সিলেট ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০
বিশ্বেন্দু নন্দ, কলকাতা (ভারত), ২১ জুন ২০২০ : কোলকাতার জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলন এ দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন আমাদের মতো সাধারন মানুষদের সামনে এনে দিয়েছে। অনেকদিন ধরে এই ব্যাবস্থার সংশোধনের জন্য যারা কাজ করে চলেছেন তাদের বাইরে , এ প্রশ্নে আমাদের উদাসীনতার রেশ কাটতে না কাটতেই মজফরপুরে ১৩০+ শিশুর মৃত্যুর খবর জানা গেল।কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মজফরপুরে এই শিশুদের মৃত্যুর কারন নিয়ে বিদগ্ধজনেদের (এদের মধ্যে স্বনামধন্য কিছু চিকিৎসকও আছেন ) প্রায় বিপরীতমুখী মতামতও জানা গেল । চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ আমাদের মতো অনেকেই এই ‘বুদ্ধি যুদ্ধে’র কিসসু বুঝলাম না । তবে প্রতিদিনের যাপন দিয়ে , বেঁচে থাকা দিয়ে বুঝতে অসুবিধে হোলো না এই মৃত্যুর পেছনে “একিউট এনকেফেলাইটিস সিনড্রোম” বা “টক্সিক এনকেফ্যালোপ্যাথি” ( শব্দ গুলো আমাদের মত গোলা লোকেদের কাছে সিন্ধু সভ্যতার লিপির দুর্বোধ্যতা মাত্র , কিছু বিদগ্ধ জনের মন্তব্য থেকে টুকে নেওয়া )বা অন্য কোনো নামের কিছু হলেও হতে পারে, মূল কারণটা আজন্ম আধপেটা খাওয়া বা না খাওয়া , দুঃসহ পরিবেশ , ঝুপড়িতে বা ফুটপাথে গাদাগাদি করে অবমানবের মত বেচে/টিকে থাকা ইত্যাদি।প্রোফেসর টি জেকবের লেখার এই অংশটি দেখলে অনেকটা ধারনা করা যায় “The disease affected only malnourished children between the ages of two and 10. A majority of them were from families camping in orchards for fruit harvesting. No child from the nearby towns fell ill. Children of well-to-do families never fell ill.”। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে এই ত্বাত্বিক অজাযুদ্ধে , বাধ্যতায় বস্তিবাসী- শিশু সন্তান হারানো মা-বাবার কোনো স্বান্তনা নেই , ভবিষৎ সন্তানটিকেও এই ভাবেই হারাতে হতে পারে এটা তারা প্রায় নিশ্চিত । থাক এ সব কথা। বরং দেখি কোলকাতার জুনিয়ার ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবীগুলো এবং যদি (প্রচুর সম্ভাবনা আছে) মজফরপুরের মতো অবস্থা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয় তবে এই দাবীগুলো প্রান্তিক সমাজের অসহায় মৃত্যু আটকাতে কতটা কার্যকর হতে পারে । গণআন্দোলনের কর্মী শুভেন্দু দাশগুপ্ত তুলে আনলেন কিছু প্রশ্নঃ- (১) প্রতিটি হাসপাতালে ‘বিপদ অ্যালার্ম’ বাজার ব্যবস্থা থাকবে।কাদের ‘বিপদ’-এ অ্যালার্ম বাজবে? জুনিয়র ডাক্তারদের। (২)হাসপাতালে গোলমালের খবর দিতে ‘ডায়াল ১০০’-এর মতো ‘হেল্প লাইন’ থাকবে। কাকে ‘হেল্প’ করার জন্য? জুনিয়র ডাক্তারদেরকে। (৩)প্রতিটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে কোলাপসিবল গেট থাকবে। গেট খোলা রাখা ও বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত কে নেবেন? কীসের ভিত্তিতে নেবেন? প্রতি হাসপাতালের জন্য নির্দিষ্ট থানার অফিসার? