ধর্ম যখন সন্ত্রাসীর হাতিয়ার-১১: আজকের ভারতে অসহিষ্ণুতার উৎস সন্ধানে

প্রকাশিত: ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১

ধর্ম যখন সন্ত্রাসীর হাতিয়ার-১১: আজকের ভারতে অসহিষ্ণুতার উৎস সন্ধানে

।।|| হাফিজ সরকার ।। ||

১৮ এপ্রিল ২০২১ : (১ম অংশ) ধর্মের দুই বিপ্রতীপ দিকঃ
ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি , ধর্ম মানুষকে সৃষ্টি করেনি। প্রকৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে মানুষ অতিপ্রাকৃত শক্তিকে কল্পনায় ও ব্যবহারিক জীবনে স্থান দিয়েছে। মানব সমাজের এক অংশ যখন অলৌকিক শক্তির সঙ্গে সম্বন্ধের ওপর একচেটিয়া কর্তৃত্বের দাবিদার হয়ে উঠল, তখন গড়ে উঠল এক ধরনের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা। কালক্রমে তা পরিণত হলো ধর্মে। এই ধর্ম সব ভৌগোলিক ভূখণ্ডে অভিন্ন নয়, বরং স্থান বা কাল ভেদে তা ভিন্ন। শুধু তা নয়, একই ভূখণ্ডে একাধিক ধর্মের যেমন অস্তিত্ব থাকে, তেমনি একই ধর্মের মধ্যে থাকে নানা সম্প্রদায় (Sect)। এসব ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মধ্যকার সম্পর্ক সব সময় সমন্বয়পূর্ণ হয়না, বরং হয় বৈধতামূলক। যেহেতু ধর্ম মানুষের বিশ্বাসের জগৎকে নিয়ন্ত্রিত করে, তাই সমাজে আধিপত্যবাদী শ্রেণীগুলো নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে। তখন বিভিন্ন ধর্মের মধ্যকার পার্থক্যগুলো হয়ে ওঠে অলঙ্ঘনীয়।এভাবে বিভিন্ন ধর্মগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতার একটা বাস্তব ভিত্তি গড়ে ওঠে। ইতিহাসে প্রতিটি পর্বে সমাজে আধিপত্য করে এমন ধারনাগুলো আসলে আধিপত্যবাদী শ্রেণীগুলোর ধারনা। ধর্ম যদি এই শ্রেণীগুলোর আদর্শ হয়ে ওঠে, তাহলে সমাজকে সেই অলীক ধারনা (illusion) নিয়েই বাঁচতে হয়। এই বিভ্রান্তি (illusion) যেহেতু মানুষের বিশ্বাসের জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এর প্রভাব খুবই গভীর ও শক্তিশালী। আধিপত্যবাদী শ্রেণীগুলোর মধ্যেকার সংঘাতে ধর্ম হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতা ও সংঘর্ষের একটি ক্ষেত্র এবং অসহিষ্ণুতার চারণভূমি। কোন ধর্মই এর বাইরে থাকতে পারে না। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যাদের আমরা সাধারণত অহিংসার বিশ্বাস বলে জানি, তারাও মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের (সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক) ওপর হিংসা আর জবরদস্তি প্রয়োগ করছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও হিংসাশ্রয়ী হয়ে পড়েছে।

ধর্মের মহত্ত্বঃ

ধর্মের আর একটি দিকও অবহেলা করার নয়। যেহেতু তা মানুষের বিশ্বাসের জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার কাছেই মানুষ তার অসহায়তার আশ্রয় খুজে নেয়। এভাবে ধর্ম হয়ে ওঠে “নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস”। শুধু তাই নয়, ধর্ম মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের কথা তুলে ধরে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ায়। এই প্রসঙ্গে লিবারেশন থিওলজিস্টদের কথা বলা যেতে পারে। এরা প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকায়, অন্য বহু দেশেও সক্রিয়। এরা বামপন্থী-খ্রিস্টান, সামাজিক অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এরা নিয়ত সংগ্রাম করেন। ক’বছর আগে এই মতের কয়েক হাজার পাদরি আমেরিকার বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিছিল করেছিলেন। বস্তুত লিবারেশন থিওলজিস্টরা নিজেদের সাম্যবাদীই বলেন। আমাদের দেশে ভক্তি ও সুফি আন্দোলন সবাইকে ঐক্য সূত্রে বাঁধবার চেষ্টা চালিয়েছিল। ধর্মের এই দিকটি যদি সর্বজনীন হতো তাহলে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে এতখানি বিভেদের প্রাচীর থাকত না; সবাইকে নিয়ে এক মিলনাত্মক সত্তা গড়ে উঠত। আর তা সম্ভব হলে ধর্মের কোন প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং ধর্মের মধ্যে মহত্ত্ব ও সঙ্কীর্ণতা, এই দুটি দিকই বিদ্যমান; আছে সহিষ্ণুতা ।

