সিলেট ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০
|| ফজলুল বারী || সিডনি (অস্ট্রেলিয়া), ২৯ জুন ২০২০ : এই করোনা মহামারী মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী মূল অস্ত্রটির নাম লকডাউন। ব্যক্তিগত সুরক্ষায় ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজারে হাত দুটি নিরাপদ করা, মাস্ক পরা আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
আর কোথাও সামাজিক সংক্রমন ঘটে গেলে তা নিয়ন্ত্রনে লকডাউনের কোন বিকল্প নেই। সর্বাত্মক লকডাউনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ভাইরাস সমূহের অভিজ্ঞতায় করোনা মোকাবেলাও প্রথম সাফল্য পায় ভাইরাসটির উৎস ভূমি চীন।
লকডাউনের মাধ্যমে উহানকে তখন সব রকম ভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। এমনকি তখন বাইরের বিভিন্ন দেশের যারা বিমান নিয়ে নিজেদের নাগরিকদের আনতে যেতে চাইছিলেন তাদেরকেও সহজে সাড়া দেয়া হয়নি।
আর নিজের দেশের নাগরিক বা বাসিন্দাদের ঘরে আটকে রেখেও অল্প সময়ে ভাইরাসটির নিয়ন্ত্রনে দেশটি সাফল্য পেয়েছে। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে তাকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো হয়েছে।
মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে তারা সংক্রমন এলাকার প্রতিটি মানুষের তাপমাত্রা, গতিবিধি মনিটর-নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। চীন এসব সফলভাবে করতে পারার আরেক কারন দেশটি কোন গণতান্ত্রিক দেশ নয়। মহামারী নিয়ন্ত্রনে স্বৈরতন্ত্রও দরকার হয়।
চীনের কায়দায় লকডাউন কড়াকড়ি করে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামও। এ দেশটিও একদলীয় ক্ষমতার দেশ। আবার দক্ষিন এশিয়ার দেশ নেপাল, শ্রীলংকা, এমনকি ভূটানের সাফল্যের কারনও লকডাউন।
এরমধ্যে শ্রীলংকার চিকিৎসা অবকাঠামো উল্লেখিত দেশগুলোর চেয়ে বেশি সংগঠিত। আর জীবন ও জীবিকার দ্বন্দ্বের কথা বলে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ লকডাউন নিয়ে নিজের মতো করে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে।
ভারত শুরুতে কড়াকড়ি লকডাউনের চেষ্টা করলেও মহামারী নিয়ন্ত্রনের আগে সেখান থেকে সরে আসে। এরপর থেকে ভারতের সংক্রমন-মৃত্যুও বেড়ে গেছে বহুগুন। আবার নিজের মতো করে লকডাউন অনেক কিছুতে বহাল রাখে পশ্চিমবঙ্গ।
এরজন্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতীয় বাঙালি রাজ্যটায় সংক্রমন-মৃত্যু তুলনামূলক কম। পাকিস্তান দেশটি শুরু থেকে লকডাউনের পক্ষে ছিলোনা। এরপর সংক্রমন-মৃত্যুতে ভারতের পরেই এর চিরশত্রু দেশটির অবস্থান।
মহামারীকে শুরু থেকে আমল-পাত্তা না দেবার চরম মাশুল গুনছে আমেরিকা-ব্রাজিল। ফুটবলে ব্রাজিল ভক্ত দেশ বাংলাদেশও বড় বিপদের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে রোগটি আসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে।
শুরুতে এটি মোকাবেলার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের এক ধরনের ঢিলেমি-সিদ্ধান্তহীনতাও ছিল। কারন বাংলাদেশ তখনও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর উদযাপন প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। স্বপ্নের মতো ছিল অনেক কর্মসূচি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির আসন্ন ভয়াবহতা আঁচ করতে পেয়ে বাংলাদেশ তখন জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের মূল কর্মসূচি স্থগিত ঘোষনা করে।
আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় ভাইরাস মোকাবেলায় কাশির শিষ্টাচার নিজে প্রয়োগ করে দেখান দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভাইরাস মোকাবেলা প্রস্তুতির সেটি হয়ে ওঠে প্রচারনার রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান ব্যক্তিগত চিকিৎ্সক এ বি এম আব্দুল্লাহ, সরকারের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন সহ অনেকে টেলিভিশনে ধারবাহিক বলছিলেন এই করোনার সময় কি করা যাবে কি করা যাবেনা।