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? জুনিয়র ডাক্তাররা? (৪)রোগীর অবস্থা সম্পর্কে পরিবারের লোককে জানাবে জনসংযোগ অফিসার। তিনি কি চিকিৎসক? তিনি কি রোগীর তাৎক্ষণিক সব প্রশ্নের ডাক্তারদের উত্তর জানেন? নাকি রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত প্রশ্নের ডাক্তারদের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত জবাব জেনে নিয়ে জানাবেন? চিকিৎসা বিষয়ে কথা বলাবলি তো ডাক্তার রোগী সম্বন্ধে ভরসা, বিশ্বাস, জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রশ্ন, উত্তর বিনিময়। (৫)হাসপাতালের নিরাপত্তার (জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তার) নজরদারিতে পুলিশের নোডাল অফিসার। এরপরেও যদি হামলা হয়,পুলিশের বদলে সশস্ত্র পুলিশ? তারপর হলে আধা সেনাবাহিনী? তারপর হলে সেনাবাহিনী?(৬)হাসপাতালে ঢোকার সময় পুলিশের চেকিং। কী ধরণের চেকিং? বডি সার্চ? স্ক্যানিং? বায়োমেট্রিক টেস্ট? ফটো আইডি কার্ড? রোগী পিছু দু’জন? (৭)স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদর নিরাপত্তায় কড়া মেডিকেয়ার আইন? সেটা কী? দরিদ্র শ্রেণির রোগীরা জানতে, বুঝতে, পড়তে পারবেন তো? (৮)সহজে চোখে পড়ে এমন জায়গায় থাকবে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে হোর্ডিং। দূর দূর থেকে আসা রোগীদের পরিজনরা কীরকম ব্যবহার করবেন? শুধু সেই নির্দেশ? , ইত্যাদি // তাহলে কি পরিকাঠামো উন্নয়ন ,প্রানদায়ী ওষুধের বিনামুল্যে নিয়মিত প্রাপ্যতা , আরো বেশী ডাক্তার এবং চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ, এই সব প্রাথমিক দাবীর তালিকায় থাকার উপযুক্ত নয় ?শ্রী শুভেন্দু দাশগুপ্ত আরো লিখলেন:- “ নিম্নবর্গের দরিদ্র অসহায় রোগীদের শুধু ‘দুর্বৃত্ততা’-র দিকটাই দেখলেন? রাষ্ট্র এভাবেই ‘পক্ষ’ বানায়’, ‘প্রতিপক্ষ’ বানায়,পক্ষ নেয়।আমরাও রাষ্ট্রের পক্ষ বানানোর পাশে দাঁড়িয়ে যাই। আমরা ভাবার সময়, দাবি বানানোর সময়, সিদ্ধান্ত বানানোর সময় ভুলে যাই জীবন্ত সমাজ বাস্তবতা। অন্য পক্ষের সমাজ বাস্তবতা। একটা উদাহরণ। আমার বাড়ির পাশে একটি ‘বস্তি’। আজকাল এভাবে পরিচয় দেওয়া চালু হয়েছে, তাই বলছি ‘মুসলমান’ মানুষজনের ও ‘হিন্দু’ মানুষজনের অনেকদিনের পাশাপাশি বন্ধুতায় বসবাস।যখনই কেউ অসুস্থ হন, ১০ জনের কাছাকাছি মানুষজন হাসপাতালে দৌড়োন। কেউ ডাক্তারের সাথে কথা বলেন, কেউ ট্রলি নিয়ে আসেন, কেউ তক্ষুণি প্রয়োজনীয় ওষুধ আনতে, কেউ পরীক্ষা করাতে, কেউ রক্ত যোগাড়ে, কেউ টাকা নিয়ে আসতে, কেউ নিছক মানসিক মদত দিতে। এঁরা এভাবেই একসাথে থাকেন। নতুন মধ্যবিত্ত আমাদের মতন ‘একা একা’ হয়ে যাননি। এবারে প্রস্তাবিত ও স্বীকৃত নিয়মে এঁরা যেতে পারবেন না। এমন ‘সামাজিক কাজ’টি হাসপাতালের নতুন নিয়মে গেটেই আটকে যাবে। জুনিয়র ডাক্তারদের ‘নিরাপত্তা’ দিতে।“ প্রশ্নগুলো সহজ ? উত্তর জানা ?
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D