কী আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায়?

প্রকাশিত: ২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১

কী আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায়?

তানিম অাফজাল || ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১: ♦সন্দেহজনক গ্রেপ্তার হলে?♦কী আছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায়?
♦ধরুন এক সন্ধ্যায় নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে থামিয়ে আপনার শরীর তল্লাশি শুরু করল। কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া আপনাকে সন্দেহ করে বসল। গ্রেপ্তার করে থানায়ও নিয়ে গেল। অথচ আপনি তো কোনো অপরাধই করেননি। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কি চাইলেই যে কাউকে সন্দেহজনক গ্রেপ্তার করতে পারে? এর সোজা উত্তর হচ্ছে ‘না’।

কিন্তু আইনের ফাঁকফোকরে আবার পুলিশকে সেই ক্ষমতা দেওয়াও হয়েছে। তবে সন্দেহজনক হলেই যে গ্রেপ্তার করতে পারবে তা নয়। সন্দেহজনক গ্রেপ্তার করলেও এর পেছনে যুক্তিসংগত কারণ থাকতে হবে। আইনেই এটি বলে দেওয়া হয়েছে। মূলত যে ধারার বলে সন্দেহজনক গ্রেপ্তার করা হয় সেটি হচ্ছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা। এই ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুলিশ অফিসার বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অথবা পরোয়ানা ব্যতীত যাদের গ্রেপ্তার করতে পারেন তারা হলো-

♦কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা এরূপ জড়িত হিসাবে যার বিরুদ্ধে যুক্তিসংগত অভিযোগ করা হয়েছে অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গিয়েছে, অথবা যুক্তিসংগত সন্দেহ রয়েছে।
♦ আইনসংগত কারণ ব্যতীত যার নিকট ঘর ভাঙার কোনো সরঞ্জাম রয়েছে;

♦এই কার্যবিধি অনুসারে অথবা সরকারের আদেশ দ্বারা যাকে অপরাধী ঘোষণা করা হয়েছে;

♦চোরাইমাল বলে যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে, এরূপ মাল যার নিকট রয়েছে এবং যে এরূপ মাল সম্পর্কে কোনো অপরাধ করেছে বলে যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করা যেতে পারে;

♦পুলিশ অফিসারকে তার কাজে বাধাদানকারী ব্যক্তি অথবা যে ব্যক্তি আইনসংগত হেফাজত হতে পলায়ন করেছে অথবা পলায়নের চেষ্টাকরেছে;

♦বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী হতে পলায়নকারী; বাংলাদেশে করা হলে অপরাধ হিসাবে শাস্তিযোগ্য হতো, বাংলাদেশের বাইরে এরূপ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি;

♦কোনো মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি যে ৫৬৫ ধারা (৩) উপধারা অনুসারে প্রণীত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করে;

♦যাকে গ্রেপ্তারের জন্য অন্য কোনো পুলিশ অফিসারের নিকট হতে অনুরোধ পাওয়া গিয়েছে।

♦আপিল বিভাগের রায়ঃ-

২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল তারিখে হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) বনাম বাংলাদেশ মামলার রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ও ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করলে সম্প্রতি আপিল বিভাগও এ রায় বলবৎ রেখেছে। এর মানে হচ্ছে ৫৪ ধারা নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া নির্দেশনা অবশ্যই পালন করতে হবে। এই নির্দেশনাসমূহের আলোকে পুলিশ ৫৪ ধারায় ঃ-

♦গ্রেপ্তারের সময় যা মানতে হবে: ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কোনো ব্যক্তিকেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন না।

♦কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পূর্বে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার তাঁর পরিচয় দেবেন।

♦গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে থানায় আনার পর দ্রুত গ্রেপ্তারের কারণসমূহ লিপিবদ্ধ করবেন।

♦গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পেলে পুলিশ তা লিপিবদ্ধ করবেন এবং কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে বা সরকারি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার সনদপত্র সংগ্রহ করবেন।

♦ব্যক্তিকে থানায় আনার এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তার আত্মীয়স্বজনকে টেলিফোনে বা লোক মারফত গ্রেপ্তারের সংবাদ জানাবে।

♦পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে তার পছন্দনীয় আইনজীবী বা নিকটাত্মীয়র সঙ্গে পরামর্শ বা দেখা করার অনুমতি দিতে বাধ্য।

♦গ্রেপ্তার হলে যা করণীয়:

৫৪ ধারায় যদি কেউ গ্রেপ্তার হন তাহলে সাধারণত নন জিআর মামলা হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রেরণ করা হবে। আদালতে তখন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চাইতে হবে। যদি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত কর্মকর্তার প্রেরণকৃত পত্রে ও মামলার লিখিত ডায়েরির বর্ণনা পড়ে সন্তুষ্ট হন যে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ যুক্তিসংগত এবং তাকে জেলে রাখার যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে, তবে তিনি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেবেন। অন্যথায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মুক্তি দেবেন। অবশ্য একবারে মুক্ত না করে প্রাথমিকভাবে জামিনও মঞ্জুর করতে পারেন আদালত। যদি ৫৪ ধারায় পুলিশ আটকের সময় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানে তাহলে আদালতে তা অবগত করা যায় কিংবা উচ্চ আদালতেও আশ্রয় গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুসারে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি অহেতুক ও মিথ্যা কারণ দেখিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিতে পারেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

ধন্যবাদ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