কিন্তু প্রথম থেকেই নানাকিছু নিয়ে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়। এরজন্য এখন পর্যন্ত কিছু লোক বলছে এই রোগ রোদে থাকলে হয়না, শীতাতপ কক্ষে থাকলে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভাইরাস, এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে একবার এক কথা বলেছে।
আসলে নতুন এই অচেনা ভাইরাস নানা সময় পাল্টেছে এর আচরন চরিত্র। প্রথমে বলা হয় বাংলাদেশের ভাইরাসটি ইতালি থেকে এসেছে। এরজন্যে এটি আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে টার্গেট করছে সব বয়সী মানুষজনকে।
পরে অবশ্য বাংলাদেশের জিন পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাসটির নানান চরিত্র-আচরনের প্রমান মিলেছে। শুরু থেকে বাংলাদেশের দূর্বলতার জায়গাটি ছিল টেস্ট সক্ষমতা। অপ্রতুল টেস্ট।
সে কারনে বাংলাদেশ এখনও করোনা পিক সময়টি বলতে পারছেনা। কারন টেস্ট যখন শুরু করা হয় তখন প্রকৃত রোগীর সংখ্যাটি কেউ জানতোনা। শুরু থেকে বাংলাদেশও পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানান প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে।
কিন্তু খুব স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমান ছিল কম। কারন বাংলাদেশ নিজের সামর্থ্য জানে। ছোট দেশ। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষজন। এসব প্রনোদনা ঠিকমতো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নও চলে আসছে।
সরকার কখনও এর জবাব দিয়েছে কখনও দেয়নি। একটি রাজনৈতিক সরকার শুরু থেকে ত্রান কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব আমলাদের দেয়। এতে ঢালাও একটি ধারনা পাকাপোক্ত হয় যে রাজনীতিকদের অনেকেই চোর-দুর্নীতিবাজ! আমলা ভালো।
কিন্তু সব আমলা কত ভালো, এত বড় যজ্ঞে দল আড়াল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও কোথাও কোথাও উঠতে শুরু করেছে। আবার আরেক সত্য মহামারী মোকাবেলার নেতৃত্ব রাজনীতিকদের দিলে তাদের আক্রান্ত-মৃত্যুহার অনেক বেশি হতো।
অনেক রাজনীতিককে হয়তো এখন হারিকেন দিয়ে খুঁজতে হতো। শুরুর দিকে ঢাকার টোলারবাগ, মাদারিপুরের শিবচরে লকডাউন করে ভাইরাস সংক্রমনে সাফল্য পাওয়া যায়।
কিন্তু সাধারন ছুটি যখন যেটা ঘোষনা করা হয়েছে তাতে কোন সাফল্য আসেনি। বিদেশে সাধারন ছুটির সঙ্গে বাইরের নানা নিষেধাজ্ঞায় লোকজন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। অনেকে ঘরে বসে কাজ করেছে অনলাইনে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে বিশেষ সাফল্য পাওয়া গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ছুটিতে লোকজনকে ঘরে রাখা যায়নি। এবার জানা গেল বাংলাদেশের ইন্টারনেটের গতি সবক্ষেত্রে ঘরে বসে কাজের উপযোগী নয়।
সরকারি বরাদ্দে পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসে যেতে পারেনি। স্কুল এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসের সুযোগ নিতে পেরেছে সীমিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী। কোন কোন ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক সমস্যায় অনেককে ক্লাস ফলো করতে খোলা মাঠে গিয়েও বসতে হয়েছে। লকডাউন একটা এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক চলাচল সীমিত-ব্যাহত করে। এরজন্য এরসঙ্গে প্রনোদনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ন।
বাংলাদেশে প্রথম প্রনোদনা গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশে ঘোষনা করা হয়েছিল। কারন বাংলাদেশে এখন গার্মেন্টস সেক্টরকেই কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হিসাবে দেখা হয়।
সিংহভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক নারী। প্রনোদনা গার্মেন্টস শ্রমিকদের তিন মাসের বেতনের নিশ্চয়তার কথা ভাবা হয়েছিল। বলা হয়েছিল টাকাটি গার্মেন্টস মালিকদের স্বল্পহার সুদ হিসাবে দেয়া হবে। কিন্তু টাকাটি সরাসরি দেয়া হবে শ্রমিকদের একাউন্টে।
সরকার মনে করেছিল এতে করে গার্মেন্টস খাত অন্তত নিরাপদ থাকবে। অন্তত এই সময়ে কোন শ্রমিক বিক্ষোভ হবেনা। কিন্তু কার্যাদেশ অন্যদেশে চলে যাবে এই আশংকার কথা বলে সবার আগে খুলে দেয়া হয় গার্মেন্টস কারখানা।