ধর্ম ও হিংসাঃ

হিন্দুধর্ম কোন ব্যতিক্রম নয়। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা ছিল। বিশেষ করে পাঁচটি সম্প্রদায়ের কথা বলা যায়, যেমন শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর ও গানপত্য। দক্ষিণাত্যে শৈব বা শাক্তদের মধ্যে রেশারেশির অসহিষ্ণুতা বৈরিতায় পৌঁছেছিল। হিন্দুরা বহু বৌদ্ধবিহার, সঙ্ঘারাম ও মঠ ধ্বংস করেছে, নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার জন্য। পরে মুসলমান রাজশক্তি যখন জোর করে ধর্মান্তরকরণ করা শুরু করেছে বা ইংরেজ রাজশক্তি বলপুর্বক ধর্মান্তকরণ করেছে, তখন এসব ধর্মের সঙ্গে হিন্দুদের ঘৃণার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যদিও হিন্দু ধর্ম একটি সংহত নয়,
এর কোন আদি প্রবক্তা নেই, কোন একটি কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ নেই এবং কোন কেন্দ্রীয় ধর্মসংগঠন নেই। ফলে পরমত সম্বন্ধে এর কোন নির্দিষ্ট মনোভাব নেই। না প্রতিরোধের, না সহিষ্ণুতার।ব্রাহ্মণ্য পুঁথিপত্র ঘাঁটলে দেখা যায়, যারা ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবাধারার বিরোধী, তাদের প্রতি এদের মনোভাব ছিল অবজ্ঞাপূর্ণ । তাদের (বিরুদ্ধবাদীদের) শুধু নাস্তিক পাষণ্ডই বলা হয়নি, তাদের বর্ণনা করা হয়েছে প্রতারণাপূর্ণ। প্রাচীন হিন্দু রাজতন্ত্রগুলো কোনভাবে অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, রাজধর্মের ন্যায্যতা দিতে গিয়ে যুদ্ধ ও হিংসাকে গৌরবান্বিত করা হয়েছে। প্রাক-ইসলামিক প্রাচীন ভারতীয় রাজত্বগুলোতেও বড়মাপের সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজন হয়েছিল। এমনকি মহামতী অশোকের প্রত্যাশা ছিল যে, তার বংশধরেরা অহিংস পথই গ্রহণ করবে, আর হিংসায় যদি জড়িয়ে পড়তে হয় তাহলে শাস্তিদানে ক্ষমাশীল হতে হবে। সুতরাং এটিকে “নিয়ন্ত্রিত হিংসা” বলা যায়। গীতা কি বার্তা বহন করে, হিংসা না অহিংসার? এখানে যুদ্ধকে যুক্তিযুক্ত শেষে যুধিষ্ঠির রাজত্ব পরিত্যাগ করে বনবাসে যাওয়ার সঙ্কল্প ঘোষণা করেছেন। এভাবে হিন্দুশাস্ত্র, সাহিত্য দ্বৈত অবস্থান গ্রহণ করেছে, যেখানে হিংসার এক ন্যায্যতা খোঁজা হয়েছে।

কখনওই উদার নয়ঃ

এছাড়া যে ধর্মে জাতপাত ব্যবস্থার মতো এক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতাকে পবিত্রীকৃত করা হয়েছে, সেই ধর্মের মধ্যেই তো অন্তর্নিহিত রয়েছে অসহিষ্ণুতা ও যক্তিু হীনতার বীজ। অবশ্য কোশাম্বি মনে করেন, হিন্দুধর্ম জাতপাত ব্যবস্থায় হিংসার প্রয়োগকে কমিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, ভাগ্যবাদী সমাজ জাতপাতগত বিভাজনকে চোখ বুজে মেনে নিয়েছে। যাই হোক না কেন, যদিও কোন ধর্ম নিজের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় এতখানি হয় কখনওই সাধারণভাবে উদার হতে পারে না।

