দের অনেক গুণ। জন্মের আগে শরীরে বহন করেন। যন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দেন। খাওয়ান, পড়ান। আদর করে বড় করে তুলেন। সন্তানের জীবনে যতো ঝড় ঝঞ্ঝা আসে, প্রথমে নিজেই সেটা আলগে নিতে চান। অথবা এর কিছুই না করেও, এমন কি জন্মের আগে পৃথিবী ছেড়ে বা সন্তানকে ছেড়ে চলে গেলেও মা’কে ভালোবাসতে হলে আমাদের কারণ লাগে না কোনও। প্রকৃতিই এই সুবিধা মা’দের দিয়েছে।
কিন্তু বাবাদের আপনা আপনিই ভালোবাসা পেয়ে যাবার সুযোগ কম। বাবাদের পরীক্ষা দিতে হয়। জীবনভর পরীক্ষা। কঠিন সে পরীক্ষা। ঠিকঠাক চাহিদার যোগান দিতে হয়। সন্তানের স্বপ্ন ধরার জন্য তাঁকে দৌড়াতে হয় আরো বেশি জোর কদমে। নিজের একটা নোকিয়া থাকুক কি না-থাকুক সন্তানের জন্য একটা অ্যাপল কি এণ্ড্রয়েড যোগাড় করে দিতে পারলেই বাবা আপনি নিজের স্কোর কিছুটা ভালো করতে পারবেন। অনেক অনেক আয় রোজগার যদি করতে পারো, তবে স্কোর বাড়বে আরেকটু। যদি পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দাও, তবে আরও কিছু স্কোর যুক্ত হবে মার্কে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা ব্যবহার করে সেই সন্তান যদি যায় বিগড়ে, তখন; “লোকটার জন্যই এসব হয়েছে, কেবল কাজ আর কাজ, বাচ্চাদের সময় দিয়েছে কখনো!” — এটা শুনে গিলে ফেলতে হবে। আবার যদি সে স্বাধীনতা না দেন, তাহলে স্বৈরাচার, রক্ষণশীল, সেকেলে অভিধা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে।
মৃত্যুর আগে নিশ্চিত করে যেতে হবে, সঞ্চয় কিছু রেখে গেলেন কি না! সবচেয়ে বড় যে পরীক্ষা, সেটা হলো, উপরের সব সক্ষমতা অর্জন করেও আপনি ভালো বাবা কখনোই হতে পারবেন না, যদি আপনার সন্তানের মা’র সঙ্গে মানিয়ে না চলতে পারেন হে জনক!
নিজের সন্তানদের ছাড়াও, আমি আমার বাবার রেখে যাওয়া ৩ সন্তানেরও বাবার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এটা বুঝে গেছি যে, যে-কোনও পরিবারেই বাবা মানে সর্ব্বোচ্চ অভিযোগে অভিযুক্ত মানুষটা। বাবা মানে সেই একলা পুরুষ, যার জুতোর সোল ক্ষয়ে গেছে কিন্তু গোপনে একটা নতুন সোল লাগিয়ে নিয়ে দিব্যি আরেকটা বছর পার করে দিচ্ছেন। বলছেন, নাহ জুতোটা তো ঠিকই আছে। বাবা সেই নিসঃঙ্গ কর্নেল, যাকে কেউ কোনওদিন চিঠি লিখে নি, লিখবেও না। দুর থেকে মা কে ফোন দিলে জেনে নিবে বাবা কেমন আছে। বাবা সেই একলা মানুষটি যাকে সঙ্গ দেয়া আদিখ্যেতা। কিন্তু তার নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়টা তার প্রাপ্য বলেই প্রতিষ্ঠিত। বাবা হলেন জীবনভর সংসারে কামলা খাটা সেই ব্যক্তি – যাঁকে সবচে সহজে ভুল বোঝা যায়, সবচে’ ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায় – অন্যের কাছে তো বটেই, এমনকি নিজের কাছেও! এই দুর্ভাগ্যগ্রস্ত বাবাদের মধ্যে ততোধিক দুর্ভাগ্যবান বাবা হচ্ছে তিনি, যিনি কেবল পুত্র সন্তানের বাবা। মনোবৈজ্ঞানিক সুত্র মতেই সেই পুত্ররা ক্রমশ তাঁর থেকে দুরে, আর মা’র দিকে আরো ঝুকে থেকে থেকে তাঁকে ততোধিক একা করে দেয়!
আমি প্রতিটি দিবসেরই পক্ষে। (হোক লোক দেখানো। হোক কর্পোরেট-পুঁজি জারিত। তাও সেই একটা দিনে তো ওই একটা মানুষ বা বিষয় আলাদা হয়ে জগতের সামনে এলো।) বাবা দিবসের পক্ষে তো আরও বেশিই।
এই ক্রমশ একা হয়ে পড়া সমাজে, অতি-একা এই কলুর বলদ মানুষটাকে একটা দিন না হয় বলাই গেলো — “এতো ভেবো না বাবা। এতো মন খারাপ করে থেকো না। আমরা তো তোমাকেও ভালোবাসি! “
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D