এর আগে সাধারন ছুটি ঘোষনার পর বেশিরভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। আবার কারখানা খোলার খবরে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় শ্রমিকদের হেঁটে সহ নানা কায়দায় ঢাকা রওয়ানা হন।
এরপর আবার তারা একই কায়দায় রোজার ঈদে বাড়ি যাওয়া আসাও করেন। এই মহামারীতে যেখানে সবকিছুতে নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ন, সেখানে জনবহুল বাংলাদেশে তা মেনে চলা কঠিন।
ফেরী বোঝাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছবি ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ করোনার ভীতিকর দেশ হিসাবে উঠে আসে বিদেশি মিডিয়ায়। গার্মেন্টস সহ নানাকিছু আগেভাগে খুলে দেবার মাশুল হিসাবে সারাদেশে এখন রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।
চিরকালের অভ্যাস নাড়ির টানে ঈদে বাড়ি যাওয়া আসার বিষয়টিও ঘৃতাহুতি ঘটিয়েছে। এই বিপুল জনস্রোতকে নিয়ন্ত্রনের ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সংক্রমিত হয়ে পড়েন।
সংক্রমিত হন মিডিয়া কর্মীরা। ভেঙ্গে পড়েছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। কারন একসঙ্গে অত মানুষের হাসপাতাল অবকাঠামো বাংলাদেশের নেই। আন্তর্জাতিক সীমান্ত বন্ধ থাকায় অভ্যস্ত সামর্থ্যবানরা চিকিৎসার জন্যে বাইরে যেতে পারেননি।
এবং অতঃপর জানা গেল ঝুঁকি নিয়ে গার্মেন্টস সহ নানাকিছু খুলে দিলেও প্রত্যাশার সাফল্য আসেনি। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতিতে মার্কিন পোশাক শিল্পের বাজারের পুরো সুযোগটাই নিয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ নয়।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গার্মেন্টস শ্রমিকও এরমাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত শ্রমিকদের করোনা নেগেটিভ টেস্ট সার্টিফিকেট সংগ্রহও আরেক দুরুহ সংগ্রামের একটি কাজ। সেই সার্টিফিকেটের অভাবেও অনেকে কাজে ফিরতে পারছেননা।
আবার এ অবস্থায় জুলাই থেকে শ্রমিকদের ছাটাইর আগাম ঘোষনা দিয়ে রেখেছে বিজেএমইএ। অনেকে মনে করছেন এটি সরকারের উদ্দেশে বিজেএমইএ’র আগাম আরেকটি চাপ! কারন তাদের প্রনোদনা জুলাইতে শেষ যাবে। তারা আরও চায়।
জীবন আর জীবিকার দ্বন্দ্বে অনেক কিছু খুলে দেয়া হলেও দেশে জীবিকায়ও গতি আসেনি। উল্টো সংক্রমন-মৃত্যু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মানুষের হাতের জমা টাকা ফুরিয়ে এসেছে। জীবিকা হারিয়ে অনেকে গ্রামে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন করোনা ভাইরাস। শহরের মানুষ আগে গ্রামে গেলে গ্রামবাসী খুশি হতেন। এখন তারা তাদের ভয় পান। যারা যাচ্ছেন তাদের হাতে আবার টাকাকড়ি নেই। যাদের টাকাকড়ি থাকেনা তাদের কেউ ভালোবাসেনা।
এক গরিব আরেক গরিবকে পছন্দ করেনা। এরজন্য গরিব সৎ মানুষেরা বাংলাদেশের নির্বাচনেও প্রার্থী হতে পারেনা। তারা জেতেও না। এই মহামারী দেশের ধনী-গরিবের দ্বন্দ্বকে আরও সামনে নিয়ে এসেছে।
এই দূর্যোগে দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বেসরকরি চিকিৎসা খাত। আর বিশ্বাসঘাতকতা করেছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ। পৃথিবীতে গবেষনার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্ট চালু হয়েছিল।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ চলে জনগনের টাকায় সরকারি বরাদ্দে। মানুষের এখানে পর্যাপ্ত টেস্টের ব্যবস্থা নেই। অথচ পাবলিক বিশ্বব্যালয়গুলোয় টেস্টের অবকাঠামো থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি।
ছুটির সুযোগে তাদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাগল পালনের ব্যবস্থা করেছে! কিন্তু টেস্ট করতে গিয়ে যদি নিজেদের সংক্রমন ঝুঁকির সৃষ্টি হয় সে আশংকায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ রেখেছে।
অথচ টেস্টের সঙ্গে জড়িতদের সংক্রমন যাতে না হয় এই পড়াশুনা-গবেষনার স্থানটিওতো বিশ্ববিদ্যালয়। জনগনের টাকায় পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ জনগনের বিপদে পাশে না দাঁড়ানোর বিচার একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় হবে।
