স্বাস্থ্যব্যবস্থার এখন কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার: ফজলে হোসেন বাদশা

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

স্বাস্থ্যব্যবস্থার এখন কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার: ফজলে হোসেন বাদশা

ঢাকা, ২৩ জুন ২০২০ : “স্বাস্থ্যব্যবস্থার এখন কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্যখাতের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে এনে সংবিধানের মৌলিক নীতির ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য খাত পূর্ণগঠন করা দরকার।” ২৩ জুন মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদের বাজেট বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এসব কথা বলেন।

বাদশা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা বলেছিলেন। সেটা যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে বিকশিত করতাম, তৃণমূলে যদি স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা ভিত্তি গড়ে তুলতে পারতাম তাহলে আজ যত বড় করোনা আসুক না কেন, তাকে মোকাবিলা কররার পথ খুঁজে পেতাম। কিন্তু আমরা সেই পথ ধরে এগোইনি। বরং আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি একটা অভিযোগ আছে, এন এন-৯৫ মাস্ক কিনতে গিয়ে দুর্নীতি করা হচ্ছে এই করোনার মধ্যে। এখন যদি এই অভিযোগ আসে তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কোন কিছু হতে পারে না। অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন, বিগত দিনগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে কি রকম অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের কি তাই হয়েছে? আমাদের জনস্বাস্থ্যখাতকে কি যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে?

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তাই অর্থমন্ত্রীকে বলব, আপনি সংবিধানকে পড়ে দেখুন, বঙ্গবন্ধু এই স্বাস্থ্যখাতকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেটা একটু দেখবেন। আমি মনে করি সংবিধান পড়ে বাজেট তৈরি করা দরকার। সংবিধান না জেনে বাজেট তৈরি করতে গেলে বাংলাদেশের গতিমুখ পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আমরা বলি- আমরা কানাডা হব, আমরা অ্যামেরিকা হব। এখন এই সমস্ত কথা আর আসে না। এই সমস্ত বিচ্ছিন্ন কথা এই ভ্রান্তি থেকে আসে।

তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের আক্রমণে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভঙ্গুরতার চরম পর্যায়ে তখনও তিনি স্বাস্থ্যখাতের জন্য ৪১ হাজার কোটি বরাদ্দের কথা বললেও, আসলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য কেবলমাত্র বরাদ্দ করেছেন ২৯ হাজার কোটি টাকা। আর তাও দু’টি বিদেশী সাহায্য পুষ্ট প্রকল্প বাদ দিলে দাঁড়াবে ২৫ হাজার কোটি টাকায়। অথচ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দু’মাসে আমরা কি দেখলাম। হু করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি হুমকি বলে ঘোষণা করায় তিন মাস পর আমাদের দেশে সাত মার্চে করোনা শনাক্ত হল, তখন প্রস্তুতির সেই মূল্যবান সময় আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

বাদশা বলেন, হু যখন বলছে টেষ্ট, টেষ্ট এবং টেষ্ট তখন ওই টেষ্ট সীমাবদ্ধ রেখেছি রোগতত্ব বিভাগের আওতায়। দেশে বিদ্যমান ল্যাবগুলো তো ব্যবহার করলামই না, নতুন ল্যাবও স্থাপন করা হলো না। প্রথম থেকেই কীট সংকট, পিপিই সংকটে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধারা হা হুতাশ করে মরছে, আমরা দেখলাম জেলার কর্তাব্যক্তিরা সেগুলো গায়ে চড়িয়ে ফটোসেশন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পর্যায়ে গুরুত্ব পেল গার্মেন্টস শিল্পসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রণোদনা। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যেন সামাজিক সংক্রমণে রূপ না নিতে পারে সেই লক্ষ্যে কোন ব্যবস্থা দেখলাম না। চীন থেকে ফেরত ছাত্রদের কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হলো। তারপর প্রবাস থেকে বিশেষ করে ইতালী থেকে আমাদের যে কর্মীরা ফিরে এলেন তারা অব্যবস্থাপনার জন্য বিক্ষোভ করায় ‘নবাবজাদা’ বলে গালি দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হলো। পাশের দেশ ভারতে ‘লকডাউন’ ঘোষিত হয়েছে, অন্যান্য দেশেও লকডাউন, কিন্তু আমাদের সরকারের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হলো ‘লকডাউন’ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। ঘোষণা করা হলো সাধারণ ছুটি। ফলে পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হতে থাকলো। এ ধরনের কৌশলের অন্তরালে কি মনভাব?

