পলাশীর মতো বক্সারের যুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার জয়

প্রকাশিত: ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

পলাশীর মতো বক্সারের যুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার জয়

Manual7 Ad Code

|| বিশ্বেন্দু নন্দ || কলকাতা (ভারত), ২৩ জুন ২০২০ : বক্সার যুদ্ধ। স্বাধীনচেতা মীরকাশিম শুল্ক রদ করেন। বিশ্বে এই প্রথম কোনও সরকারশুল্ক রদ করল।

Manual5 Ad Code

১৭৬০ সালে ক্লাইভ বিলেত চলে যান। তার পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক হারিয়ে মীরজাফর অসহায় হয়ে পড়েন। তা ছাড়া খড়কুটো ধরে বাঁচার লক্ষ্যে ওলন্দাজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার পর তিনি ইংরেজদের বিশ্বাস ও সমর্থন হারিয়েছিলেন। ইংরেজদের বারবার টাকার দাবি মেটাতে পারছিলেন না। ইংরেজ কর্তৃপক্ষ হলওয়েল ও ভেনসিটার্ট মীরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মীর কাসিমকে মসনদে বসানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭৬০ সালের অক্টোবরে মীর কাসিমকে মসনদে বসায়। নবাবীর বিনিময়ে মীর কাসিম ইংরেজ প্রধানদের বহু অর্থ উপঢৌকন দেন। তিনটে গুরুত্বপূর্ণ জেলা বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম কোম্পানিকে দান করে দিতে বাধ্য হন।
মীর কাসিম স্বাধীনচেতা ছিলেন। নবাবের শাসনক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছিলেন। নবাব কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী, জমিদার ও ব্যবসায়ীর অবাধ্যতায় বিরক্ত হয়ে ওঠেন। এ জন্য আজিমাবাদের নায়েম নাযিম রামনারায়ণ, গুপ্ত পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা রাজা মুরলী ধর এবং রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও অন্যদের গ্রেফতার করেন। ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে রামনারায়ণ, রাজবল্লভ, উমেদরায়, জগৎশেঠ এবং আরো কয়েকজনের প্রাণদণ্ড হয়।
ইংরেজদের প্রভাব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মীর কাসিম তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গের এ স্থানান্তর করেন। বিলম্বিত বোধোদয়ের কারণে তিনি ইংরেজদের বিনাশুল্কে বে-আইনি ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন। কোম্পানির কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করায় তিনি সব বণিকের পণ্যদ্রব্যের ওপর হতে শুল্ক রহিত করে দেন। এই ব্যবস্থার ফলে বাণিজ্যে ইংরেজদের একচেটিয়া ও বিশেষ সুবিধা নষ্ট হয়। কারণ এর ফলে তাদের অন্য বণিকদের সাথে সমপর্যায়ে ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা করতে হতো। এ সব কারণে মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। ১৭৬৩ সালে ইংরেজদের সাথে তার সংঘর্ষ বেধে যায়। কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুতি, উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাসিম ক্ষমতাহারা অবস্থায় অযোধ্যায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।
১৭৬৩ কোম্পানির কর্মকর্তারা দ্বিতীয়বার ক্লাইভের গর্দভ খ্যাত মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসায়।
মীর কাসিম অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর তাদের সম্মিলিত সৈন্যবাহিনীর সাথে বক্সার নামক স্থানে ইংরেজ সৈন্যদের ঘোরতর যুদ্ধ হয়। দুর্ভাগ্য, বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজেরা জয়লাভ করে। মীর কাসিম কয়েক বছর অজ্ঞাত অবস্থায় ঘুরে বেড়ান। ১৭৭৭ সালে দিল্লির কাছে এক জায়গায় তার মৃত্যু হয়। বক্সার যুদ্ধের পর ইংরেজেরা অযোধ্যাও দখল করে নেয়। সুজাউদ্দীন রোহিলাখণ্ডএ আশ্রয় নেন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হন।
নবাবের কয়েকজন হিন্দু কর্মচারী ও জমিদার বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তারা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতে থাকত। জমিদারেরা নিয়মিত খাজনা দিত না। বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাবের মন্ত্রী মহারাজ বেণী বাহাদুর পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর-জগৎশেঠদের মতোই বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের সাহায্য করে। সম্রাটের দিওয়ান সেতাব রায়ও কূটকৌশল অবলম্বন করে ইংরেজদের সাফল্যের পথ সহজ করে দিয়েছিল। মীর কাসিমের গোলন্দাজ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা মর্কা ও আরাটোন দুইজনই আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান ছিল। তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয়নি। সামরিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় নবাবের সৈন্যরা ইংরেজ সৈন্যদের সমান ছিল না। সর্বোপরি বিশ্বাসঘাতকতা চারদিক থেকে নবাবকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরেছিল। তাই পলাশীর মতো বক্সারের যুদ্ধেও বিশ্বাসঘাতকতার জয় হয়।

Manual3 Ad Code

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code