রাষ্ট্রের দূর্বলতায় এ জবাবদিহির বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করা গেলোনা। যেমন রাষ্ট্র এখন বেসরকারি চিকিৎসাখাতকেও মানুষের পক্ষে ফ্রি চিকিৎসায় বাধ্য করতে পারেনি। সর্বশেষ করোনা টেস্টের জন্যে টাকার বিষয় সংযু্ক্ত করা হয়েছে।
এতে করে এই টেস্টও পর্বটিও দূর্নীতিগ্রস্ত হবে। দু’শ, পাঁচশ টাকায় টেস্ট হবেনা। লাইনে না দাঁড়িয়ে লোকজন সুযোগ পেতে বেশি টাকা অফার করবে। মাঝখানে অনেকে আর টেস্ট করাতেই যাবেনা।
পূর্ব রাজাবাজার লকডাউনের সর্বশেষ একটি সফল মডেল। মেয়র-স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার, পুলিশের পাশাপাশি একদল স্বেচ্ছাসেবক এই লকডাউনে চমৎকার ভূমিকা পালন করেছেন। সংক্রমন কমে এসেছে।
পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন সাফল্য প্রমান করেছে সরকারকে আন্তরিক দেখলে জনগনও সাড়া দেয়। কিন্তু এরপরও সংক্রমন শূন্য করতে এই লকডাউন অব্যাহত রাখার কোন গ্যারান্টি নেই। কারন এরসঙ্গে একটি অর্থনীতি জড়িত।
গরিব মানুষকে ফ্রি খাওয়াতে হয়। এখন এই ফ্রি খাওয়ানো এড়াতে লকডাউন তুলে নিলে এতদিনের অর্জনও পন্ড হবে। যখন দেশজুড়ে প্রতিদিন এত সংক্রমন এত মৃত্যু সেখানে অন্য সব হটস্পটগুলোর লকডাউন এখনই জরুরি ছিল।
কিন্তু বারবার সামনে চলে আসছে কে বা কারা যেন এ নিয়ে পিছন থেকে দেরি করাচ্ছে! এই ম্যাপ তৈরি হয় নাই, এই সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি, এসব এখনও কী করার-চলার সময় এখন?
তাহলে যুদ্ধের সময় একটা দেশ কী করে জরুরি সিদ্ধান্ত নেবে? এটিতো এক ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি। বাইরে শত্রু দাঁড়িয়ে। আর বাংলাদেশ যেন ঘরের ভিতর সূঁচ খুঁজছে আর ভাবছে কোন সূঁচ দিয়ে শত্রু মারবে!
স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্টভাবে সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে নিতে পারছেনা। এর সামনে হাঁটাচলা করা সবাইকে স্মার্টও মনে হয়না। লকডাউন সামাজিক মহামারীর সংক্রমনকে সীমিত-নিয়ন্ত্রন করে।
লকডাউন ছাড়াও কিন্তু সংক্রমন এক পর্যায়ে কমবে। কিন্তু তা অনেক মৃত্যুর পর। লকডাউনে যা তিন মাসে সম্ভব ছিল লকডাউন ছাড়া তা ছয়মাস বা আরও লম্বা সময়ে গড়াবে।
সীমিত সামর্থ্যের বাংলাদেশের এত প্রনোদনা, এত কষ্ট, এত মানুষের ত্যাগ-তিতীক্ষা-মৃত্যু কাজে লাগছে না পন্ড হচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করার দরকার আছে। কারন মহামারীকে আমলে রেখে এর মোকাবেলা করতে হয়। মহামারীর সঙ্গে কোন চালাকি চলেনা।
বিএনপি সহ রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্যে সত্যিকারের কিছু করতে চাইলে ফাউলটক বাদ দিয়ে ত্রান মেয়র-কমিশনার বা জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে দিতে হবে। বিলির সময় তারা সঙ্গে থাকতে পারেন।
পূর্ব রাজাবাজারে করোনা টেস্ট করাটা তুলনামূলক কম হয়রানির। অন্য এলাকার লকডাউন সফল করতে রাজাবাজারের অভিজ্ঞতা সমূহ মাথায় রাখতে হবে। মানুষের হাতের টাকা ফুরিয়ে এসেছে। তাই কমে এসেছে ব্যক্তিগত ত্রান।
এখন বিভিন্ন রকমের বিল যদি মওকুফ করা যেত সেটা হতো এই সময়ের সবচেয়ে গণমুখী সিদ্ধান্ত। জুলাই মাসে সংক্রমন-মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। এর ব্যাপারে কুরবানির ঈদ একটি ফ্যাক্টর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রস্তুত কী বাংলাদেশ?
ছবিঃ পূর্ব রাজাবাজারকে রেড জোন ঘোষণার পর বড় ভাইকে (ছবিতে নেই) টিকাটুলীতে স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লকডাউনের এই সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ গেটের বাইরে থেকে দিয়ে যায় সে। মা–বাবার সঙ্গে ভাইয়ের দেওয়া খাদ্যসামগ্রী নিতে এসে পছন্দের কলা নিজের হাতে নিতে বায়না ধরেছে শিশুটি।
গতকাল এলাকার গ্রিন পয়েন্ট সোসাইটি গেটের সামনে। -ছবি: তানভীর আহাম্মেদ/প্রথম আলো
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D