নিকোলাই অস্ত্রভস্কি’র লেখা ‘ইস্পাত’ উপন্যাস

প্রকাশিত: ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

নিকোলাই অস্ত্রভস্কি’র লেখা ‘ইস্পাত’ উপন্যাস

জলি পাল || শ্রীমঙ্গল, ২২ জুলাই ২০২০ : বিশ্বজিৎ লাল দত্তের ( Sunil Shoisob ) এর আমন্ত্রণে পাঠ অনুভূতি প্রকাশের চতুর্থ দিনে আমি নিকোলাই অস্ত্রভস্কি’র লেখা ‘ইস্পাত’ উপন্যাসটির পাঠ অনুভতি উপস্থাপন করছি।

১৯১৭ সালের নভেম্বরে পৃথিবীতে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল। রুশ বিপ্লব – পৃথিবীর প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এইরকম যুগান্তকারী বিষয় নিয়ে অনান্য লেখক শিল্পীদের মতো নিকোলাই অস্ত্রভোস্কিও আলোড়িত হয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন ইস্পাত।
মঙ্গল গ্রহে যাবার সময় সঙ্গে নিতে চাও কী কী? – এবিষয়ে সোভিয়েত তরুণদের মতামত জরিপ করা হয়েছিল। ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। সব থেকে বেশি সংখ্যক তরুণ তরুণী সঙ্গে নিতে চেয়েছিল –
‘ ইস্পাত ‘ । লেখকের অনুভূতির প্রকাশ পাঠকের নিজস্ব অনুভূতিতে রূপান্তরিত করতে ইস্পাত একটি সফল সাহিত্য কর্ম।
উপন্যাসটির রচনা কালে লেখক শারীরিক ভাবে পঙ্গু এবং অন্ধ ছিলেন। এই দুর্ভেদ্য প্রতিকূলতা জয় করে ইস্পাত রচনা করেছিলেন। আর এর মনোবল পেয়েছিলেন নিজের সংগ্রামী চেতনার কাছ থেকে। ইস্পাত মূলত আত্মজৈবনিক উপন্যাস। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র পাভেল কর্চাগিন – সয়ং লেখক নিকোলাই অস্ত্রভোস্কি। এই উপন্যাস পড়ে জানতে পারলাম যে, বিপ্লব মানে অলৌকিক কিংবা তাৎক্ষণিক মুক্তি বা তাৎক্ষণিক সমৃদ্ধি নয়।
বিপ্লব একটি দীর্ঘ এবং কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। বিপ্লবকে রক্ষা করার জন্য নিরন্তর লড়াই করতে হয়, ভেতরের ও বাইরের শত্রুর সঙ্গে। জীবনযাপন করতে হয় অবর্ণনীয় কৃচ্ছ্রতার মধ্য দিয়ে। এসব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে, মানুষ বিপ্লব করতে চায় মানব মুক্তির জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশের অনুকূল একটি পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য। রাশিয়া – ইউক্রেনের কৃষক – শ্রমিক – ভূমিদাস – নিরন্ন মানুষেরা বিপ্লব চেয়েছিলো। অন্য দিকে বিরোধিতা করে ছিল অভিজাত ও সুবিধা ভোগী শ্রেণী। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, পাভেল শ্রমিক শ্রেণী থেকে উঠে আসা একজন তরুণ। তার মা বড়লোক দের বাড়ী রাঁধুনির কাজ করতো। সকাল থেকে রাত রাঁধুনিগিরি করে, চার রুবল মাইনে আর এক মুঠো খাবার পেতো তার ভাই কে নয় বছর বয়সে মিস্ত্রি খানায় শুধু খোরাকির বিনিময়ে কাজে দিয়েছিল। আর তাকে বারো বছর বয়সে রেস্তোরায় ডিশ প্লেট ধোয়ার কাজে নিযুক্ত হতে হয়েছে। সেখানে সে দেখেছে নিম্ন আয়ের মেয়েদের ওপর মালিকদের যৌন নিপীড়ন। রেস্তোরায় অনেক ঘাত প্রতিঘাত এর পর তার কর্মস্থল হলো বিদ্যুৎ স্টেশন।
ইতোমধ্যে জারের পতন হয়েছে। সোভিয়েতের শহর গুলো একবার শ্বেত বাহিনীর, একবার পলিশ দের আবার যাচ্ছে লাল ফৌজ বা বলশেভিক দের দখলে। এরকম টালমাটাল পরিস্থিতিতে, লালফৌজ এর সাথে যোগ দেয় পাভেল কর্চাগীন। লাল ফৌজের সঙ্গে শহর ছেড়ে চলেযায় , বিপ্লবকে রক্ষা ও সংহত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে। পেছনে রেখে যায় দারিদ্র্য- জর্জরিত বৃদ্ধা মা, প্রেমিকা, ধনী কন্যা- তনিয়া আর ভাই আর্তিয়ম কে। এভাবেই একজন কমিউনিস্ট জন্ম নেয়,যাকে একের পর এক অগ্নি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সব পিছুটান উপেক্ষা করে,কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে যায়, অস্ত্র হাতে। শত্রু হনন করে, নিজে আহত হয়,আবার যুবসমাজ কেও সংগঠিত করে। কর্মী পাভেল তিনমাস ধরে তুষারের মধ্যে রেললাইন পাতার কাজ করে। কনকনে ঠান্ডা,শীত ঠেকানোর পোশাক নেই, বুট জুতো নেই, খাদ্য অপর্যাপ্ত,মেঝেতে খড় বিছিয়ে শুতে হয়।
কেমন করে মানুষ মহৎ আদর্শের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে,তার শিক্ষা পাওয়া যাবে, এই বইটি থেকে।
কর্চাগিনের জীবন কাহিনী থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহৎ লক্ষ্য থাকলে, একমাত্র তবেই মানুষের জীবন মহৎ হয়ে উঠতে পারে। এই সাধারণ মেহনতি তরুণটিকে যথার্থ মহৎ করে তুলেছে ওই মহৎ লক্ষ্যই।
আত্ম সর্বস্ব্য মানুষ, শেষ হয়ে যায়, সবার আগে। কিন্তু সমাজের স্বার্থের ভাগীদার যে জন, তাকে চূর্ণ করা যায়না সহজে। মরবার মত একটি সত্যিকারের আদর্শ থাকলে, মানুষ মরতে কুণ্ঠিত হয় না। আদর্শই তাকে শক্তি যোগায়।
______________________________
আজ আমি পাঠ অনুভূতি প্রকাশের জন্য মনোনীত করছি Joydeep Biswas কে। তিনি সাতদিনে সাতটি বইয়ের পাঠ অনুভূতি প্রকাশ করবেন, এবং সাত জনকে মনোনীত করবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