পৌরসভার সীমানা বর্ধিতকরণসহ নির্বাচনের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন ও সমাবেশ

প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২০

পৌরসভার সীমানা বর্ধিতকরণসহ নির্বাচনের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সৈয়দ অারমান জামী || শ্রীমঙ্গল, ২১ নভেম্বর ২০২০ : পৌরসভার সীমানা বর্ধিতকরণসহ নির্বাচনের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২১ নভেম্বর ২০২০ শনিবার বেলা ১১টায় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা পয়েন্টে ‘শ্রীমঙ্গল পৌরসভা বর্ধিতকরণ ও নির্বাচন বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে অায়োজিত এই মানববন্ধন ও সমাবেশে বিভিন্ন দল, মত, শ্রেণি পেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিলে প্রায় ৩০ মিনিট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে এবং অন্যান্য সংযোগ সড়কেও বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে।
সোশাল ডিসট্যান্স মানা না হলেও মানববন্ধনে জড়ো হওয়া মানুষদের অধিকাংশকেই মাস্ক’ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ফয়েজের সঞ্চালনায় ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আছকির মিয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু শহীদ আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিএমএ’র সভাপতি এবং অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হরিপদ রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইউসুফ আলী, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুজ্জামান সেলিম, জাসদ সভাপতি এলেমান কবীর, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, আশীদ্রোণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জহর, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক এনাম হোসেন চৌধুরী মামুন, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তহিরুল ইসলাম মিলন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালেব বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালিক আহমদ, বিএনপি নেতা সরফরাজ আলী বাবুল, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কদর অালী,
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এএসএম ইয়াহিয়া, উপজেলা অাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, যুবলীগ নেতা অাবু তালেব বাদশা প্রমূখ।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার, উপজেলা অাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু কাউসার লাভলু, আব্দুল মতিন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঝলক দেবরায়, স্বপন দেব সহ আরো অনেকে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মামলার ফেরে পরে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে না। জনগণ চাইছে নির্বাচন কিন্তু ক্ষমতা অনির্দিষ্টকাল ধরে রাখতে মামলার বেড়াজালে ফেলে রেখে এ নির্বাচন আটকে রাখা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলের মানুষ পৌরসভার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সম্প্রসারিত এলাকার মানুষ বর্ধিতহারে ২০ বছর ধরে ভূমি উন্নয়ন কর ও অন্যান্য কর দিয়ে যাচ্ছে। অথচ পায় না প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা। পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল আজ একটি অপরিচ্ছন্ন শহরে পরিনত হয়েছে। এ ক্লাস পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলেও নাগরিকরা সি’ ক্লাসের সুবিধাও পায় না। শ্রীমঙ্গলের ‘শ্রী’ আজ হারাতে বসেছে। গণতান্ত্রিক নিয়মের বাইরে গিয়ে নির্বাচনবিহীন জগদ্দল পাথরতুল্য পৌরসভার স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ডে নাগরিকজীবন অতিষ্ঠ। ইউনিয়ন পরিষদের কোন আপত্তি নেই এলাকা সম্প্রসারিত হলে।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের পেছনে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে, কারা জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের খোঁজে বের করেন এবং অবিলম্বে সম্প্রসারিত পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে পৌরসেবা প্রাপ্তির সুযোগ করে দিন। রাস্তাঘাটের অবস্থা করুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লার ভাগাড়। শহরের পরিবেশ নোংরা, নেই পরিকল্পিত পয়ঃনিস্কাশন সুবিধা। উন্নয়নের দাবীতে এই আওয়ামী লীগের অন্যতম দুর্গ এই শ্রীমঙ্গলের মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে, যা দুঃখের বিষয়। একটি মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধার সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। সরকারের কোন সুবিধা পৌরসভা থেকে পাওয়া যায় না। এই করোনাকালেও শ্রীমঙ্গল পৌরসভা এগিয়ে আসেনি। তাদের কোনও দায়ভার নেই। সরকারের প্রণোদনা পৌরবাসী পায় না। গরীব মানুষ পায় না। সেগুলো গেলো কোথায়? মহামান্য হাইকোর্টে মামলা করে দিয়ে আইনি জটিলতায় ফেলে আজ শ্রীমঙ্গলবাসীর নাগরিক সুবিধা হরণ করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইউসুফ আলী গণমাধ্যম ও গোয়েন্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পৌরসভার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় ও এতকাল ধরে নাগরিকদের অধিকার হরনের সঠিক চিত্র আপনারা দয়া করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দিন। কারা কারা মানুষকে উন্নয়নবঞ্চিত করে পৌরসভাকে প্রায় নিস্ক্রিয় করে রাখার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তা আমাদের নেত্রীকে জানান। এ জটিলতা শীঘ্রই নিরসন না হলে আগামীতে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। আমরা এই মানববন্ধন থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলাম। এর মধ্যেই এর সমাধান করা হউক। প্রয়োজনে প্রশাসক বসিয়ে হলেও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ মানববন্ধন প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল পৌর মেয়র মো: মহসীন মিয়া’র প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ মানববন্ধনে পৌরসভা বর্ধিত করণের দাবীর সাথে আমিও একমত। এ সম্পর্কিত দাপ্তরিক কাজ পৌরসভা থেকে যা যা করণীয়, তা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। আর নাগরিক সুবিধার অপ্রতুলতার কথা যেমনটা বলা হয়েছে, যা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার শামিল। শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্যবর্ধনকল্পে পৌরসভা পদক্ষেপ নিয়েছে। পৌরসভার সেবাপ্রাপ্তিতে নেই ভুগান্তি। আধুনিক অডিটোরিয়াম করা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে তা অনেক পৌরসভায় এখনো অনুপস্থিত। এখনো নিয়মিত আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সীমানা বর্ধিতকরণসহ নির্বাচনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান। এ দাবীর প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক তাপস কুমার ঘোষ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান মাসুকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন এবং শ্রীমঙ্গল পৌর শাখার সভাপতি শেখ জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক রোহেল অাহমদ।