তিনি আরও বলেন, এখন নতুন কৌশল সমস্ত এলাকা গুলোকে রেড, ইয়লো, গ্রীন জোনে ভাগ করা হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকার জনগণের মধ্যে সংক্রামন রোধে কি কৌশল নেওয়া হবে। আমরা এটি উপলব্ধি করতে পেরেছি যদি লকডাউন ঘোষণা করা হতো তাহলে দ্বায়িত্ব নিতে হতো সংগঠিত সামাজিক শক্তি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সম্মিলিতভাবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন ছিল। তখনই কেবলমাত্র জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্ববদ্ধ করা ও ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো। এই অবস্থাতে এমন দাঁড়াল যে প্রণোদনা প্যাকেজ, ত্রাণ সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো। স্থানীয় সরকারের প্রায় ১০০ জন জনপ্রতিনিধিকে পদচ্যূত করা হলো। এখন বাকি তিন মাসের প্রস্তুতি পর্ব কি দেখি? এখন অর্থনীতির প্রয়োজনেই যখন সাধারণ ছুটি তুলে নেয়া হলো, তথাকথিত লকডাউন শিথিল করা হলো তখন করোনা সংক্রমণ তৃতীয় স্টেজে। শনাক্তকরণে আমরা চীনকে ছাড়িয়েছি, এখন পৃথিবীর দশম দেশ। করোনা রোগী-সাধারণ রোগী হাসপাতালের দরজায় ঘুরছে, মৃত্যুবরণ করছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার নাই, আইসিইউ নাই। অর্থমন্ত্রী কোভিড মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দিয়েছেন। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে এর ব্যয় হবে? ইতিমধ্যে বালিশ-পর্দা কাণ্ডের মত, এন-৯৫ মাস্ক কেলেংকারী হয়েছে। ৭৫০ টাকায় মাস্ক ৫০০০ টাকায় কেনার অভিযোগ উঠেছে। আরটি-পিসিআর ২০০৯ সালেরটা কেনা হচ্ছে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে তখন এই থোক বরাদ্দের ব্যয়ের চরিত্র কি দাঁড়াবে সেটা বোঝা যায়। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় ট্রাক্স ফোর্সের কথা বলেছিলাম। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেই জবাবদিহি করবেন। সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই বরাদ্দ জিডিপির ন্যূনতম ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই করোনা ভাইরাসকালে কেবল নয়, আরও বহুদিনি ধরেই কৃষিই আমাদের রক্ষা করবে। সেই খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি, প্রণোদনা, যান্ত্রীকিকরণে অর্থ বরাদ্দ হলেও এখানেও সেই একই বিপদ। কৃষক তার ধানের মূল্য এবার কিছুটা পেলেও খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু চালকল মালিক-আড়তদাররা। তাই খাদ্য উৎপাদন হলেও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম প্রতি উপজেলায় প্যাডি সাইলো স্থাপনের জন্য সমবায় ভিত্তিতে তার পরিকল্পনা করা। কৃষি যন্ত্রও পুজির মালিককে না দিয়ে সমবায়ে দিতে হবে। তা’হলে গ্রামাঞ্চলে নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া ও আয় বৈষম্য কমবে। কৃষি আমাদের মায়ের মতো। দয়া করে বাণিজ্যিক দৃষ্টি দিয়ে এটা দেখবেন না।

এর আগে বক্তব্যের শুরুতেই ফজলে হোসেন বাদশা স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার প্রসঙ্গ টেনে বাদশা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে মুছে ফেলা সম্ভব না। এ ব্যাপারে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার প্রতিফল সংবিধানে আছে। সেই সংবিধান যদি আমরা দেখি তাহলে বাংলার মানুষ আমাদের ছুঁড়ে ফেলে দিবে না। সেই জায়গাতে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গভীর সমর্থন এবং তার মতামতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।

তিনি বলেন, আমরা এই সংসদে এসেছিলাম একটা জোট গঠনের মধ্য দিয়ে। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৪ দল ছিল নিয়ামক শক্তি। ১৪ দল ছিল বলে আমরা স্বৈরশাসক এবং বিএনপি-জামায়াতকে উৎখাত করতে পেরেছিলাম। ১৪ দল গঠন করা হয়েছিল বলেই আমরা এই সংসদে আসতে পেরেছিলাম। সেখানে জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারই প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক সময়ে চৌদ্দ দল কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিক থেকেছে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। জাতির বিবেক প্রফেসর আনিসুজ্জামান, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীসহ সকল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যক্তিদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

বাজেট প্রসঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই বাজেট অর্থমন্ত্রী অনেক চিন্তাভাবনা করে করেছেন। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থমন্ত্রী একটা প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট করেছেন। আমি মনে করি যে, অর্থনীতি যখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি, পৃথিবীর উন্নয়ন খাত যখন বিপর্যস্ত তখন আমাদের প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট করাটা সঠিক হয়নি। কারণ মনে রাখা দরকার ছিল আমাদের এই দেশে আমরা দারিদ্রসীমা ২১ শতাংশের নিচে সরকার নামিয়ে এনেছিলাম। সেটা বেড়ে এখন কত উপরে উঠবে, আমি জানি না। এমনও হতে পারে দারিদ্রসীমা ৪০ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। কাজেই প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট কতখানি প্রযোজ্য অর্থনৈতিকভাবে সেটা একটু ভেবে দেখবেন।

