শিল্পী ইতি খান এর ‘ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য’

প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২০

শিল্পী ইতি খান এর ‘ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য’

|| হাফিজ সরকার || কুষ্টিয়া, ১৪ অাগস্ট ২০২০ : এই ঐতিহাসিক ভাস্কর্য রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য মাননীয় এমপি মাহাবুব উল আলম হানিফ, জেলা প্রসাশন ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শিল্পী ইতি খান আজ নেই। তাঁর নিজ বাসা কুস্টিয়ার মজমপুরে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৫৬+ বছর।

সারা জীবন হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেছেন শিল্পী ইতি খান। স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর অনেক কাজ কুষ্টিয়া অঞ্চলে ব্যপাক সাড়া ফেলেছিল। স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে কুষ্টিয়ায় নির্মাণ করা ‘ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য’ হচ্ছে তাঁর অন্যতম ভাস্কর্য, যা তাঁকে অমর করে রাখবে আমাদেরসহ সমগ্র তরুন প্রজন্মের কাছে।

কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ মজমপুরে নির্মিত ভাস্কর্যটিতে রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নারকীয় ও জঘণ্য অপকর্মের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী নির্মিত এই ভাস্কর্যটি নির্মাণকালেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।

স্বাধীনতার পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাদের গৌরবময় স্মৃতি রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের নিমিত্তে সম্ভবত এটিই প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য।

ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য নির্মাণ কমিটির উদ্যোগে শিল্পী ইতি খানের ডিজাইন ও তত্ত্বাবধানে এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটি কুষ্টিয়া জেলা শাখার উদ্যোগে ১৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই ভাস্কর্যটি শহরের প্রবেশ মুখে জনগুরুত্বপূণ এলাকা মজমপুর গেট চত্বরে স্থাপন করা হয় ২০০৯ সালের ১৭ই এপ্রিল। সে সময় এটির উদ্বোধন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।”

ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকে তরুণ প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষরা ঘৃণিত ওই ভাস্কর্যটির গায়ে পাথর নিক্ষেপ করে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি প্রতীকী ঘৃণা প্রদর্শন করেন। মাত্র ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ে ষ্টিলের পাত দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটি কংক্রিট ঢালাইয়ের একটি খুঁটির সাথে স্থাপন করা হয়েছে।

নির্মাণের পর শিল্পী ইতি খান বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলা ও রাজাকারদের জঘণ্য অপরাধের প্রতি আমৃত্যু ঘৃণা প্রদর্শনের জন্যই তিনি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।

চরম আবেগী এই শিল্পী রাজশাহী আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু পড়া শেষ না করেই কিছুদিন পরে বাড়ি ফিরে আসেন।

ভাস্কর্যটি অরক্ষিত, অবহেলিত। পুর্বপাশ গনসৌচাগার দখল করে তৈরী হয়েছে ট্রাফিক অফিস আর পশ্চিম দিকে ট্রাফিকের আর একটি চালা তুলে দখল করেছে ভাস্কর্যটি। সামনে রাজনৈতিক দল ও পন্যের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড।
এই ঐতিহাসিক ভাস্কর্য রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য মাননীয় এমপি মাহাবুব উল আলম হানিফ, জেলা প্রসাশন ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