যমুনা গ্রুপের হাল ধরেছেন বাবুলের ছেলে শামীমসহ তিন মেয়ে সুমাইয়া, মনিকা ও সোনিয়া

প্রকাশিত: ৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২০

যমুনা গ্রুপের হাল ধরেছেন বাবুলের ছেলে শামীমসহ তিন মেয়ে সুমাইয়া, মনিকা ও সোনিয়া

সৈয়দ অারমান জামী, বিশেষ প্রতিনিধি || ১০ নভেম্বর ২০২০ : দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প পরিবার যমুনা গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৪২টি প্রতিষ্ঠান। বিশাল এই শিল্প-বাণিজ্যের হাল ধরেছেন এই গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বাবুলের ছেলে শামীমসহ তিন মেয়ে সুমাইয়া, মনিকা ও সোনিয়া।

বাবুলের হাতে গড়া বিশাল শিল্প সম্রাজ্য আর তার রেখে যাওয়া স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছে নতুন প্রজন্মের এই তরুণ নেতৃত্ব।

১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া নুরুল ইসলাম বাবুল ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। যমুনা ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যমুনা গ্রুপের পথচলা। ১৯৭৫ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ একটি জায়ান্ট গোষ্ঠী হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে এক অনবদ্য ‘আইকন’ বলা হয় তাকে। একে একে তিনি শিল্প খাতে গড়ে তোলেন তিন ডজন কোম্পানি। এই গ্রুপে বর্তমানে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ কর্মরত আছেন। বাবুলের নেতৃত্বে চার দশক ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যমুনা গ্রুপ এখন এগিয়ে চলেছে তার চার সন্তানের যোগ্য নির্দেশনায়।

যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল চলতি বছরের ১৩ জুলাই মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে শামীম ইসলাম ও তিন মেয়ে সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম, মনিকা নাজনীন ইসলাম এবং শারিয়াত তাসরিন সোনিয়া ইসলাম বাবার উত্তরসূরী হিসেবে যমুনা গ্রুপকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

পড়াশুনা শেষ করে চার সন্তানই বাবার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। বাবার কাজে সহযোগিতা করতে করতেই তারা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। অবশ্য নুরুল ইসলাম বাবুল বেঁচে থাকা অবস্থায় ছেলে-মেয়েদেরকে যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। এখনও সেভাবেই চলছে যমুনা গ্রুপ। এই গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, নিজেদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বড় ও জটিল কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভাইবোনেরা এখন তাদের মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

নুরুল ইসলাম বাবুলের ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তিন মেয়ে রয়েছেন গ্রুপের পরিচালক পদে। তবে বাবার মৃত্যুর পর তাদের মা অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি হন এ গ্রুপের মধ্যমনি। বর্তমানে তিনিই যমুনার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৩ আগস্ট যমুনা গ্রুপের ৪২টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাকে নতুন চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষ। পাহাড়সমান উচ্চতায় ছিল তার সাহস আর মনোবল। দেশের প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি বিদেশে গড়ে তুলেননি কোনও লুকানো সাম্রাজ্য। অ্যারোমেটিক কসমেটিকসের হালাল প্রসাধনী ও সাবান এবং যমুনা ফ্যানের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। প্যাগাসাস ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক সফলতা, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো সুবিশাল অত্যাধুনিক শপিং মলের আকর্ষণ, যমুনা ইলেক্ট্রোনিকসের পণ্যসম্ভার সারাদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন, সর্বোপরি ‘যমুনা’ শব্দটিকে গুণগত মানের একটি সেরা ব্র্যান্ডের পরিচিতি এনে দিয়েছে। একের পর এক নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের শিল্প খাতে বিশাল অবদান রেখে গেছেন যমুনা গ্রুপের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম। শেষের ২০ বছরে এ কাজে তিনি চার সন্তানের পাশাপাশি সারথী হিসেবে পেয়েছিলেন বড় জামাতা শেখ মো. আব্দুল ওয়াদুদকেও।

