সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০
ঢাকা, ২২ জুলাই ২০২০: যখন মারাত্মকভাবে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে আমাদের দেশে আবর্তিত হয় তখনই সরকারকে আমরা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলেছিলাম, আমরা ট্রেড ইউনিয়ন চাই যতবেশি সংখ্যক কলকারখানা, যানবাহন যাতে চালু রাখা যায়। মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চিত করার কথা বলেছিলাম। কারণ মানুষের কর্মসংস্থান যদি বন্ধ হয়ে যায়, তারা যদি বেকার হয়ে যায় তাহলে এই দুর্যোগের সময় তাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। সে কারণে আমরা বলেছিলাম, আমরা কলকারখানায় কাজ করতে চাই, উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাই, দেশের অর্থনীতিকে দেশের স্বার্থে চালু রাখতে চাই। তার জন্য আমরা সামান্য কিছু কথা করেছিলাম। আমরা কল-কারখানায় চাকরি করে যদি আক্রান্ত হই তাহলে সাথে সাথে যেন চিকিৎসা পাই, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর সে ব্যবস্থা যদি না রাখা হয়, শ্রমিকরা আক্রান্ত হতে থাকে তাহলে উৎপাদন অব্যাহত রাখা যাবে না, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা এটা চাই না। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে ১ কেটি ২১ লক্ষ শিল্প শ্রমিক। এখনো ১ কোটি ২১ লক্ষ শ্রমিকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৩৫ লক্ষ শ্রমিক কাজে ফিরে আসতে পারে নাই। ইতিমদ্যে গার্মেন্ট, ট্যানারী, নির্মাণ খাত এবং তার সাথে সড়ক পরিবহন থেকে আরম্ভ করে ব্যাপক শ্রমিক কর্মসংস্থানে ফিরে আসতে পারে নাই। বহু লোক ইতিমধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
এরকম একটা প্রেক্ষাপটে সরকার একটা অবিবেচনাপ্রসুত, একটা অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ২৫টি পাটকল এক সাথে বন্ধ করে দিলেন। খুব আফসোসের সাথে বলতে হয়, দুঃখের সাথে বলতে হয়, আদমজী জুট মিল বন্ধ করে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী গর্ব করে বলেছিলেন, ‘আমাদের বিএনপি-জামাত সরকারের বড় সাফল্য, আমরা আদমজী জুট মিল বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।’ আমি জানিনা আমাদের বর্তমান পাটমন্ত্রী নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। তিনি একথা বলবেন কিনা, বিএনপি বন্ধ করেছিল একটি পাটকল, কিন্ত আওয়ামী লীগের জোট সরকার আমরা বন্ধ করেছি একসাথে ২৫টি পাটকল। এটাই আমাদের বড় সাফল্য। আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু পরিষ্কার একটা বইলা রাখি, এই পাটশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত খাত হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের কোন মহল এই রাষ্ট্রায়ত্ত খাত বাতিল করতে চায়, বিলুপ্তি করতে চায়- তাহলে কিন্তু অনেক শহীদের রক্ত যাবে, রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত খাত বিলুপ করা যাবে না। প্রতিরোধ গড়ে তুলবোই, প্রতিরোধ গড়ে উঠবেই। এ সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলতে চাই-
এই সময়ে কোন কলকারখানায় শ্রমিককে ছাটাই করা চলবে না। শ্রমিকদের আইনসঙ্গত যে পাওনা তা নিয়ে তালবাহান করা চলবে না। যার যার নিয়ম মাফিক সর্বত্র শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। আর এগুলো করতে যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে শ্রমিকদের মিছিল যদি একবার শুরু হয় তাহলে কিন্তু এ মিছিল আর থামবে না। এ সরকারের পক্ষে এ মিছিল সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। কোটি শ্রমিককে দাবায়ে রাখা সম্ভব হবে না। এরকম একটা পরিস্থিতি আমাদের বর্তমান অবস্থায় কেইরেই কাম্য হতে পারে না। তাহলে সরকারের এ বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন। আমাদের দাবি না, আমরা আইনের কথা বলছি, আমরা যুক্তিসঙ্গত কথা বলছি। সেকথাগুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিবেন আমরা সে আশা করি। আমরা এদেশের শ্রমজীবী মানুষকে আহ্নবান জানাই- সংগ্রামী বন্ধুগণ, এখন আমাদের পাশে আর কেউ নাই। বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তারা দাবি করতেন তারা শ্রমিকবান্ধব সরকার। কিন্তু সে বিশ্বাসযোগ্যতা এখন আর রাখা যায় না। এখন আর কেউ বলতে পারবেন না বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার শ্রমবান্ধব সরকার। তাহলে আমাদের থাকলো কি? এখন একমাত্র শক্তি, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি. আমাদের বিরুদ্ধে যেখানে আঘাত আসবে, চাকরির ওপর আঘাত আসবে, আমাদেরকে আইনসঙ্গত পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেবে সেখানেই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। বিনা সংগ্রামে এক চুলও কোথাও আমরা পিছাব না। এটাই এখনকার জন্য বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ১ কোটি ২০ লক্ষ শ্রমিকের প্রতি আবেদন। ‘যেখানে আঘাত সেখানেই প্রত্যাঘাত’- এই নীতিতে এখন সংগ্রাম শুরু হবে।
#
— কমরেড শহীদুল্লাহ চৌধুরী,
সভাপতি – বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র,
ও
উপদেষ্টা- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D