কৃষিখাতে যে ভুর্তুকি বা প্রণোদনা যা দেয়া হয়েছে তা কৃষকরা যেন পায় এবং উপকৃত হয় সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে গত অর্থবছরের চেয়ে যা ৫ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু এ খাতের নানা অনুসঙ্গ রয়েছে, যেমন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, কারিগরী শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, ক্যাডেট কলেজ, বৃত্তিমুলক শিক্ষা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। ফলে ব্যবস্থাপনাগত কোন দিক নির্দেশনা না থাকলে কাঙ্খিত ফললাভ করা যাবে না। আজ বড় দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও অনলাইনে ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়নি। তাহলে প্রযুক্তি খাতে এতো অর্থ ব্যায়ের অর্জন কি? শিক্ষাব্যবস্থা যদি স্থবির হয়ে পড়ে। বাজেটে কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকারের কথা বলা হলেও সুশিক্ষিত যুব সমাজের ভবিষ্যৎ কি? স্কুল, কলেজ ও শিক্ষার সকল স্তরে একই চিত্র দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নন-এমপিও শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। তাদের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব করছি, প্রস্তাব করছি বিশেষ তহবিলের যার থেকে তাদের ঋণ দেয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়িয়ে তাদের ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোন দেয়া যেত। উল্টো সারচার্জ বসিয়ে মোবাইল চার্জ, ডাটা, ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। সৃষ্টি করা হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইড। এ দেশটা বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের জন্য করেছিলেন। বড়লোকদের জন্য নয়। অর্থমন্ত্রী যদি সেটা খেয়াল রাখতেন তাহলে খুশি হতাম।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৫ কোটি লোকের বা ১২৫ কোটি খানার রেশনের বেবস্থা চালু করার প্রস্তাব করে বাদশা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এবার ১২ লাখ দুস্থ মানুষ নতুন করে সুবিধা পাবে। সবমিলিয়ে এক কোটির বেশি উপকারভোগী এ সুবিধা পাবে। এ ছাড়া ১০০টি উপজেলায় এবার শতভাগ বয়স্ক-দনিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে। সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মূল অগ্রাধিকারগুলো হলো-সামাজিক সুরক্ষা, খাদ্য সুরক্ষা, নগদ ক্যাশ ট্রান্সফার, দরিদ্র, নারী ও অনগ্রসর শ্রেনির ক্ষমতায়ন, শিক্ষা প্রমোশন, পেনশন, নির্যাতিত নারীর পুনর্বাসন, ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ইত্যাদি। সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর এ অর্থ ২২টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৩৮টি কর্মসূচির মাধ্যমে দেয়া হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সবচেয়ে বড় খাত হলো সরকারী কর্মচারীদের পেনশন ভাতা। অন্যান্যের মধ্যে আছে ৯০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী। ১২ হাজার অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ, যা নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির মধ্যে থাকা সমিচীন নয়। বাদবাকি ক্যাটাগরিতে সহায়তার পরিমাণ গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। যেমন- ৫৫ লাখ বয়স্ক, দুস্থ ও বিধবাগণ মাসিক ৫০০ টাকা পান, ১০ লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী মাসে ৭৫০ টাকা পায়, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হারে বৃত্তি দেয়া হয়। ভিজিএফ কার্ডধারীরা মাসে ৩১ কেজি গম পায়, কাবিখা, টিআর ইত্যাদি কর্মসূচির অধীনে সরাসরি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। তবে আরো কয়েকটি খাত আছে যেগুলোতে মাসিক সহায়তার পরিমাণ বেশি, কিন্তু উপকারভোগীর সংখ্যা খুবই নগন্য। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দরিদ্রদের জন্য ভাতা প্রদানেরও আহ্বান জানান টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

তিনি বলেন, প্রতি বাজেট বক্তৃতায় আয় বৈষম্যের চরম অবস্থার কথা বলি। কিস্তু এই বৈষম্যের কথা কখনও স্বীকার করা হয় না। এর পরিনাম কি হতে পারে সবার জানা। এর পরও বাজেটে অপ্রত্যক্ষ করের উপর জোর দিলেও, করপোরেট কর কমানো হয়েছে। অর্থ পাচারকারিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেমন- টাকা পাচার করলে ৫০ ভাগ করদণ্ড দিলে মাফ। কালো টাকা সাদা করার পথ খোলা। ধনীদের জন্য আর কত ছাড় দেয়া হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বাদশা বলেন, তারপরও অর্থমন্ত্রীকে বলব, জনগণের উপর ভরসা রাখুন। লুটেরা ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ নয়, রাজনীতির উপর ভরসা রাখুন। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সংবিধানের উন্নয়ন দর্শনকে অনুসরণ করুন। করোনা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবেই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।