৪র্থদিনে কমলগঞ্জের ২৩ চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ১:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২০

৪র্থদিনে কমলগঞ্জের ২৩ চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ও সড়ক অবরোধ

বিশেষ প্রতিনিধি || কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), ০৯ অক্টোবর ২০২০ : ন্যূনতম দৈনিক মজুরী ১৫০ টাকা নির্ধারণ, ২ মাসের মজুরীর সমপরিমাণ উৎসব বোনাস, বিদ্যমান সকল সুযোগ সুবিধা অানুপাতিকহারে বাড়ানো, বকেয়া মজুরী পরিশোধসহ দূর্গাপূজার অাগেই চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিবার্ষিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের দাবীতে সারাদেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে কমলগঞ্জে মনু-ধলই ভ্যালীর (অঞ্চলের) ২৩টি চা বাগানের চা শ্রমিকরা ২ ঘন্টার কর্মবিরতির সময়ে বাগান থেকে বের হয়ে এসে বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। শুক্রবার কমলগঞ্জে মনু-ধলই ভ্যালীর ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করে।

শমসেরনগর চা বাগানে শুক্রবার সকাল ৮টায় চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে চা বাগান থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে এসে শমশেরনগর বাজার চৌমুহনায় সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ করে।
চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন মনু-ধলই ভ্যালীর কার্যকরি কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন, শমশেরনগর চাবাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল প্রমুখ।
সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, বর্তমানে দিনে ১০২ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বহন করাও সম্ভব হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কিন্তু মজুরি সেই অনুযায়ী বাড়েনি।

একইভাবে আলীনগর চা বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে এসে হালিমা বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে। চা-ছাত্র যুব পরিষদের নেতা সজল কৈরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি গনেশ পাত্র, সঞ্জয় চৌহান, উত্তম নুনিযা, চন্দন বাগতি প্রমুখ। একই সময়ে কমলগঞ্জে মনু-ধলই ভ্যালীর ২৩ টি চা বাগানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ এ. কন্দ জানিয়েছেন।

কর্মসূচি পালণকালে চাবাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা বলেন, দৈনিক মাত্র ১০২ টাকার মজুরিতে এক একটি পরিবারের ৬ থেকে ৭ সদস্যের জীবনযাপন খুবই কষ্টকর। প্রতি দুই বছর অন্তর চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে বৈঠক করে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়।

মজুরি বৃদ্ধির মেয়াদ শেষে আরও কয়েক মাস অতিক্রম করলে নতুন করে চা শ্রমিকদের মজুরি এখনও বৃদ্ধি হয়নি। ফলে চা শ্রমিক পরিবারগুলো মানবেতর যাপনযাপন করছে। তাই এখন বাধ্য হয়ে আজ একযোগে বাংলাদেশের ২২৮টি চা বাগানে ২ ঘন্টার কর্ম বিরতি পালনসহ বিক্ষোভ মিছিল চলছে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি একটি নিয়মতান্ত্রীক বিষয়। চা বাগানের মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশী চা সংসদ সময়ের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধি না করায় চা শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করেছে। অবিলম্বে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে ও সাথে সাথে উৎসব বোনাস প্রদান করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান

দূর্গাপূজার অাগেই চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিবার্ষিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের দাবীতে দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি পালন শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চা শ্রমিকেরা।

সারাদেশের ২৫০টি চা বাগানের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়, “চা শিল্পে বিগত ৭০ বছর যাবত চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে মজুরী বোনাস সহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে দ্বিবার্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়ে অাসছে। এছাড়াও সরকার এ পর্যন্ত তিনবার নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করেছেন। যখনই মজুরী বোর্ড গঠন হয়েছে তখনই চা শ্রমিকেরা ভাল কিছু পেয়েছে।
চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এরপর নতুন দাবিনামা নিয়ে অালোচনা শুরু হয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ২২ মাস অতিক্রম হতে চলেছে। মালিকপক্ষের বিভিন্ন টালবাহানা ও অসহযোগিতার কারণে চুক্তি সম্পাদন হচ্ছে না। মালিকপক্ষ দূর্গাপূজার অাগেই চুক্তি সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। পূজার অাগে চুক্তি সম্পাদন না হলে নতুন মজুরী, বকেয়া সহ নতুন বোনাস কিছুই পাওয়া যাবে না।”

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করা হয়েছিল। মালিকপক্ষ ১২০ টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২৩ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো ১০২ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে।

বিজয় হাজরা বলেন, ‘দুর্গাপূজার আগেই চা শ্রমিকদের নতুন মজুরিসহ বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানাই। আমাদের দাবি না মানলে আগামীকাল শুক্রবারও সারাদেশের চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। এ ছাড়া দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

এ সম্পর্কে ফিনলে টি কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিইও) তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকার মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত বোর্ডের সঙ্গে ৫টি বৈঠক হয়েছে। গত মার্চ থেকে করোনার কারণে সভা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তা ছাড়া করোনাকালে অন্যদের মতো চা শিল্পেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের উৎপাদিত অনেক চা-পাতা অবিক্রীত রয়ে গেছে। যেহেতু মজুরি বোর্ড কাজ করছে, সেহেতু হঠাৎ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি অযৌক্তিক।

ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ

ন্যূনতম দৈনিক মজুরী ১৫০ টাকা নির্ধারণ, ২ মাসের মজুরীর সমপরিমাণ উৎসব বোনাস, বিদ্যমান সকল সুযোগ সুবিধা অানুপাতিকহারে বাড়ানো, বকেয়া মজুরী পরিশোধসহ দূর্গাপূজার অাগেই চা সংসদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিবার্ষিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের চা শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।

মজুরি বৃদ্ধিসহ দুর্গাপূজার আগেই উৎসব বোনাস পরিশোধের চা শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের মৌলভীবাজার জেলা যুগ্ম অাহবায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন এবং শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সভাপতি শেখ জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক রোহেল অাহমদ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