এ প্রসঙ্গে যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম বলেন, ‘অনেক ত্যাগ, তিতীক্ষা আর সারা জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার বিনিময়ে আমার বাবা প্রয়াত চেয়ারম্যান যমুনা গ্রুপকে যে আকাশসম উচ্চতায় রেখে গেছেন, আমরা সন্তান হিসেবে তার আদর্শ ও নীতিকে সমুন্নত রেখে এই গ্রুপের চলমান অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেদেরকে সর্বত্রভাবে নিয়োজিত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বাবা বছরের পর বছর ধরে আমাদেরকে হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন, এত বড় প্রতিষ্ঠান কীভাবে চালাতে হয়। তাই বাবার শিক্ষা, আদর্শ ও নীতিকে ধারণ করেই আমরা তার সন্তানরা কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছি ।’

মনিকা নাজনীন ইসলাম বলেন, ‘আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্যও দোয়া করবেন, যাতে আমাদের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে যে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার সংস্থান হয়েছে, সেটার পরিধি যাতে আরও বাড়তে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, আমাদের সব পণ্যের গুণগত মানের উৎকর্ষতা আগের মতোই অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের ভালোবাসায় যমুনা গ্রুপ উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’

প্রসঙ্গত, যমুনা গ্রুপ বহুমাত্রিক পণ্য পরিসীমার জন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উন্নীত হয়েছে। যমুনা গ্রুপের রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক চিন্তা। গত ৪৬ বছরে যমুনা গ্রুপ বৈদ্যুতিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক, চামড়া, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলসহ স্পিনিং, বুনন ও রঞ্জন, কসমেটিকস, বেভারেজ, আবাসন, হাউজিং, ফাইভস্টার হোটেল (জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল), বিনোদন পার্ক, প্রিন্ট (দৈনিক যুগান্তর) ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া (যমুনা টিভি) খাতে অর্থ লগ্নি করেছে। স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় বাজারে যমুনা গ্রুপের পণ্যের সুনাম রয়েছে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, ইতালি থেকে প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে সেরা কোয়ালিটির পণ্য উৎপাদন করে ‘টেক্সটাইলের নতুন বিশ্ব’ গড়ে তুলেছে যমুনা গ্রুপ।

যমুনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান:

১. দৈনিক যুগান্তর,একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক ২. যমুনা টেলিভিশন ৩. যমুনা ফিউচার পার্ক, দেশের সর্ববৃহৎ শপিংমল ৪. যমুনা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ৫. ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড ৬. যমুনা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড ৭. যমুনা ডেনিমস লিমিটেড ৮. যমুনা স্পিনিং মিলস লিমিটেড ৯. শামীম স্পিনিং মিলস লিমিটেড ১০. শামীম কম্পোজিট মিলস লিমিটেড ১১. শামীম রোটোর স্পিনিং লিমিটেড ১২. শামীম গার্মেন্টস ১৩. যমুনা ডেনিমস গার্মেন্টস ১৪. যমুনা ডেনিমস ওয়েভিং লিমিটেড ১৫. প্যাগাসাস লেদারস লিমিটেড ১৬. যমুনা ডিস্ট্রিলারি লিমিটেড ১৭. যমুনা ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড লিমিটেড ১৮. যমুনা ইলেকট্রোনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস ১৯. যমুনা টায়ার অ্যান্ড রাবারস ইন্ডাস্ট্রিজ ২০. যমুনা পেপারস মিলস ২১. যমুনা আয়রন অ্যান্ড স্টিল মিলস লিমিটেড ২২. যমুনা গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ ২৩. যমুনা পাওয়ার লিমিটেড ২৪. যমুনা প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং লিমিটেড ২৫. যমুনা ফ্যান অ্যান্ড ক্যাবলস লিমিটেড ২৫. যমুনা পলি সিল্ক লিমিটেড ২৬. যমুনা লজিস্টিক অ্যান্ড শিপিং লিমিটেড ২৭. যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড ২৮. যমুনা গ্যাস লিমিটেড ২৯. হোলসেল ক্লাব লিমিটেড ৩০. যমুনা ওয়াশিং ৩১. হুরিয়ান এইচটিএফ লিমিটেড ৩২. যমুনা মিডিয়া লিমিটেড ৩৩. লন প্রসেসিং লিমিটেড ৩৪. যমুনা ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাচারিং ৩৫. যমুনা ফুডস লিমিটেড ৩৬. হোরক্যাচার লিমিটেড ৩৭. যমুনা ব্রেয়ারি অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ৩৮. যমুনা ডেনিমস টেকনোলজি লিমিটেড। এ ছাড়াও রয়েছে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