বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন: সংসদে রুমিন ফারহানা

প্রকাশিত: ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১

বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন: সংসদে রুমিন ফারহানা

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক, জাতীয় সংসদ ভবন || ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি ২০২১ : “লুটের এক টেক্সবুক এক্সাম্পল এখন বাংলাদেশ। লুটের টাকার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে তৈরি হয় বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোম। গত এক যুগের জানা অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন।” সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সাংসদ ব্যরিস্টার রুমিন ফারহানা এসব কথা বলেন।

Manual1 Ad Code

রুমিন ফারহানা বলেন, একটি বালিশ ৬ হাজার টাকা, একটি বঁটি ১০ হাজার টাকা, কাঁটাচামচ ১ হাজার টাকা, দুধে পানি মাপার যন্ত্র ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তালা ৫ হাজার ৫৫০ টাকা, বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকা, একটি মেডিকেল বই ৮৫ হাজার টাকা, পর্দা ৩৭ লাখ টাকা, টেলিফোন ১৫ লাখ টাকা, লিফট ২ কোটি টাকা, রক্তচাপ মাপার মেশিন ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, চেয়ার ৬ লাখ টাকা এখন অতি স্বাভাবিক বিষয়। প্রকল্পের কেনাকাটায় লুটপাটের সঙ্গে আছে পুকুর খনন, লিফট কিনতে, গরুর কৃত্রিম প্রজনন, ট্যাংরা-পাবদা মাছ চাষ, তেলজাতীয় ফসল এবং মৌ চাষ, নলকূপ খনন শেখার মতো উদ্ভট যুক্তিতে বিদেশ সফর।

সংরক্ষিত নারী আসনের এই সাংসদ বলেন, গত এক যুগের জানা–অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। ২০০৯ সালের ২১ হাজার ৪৯২ জন কোটিপতি ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮ জনে। ব্যাংকের এই হিসাবের বাইরে আছে আরও বহু কোটিপতি। বিশ্বে ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হিসেবে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম আর ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়, কিন্তু বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশ পঞ্চম।

রাষ্ট্রপতির পুরো ভাষণ ডেটার সমাহার
রুমিন বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে যত গুরুত্ব দিয়ে তুলে এনেছেন, ততটাই অবহেলিত থেকেছে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বধীনতা, সর্বজনীন মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাধারণ মানুষের জীবনমান, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, লুটপাট, সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেঙে পড়া ইত্যাদি।

রুমিন বলেন, রাষ্ট্রপতির পুরো ভাষণ মূলত কিছু ডেটার সমাহার; যেখানে জিডিপি থেকে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় থেকে মাতৃমৃত্যু কিছুই বাদ যায়নি। অথচ বাংলাদেশের ডেটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই কঠিন প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।

‘নৌকা মানেই জেতা’
রুমিন বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকেও ‘নৌকা মানেই জেতা’ ধরনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন অনেকেসহ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতাসহ আর্থিক দুর্নীতি উল্লেখ করে তাঁদের অভিশংসন চেয়েছেন।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, সংবাদমাধ্যমের ওপরে নানামুখী চাপের কারণে ২০২০ সালের রিপোর্টে বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম অবস্থানে আছে, যা পাকিস্তান, মিয়ানমার, আফগানিস্তানের চেয়ে পেছনে।

সব ব্যর্থতাকে ছাড়িয়েছে করোনাকালীন ব্যর্থতা
রুমিন দাবি করেন, সরকারের এযাবৎকালের সব ব্যর্থতা ছাড়িয়ে গেছে করোনাকালীন ব্যর্থতা। শুরু থেকে করোনা পরীক্ষা, মাস্ক, পিপিই, হাসপাতালে শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, প্রণোদনাসহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা এই কঠিন সময়কে কঠিনতর করেছে। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে নকল করোনা সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে। এখন যুক্ত হয়েছে টিকা নিয়ে ব্যবসা। শুধু সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি না করে বেক্সিমকোর সঙ্গে চুক্তি করার কারণে বাংলাদেশকে ভারতের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে টিকা কিনতে হচ্ছে, যাতে ৩২৫ কোটি টাকা যাবে কোম্পানিটির পকেটে।

Manual3 Ad Code

নির্বাচন খারাপ হলে এমপি হিসেবে কেন সুযোগ–সুবিধা নিচ্ছেন
রুমিনের বক্তব্যের পর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সাংসদ হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় সাংসদ বক্তব্য দিয়েই বের হয়ে গেছেন। কারণ, তিনি জানেন, তাঁর বক্তব্য মিথ্যায় ভরা। এর জবাব তাঁরা শুনতে চান না।

Manual8 Ad Code

রুমিনের উদ্দেশে সরকারদলীয় এই সাংসদ বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্বাচন করেন না, কিন্তু সংসদে এসে বসেন। এতই খারাপ নির্বাচন হয়ে থাকলে এমপি হিসেবে কেন সুযোগ–সুবিধা নিচ্ছেন? কেন ১০ কাঠার জমির জন্য আবেদন করেছিলেন? পত্রিকায় আসার পর আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। টাকা কোথা থেকে আসে আমরা জানি।’

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