৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনায় অজয় রায়কে স্মরণ

প্রকাশিত: ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২০

৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনায় অজয় রায়কে স্মরণ

বিপ্লব চাকমা || ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০২০ : অজয় রায়ের মতো উদার মানবতাবাদী, অসম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষের শূণ্যতা অপূরণীয় থাকবে।

সভ্যতার অগ্রসর পরিক্রমার সমাজের বাতিঘর হিসেবে সর্বকালে হাতেগোনা কিছু ব্যক্তির ত্যাগ, চিন্তা ও কর্মের সমন্বয়ে মানবজাতি পৃথিবীকে আলোকিত করে চলেছে। জাতি হিসেবে আমাদের ঐতিহ্য হাজার হাজার বছরের হলেও বাংলাদেশের জন্মের সূবর্ণ জয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা যথেষ্ট সাহসীকতা ও বলিষ্ঠ কন্ঠে বলতে পারছি না, কোথায় যাচ্ছি আমরা? আমাদের সংস্কৃতিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নানা ধরণের অনিয়ম, লুন্ঠন, অপহরণ, নীতিহীনতা, মানবপাচার, উগ্রবাদিতা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, ঘুষ, দূর্নীতি এবং সম্প্রতি এই সকল অপসংস্কৃতির সাথে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণ। সাম্প্রতিক সময়ে মহামারী আকারে নারী-শিশু ধর্ষণের রোমহর্ষক ঘটনায় সমাজের বিবেকবান সকল মানুষ আতঙ্কিত। দেশবাসী আজ সোচ্চার ও প্রতিবাদে মূখর হয়ে উঠেছে। অজয় রায় ছিলেন আমৃত্যু সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায় সংগঠিত করার কারিগর। তিনি ছিলেন সভ্যতা ও অগ্রসর স্বদেশ গড়ে তোলার চিন্তক। আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন মানব মুক্তির। তিনি যেমন স্বপ্ন দেখতেন মানবিক সমাজের তেমনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন, শুধু তাই নয় সংগ্রাম করে গেছেন জীবনভর মানবতার মুক্তির লক্ষে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক, মানবিক সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা, বিশিষ্ট কলামিস্ট অজয় রায়ের ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ অক্টোবর, শনিবার, বেলা ১১টায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আয়োজনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়- রুম-১, পশ্চিম গ্যালারীর নিচে, জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সময়ে প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে এ্যাড. এস এম এ সবুর , ড. আজিজুর রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ডা. অসিত বরণ রায়, জয়ন্তী রায়, সালেহ আহমেদ, সানোয়ার হোসেন সামছী, কাজী সালমা সুলতানা, ড. সেলু বাসিত, আব্দুল ওয়াহেদ, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, জুবায়ের আলম, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের পক্ষে, অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি পক্ষে আনিসুর রহমান মল্লিক, ঐক্য ন্যাপের পক্ষে এ্যাড. এস এম এ সবুর, হারুনার রশিদ ভুঁইয়া, হেদায়েতুল ইসলাম, ন্যাপের পক্ষে পরিতোষ দেবনাথ, সাংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষে সেলিম রেজা অজয় রায়ের পরিবারের পক্ষে স্ত্রী জয়ন্তি রায়, আদিবাসী ফোরামের পক্ষে দীপায়ন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বি সি এল এর পক্ষে গৌতম শীল, জাসদের পক্ষে কাজী সালমা সুলতানা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে আবু বক্কর সিদ্দিক, মিজানুর রহমান, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের পক্ষে গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, বেলায়েত হোসেন, জোবায়ের আলম সহ নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে রোবায়েত ফেরদৌস, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির আনিসুর রহমান মল্লিক, ঐক্য ন্যাপের পক্ষে এ্যাড. এস এম এ সবুর, ন্যাপের পক্ষে পরিতোষ দেবনাথ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের পক্ষে ড. অসিত বরণ রায়, পরিবারের পক্ষে স্ত্রী জয়ন্তি রায়, সংস্কৃতি মঞ্চের পক্ষে ড. সেলু বাসিত, জাতীয় শ্রমিক জোটের পক্ষে আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।
সভায় নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, সত্যিকারের একটি জাতীয়বাদী শক্তির উত্থানের প্রত্যাশা নিয়ে অজয় রায় আজীবন লড়াই করেছেন। মানুষকে উৎসাহ যোগিয়েছেন, সংগঠিত করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনো করাগার, কখনো আতœগোপনে, কখনো প্রকাশ্যে থেকে নিজের জীবনকে মানব মুক্তির লড়াইয়ে শামিল করেছেন। অজয় রায় এই লড়াইয়ে আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন, বর্তমান অস্থির সময়ে তাঁর মতো নিবেদিত দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব খুবই প্রয়োজন। তাঁর মতো বিচক্ষণ মানবপ্রেমী সংগঠকের শূণ্যতা আমাদের ব্যাথিত করছে।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমরা অজয় রায়ের স্পর্শে থেকে নিজেকে জানা ও বুঝার যেমন সুযোগ পেয়েছি, তেমনি অজয় রায়ের দেশপ্রেমের চিন্তার সাথেও আমার একটি নিবিড় সম্পর্ক হয়ে উঠেছিল। আজকে অনুভব করছি অগ্রসর চিন্তার একজন দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে অজয় রায়ের শূণ্যতা কতটা গভীরে আছে, আমি তাঁর প্রয়াত আতœার শান্তি কামনা করছি।
জয়ন্তী রায় বলেন, ৫০ বছরের মতো সময় একত্রে কাটিয়েছি অজয় রায়ের সাথে, সত্যিকারের একজর নিবেদিত মানুষ বলতে যা বুঝায় অজয় রায়ের জীবনে তা বিদ্যমান ছিলো, তিনি মূলত দেশপ্রেমকেই সংসার জীবন মনে করতেন। সে জন্য আমৃত্যু দেশও মানবতার মুক্তি লড়াইয়ে তিনি অবিচল ছিলেন।
সালেহ আহমেদ বলেন, সহকর্মীদের কি করে উজ্জিবিত রাখা যায় এই বিষয়টি অজয় রায়ের রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল। দেশের প্রতিটি দুঃখজনক, বেদনাদায়ক ঘটনায় তিনি ব্যাথিত হতেন এবং এই বিষয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করা ও প্রতিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, এই কাজে তিনি শ্রেণী পেশার মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করতে সচেষ্ট ছিলেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন অজয় রায়ের প্রাণ ভ্রমরা হিসেবেই বিবেচ্ছ হতো, এজন্য আমৃত্যু তিনি এই কাজে সক্রিয় ভূমিকা রেখে গেছেন।
সভার শুরুতে প্রয়াত অজয় রায়, সদ্য প্রয়াত সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের একমাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারিক আলীসহ করোনাকালীন সময়ে প্রয়াত গুণীজনদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