শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড হাইকোর্টে বহাল

প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড হাইকোর্টে বহাল

ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালে বোমা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া ১০ আসামির সাজা বহাল রেখে আজ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল খারিজ করে এই রায় দেন আদালত।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আসামিরা যে অপরাধ করেছেন তা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসিরউদ্দিন। এছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আমূল্য কুমার সরকার।
গত ১ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আজ রায়ের দিন ধার্য রেখেছেন।
মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আদালত আজ রায়ে বলেছেন, সাক্ষিগণের সাক্ষ্য, জব্দকৃত আলামতসমূহের প্রমাণাদি, আসামিগণের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উচ্চ আদালতের সার্বিক পর্যালোচনায় আমরা মনে করি যে, ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক কৃর্তক প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে আসামিগণের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে কোনো আইনগত ভুল করেছে বলে মনে হয় না। কাজেই আমাদের নিকট উপস্থাপিত ডেথ রেফারেন্সটি গৃহীত হল। একই সঙ্গে আসামিদের দায়েরকৃত জেল আপিল, ফৌজদারী আপিল খারিজ করা হল।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ রায়ের বিষয়টি জানান। তিনি জানান, বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদের দন্ড বহাল রাখা হয়েছে। আসামি মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেন বিচারিক আদালত। এ আসমি রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেননি। তার বিষয়ে জেল আপিলও হয়নি। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে ১৪ বছরের দন্ড পাওয়া আরেক আসামি মফিজ ওরফে মহিবুল্লাহ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ আসামিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেই থেকে এই আসামি জেলহাজতে আছেন।
এই আসামি ইতিমধ্যে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেছেন। বিচারিক আদালত তাকে অত্র মামলায় দোষী সাবস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে। জেলকোড অনুযায়ী যদি এ আসামি তার উপর প্রদত্ত দন্ড ইতোমধ্যে ভোগ করে থাকেন অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে রায়ে।
বিচারিক আদালতের রায়ে ১৪ বছরের কারাদন্ড পাওয়া অপর আসামি আনিসুল ওরফে আনিসও ২০০০ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
তার বিষয়েও অনুরূপ আদেশ দেন আদালত।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রতি সম্মান জানিয়ে রায়টি বাংলায় ঘোষণা করেছেন আদালত ।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ আরো বলেন, আদালত তার পর্যবেক্ষণ বলেছে, বোমা পুঁতে রেখে হত্যা চেষ্টা এটা অত্যন্ত বর্বরোচিত ঘটনা। ১৫ আগস্টের পর সমগ্র জাতিকে পিছিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস করা হয়েছিল। এরপর যখন আওয়ামী লীগ, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব নেন, তিনি বাংলাদেশকে বহু এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত করার প্রয়াসে জঙ্গিরা একটা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা জঙ্গিবাদের মাধ্যমে এই দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চায়। রাষ্ট্রের যে অসাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন, সেটা তারা প্রতিহত করতে চায়।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এ আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়া সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। সমাবেশের দু’দিন আগে ২০ জুলাই কলেজ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী বোমার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে ওই কলেজের উত্তর পাশে সন্তোষ সাধুর দোকানঘরের সামনে থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের বোমাটি উদ্ধার করে। পরদিন ২১ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর থেকে ৮০ কেজি ওজনের আরও একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।
এসব ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলা দায়ের হয়। ২০১০ সালে মামলা দু’টি ঢাকার ২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০১৭ সালের ২০ আগস্ট দুই মামলার একটিতে ১০ আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার এক সপ্তাহের মাথায় ২৭ আগস্ট বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স, রায় ও মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসাহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ওমর।
জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
মামলায় আনা অভিযোগ বিষয়ে
মুফতি হান্নানের আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০০ সালের জুলাই মাসে জঙ্গি সংগঠন হুজির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থল ও হেলিপ্যাডের কাছে দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল।
উল্লেখ্য সমাবেশের আগে পুঁতে রাখা বোমা পুলিশ উদ্ধার করে। ফলে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়।