অগ্রগতির অন্তরায়ঃ

ইউরোপের আলোকায়ন মানুষের চিন্তার জগতে যুক্তির যে প্রভাব ঘটিয়েছিল, আমাদের সমাজে তা ঘটেনি। সুতরাং এই সমাজের ধর্মে (হিন্দুধর্ম) মধ্যযুগীয় অন্ধকারময়তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা বিদ্যমাণ। বর্ণহিন্দুরা এই ধর্মকে আধিপত্য কায়েম রাখার কাজে ব্যবহার করেছে; উপনিবেশবাদীরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বিভাজিত করেছে; এবং এই ধর্মকেই উপনিবেশ-উত্তর ভারতে কর্পোরেটপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে। এইভাবে ধর্ম হয়ে উঠেছে দেশের অগ্রগতির পথে অন্তরায়।

জাতি-রাষ্ট্র ও ধর্মঃ

উপনিবেশবাদী-বিরোধী সংগ্রামের কালে আমাদের দেশ জাতি-রাষ্ট্র গঠনের মুখোমুখি হলো।এই রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান সমস্যা দাঁড়াল দেশের সব অংশের অধিবাসীদের মধ্যে ঐক্যের একটি যোগসূত্রের সন্ধান করা। চটজলদি তেমন একটা যোগসূত্র পাওয়া দুষ্কর। কারণ প্রাক-পুঁজিবাদী কাঠামোর সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইউরোপের বুর্জোয়া জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যে প্রাথমিক আধার পেয়ে গেছিল, তেমন আধার এই দেশের জাতীয় আন্দোলনের নাগালের বাইরে ছিল, তাই ধর্মকে সাধারণ ভিত্তি করেই এগুতে হয়েছে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তাই নরম হিন্দুত্বের পথ অনুসরণ করেছিল। যারা জাতীয় আন্দোলনে চরমপন্থী ধারা অনুসরণ করেছেন, তাদের অনেকের মধ্যে উগ্র-ধর্মীয় ভাবনার প্রভাব ছিল। আবার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের একসূত্রে গ্রথিত করার একটা প্রয়োজনও দেখা দিয়েছিল। গান্ধী এই সংকট থেকে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন। তিনি হিন্দুধর্মের অনুরাগী ছিলেন, গীতার একনিষ্ঠ অনুরক্ত। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি নন, কিন্তু তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে।হিন্দু ও ইসলামের ঐক্যে বিশ্বাসী। গান্ধীর এই ভাবাদর্শ গোটা দেশকে জাতীয়বাদী আবগে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিল। কিন্তু এ দেশের জাতীয়বাদী আন্দোলন রাজনীতিকে পুরোপুরি ধর্ম থেকে পৃথক করতে পারেনি। ব্রিটিশরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রাজনৈতিক দুর্বলতার দিকটি বুঝতে পেরেছিল। তারা মুসলিমদের হিন্দু বিরোধিতার দিকটি উসকে দিয়েছিল। ফলও তারা পেল হাতেনাতে। মুসলিম রাজনীতির একটি স্বতন্ত্র ধারা গড়ে উঠতে লাগলো।
এই প্রক্রিয়ায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাড়তে লাগাল। কিন্তু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সামনের সারিতে উঠে আসতে পারল না। এতদিনে কংগ্রেস ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কর্তৃত্বের আসনে এসে গেছে। নরম হিন্দুত্ব, গান্ধীপন্থা, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর কংগ্রেসের প্রভাব কিছুটা সব ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা নির্ধারণ হয়ে উঠতে পারল।
এইভাবে কংগ্রেস সারা দেশের সব অংশের ও সব বর্গের মানুষের সঙ্গে একধরণের যোগসূত্র গড়ে তুলতে সমর্থ হলো। এমন কি লীগপন্থীরাও এই ধারা থেকে নিজেদের বিযুক্ত করে নিয়ে মুসলিম জনসমাজের ওপর তাদের প্রভাব কায়েম করতে পারেনি।

উগ্র হিন্দুবাদী রাজনীতির প্রসারঃ

নেহরুবাদী ধারা জাতীয় আন্দোলনের একটি স্বতন্ত্রধারা, এই অর্থে যে তিনি ছিলেন যক্তিুবাদী ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিনিধি। ইউরোপীয় আলোকায়নের প্রভাব তার ব্যক্তিত্বে জোরালোভাবে
কার্যকর ছিল। তার বিজ্ঞানমনস্কতা, শিল্প ও প্রযুক্তিগত বিকাশের পক্ষপাত, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দানের মধ্য দিয়ে তিনি আধনিকু ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে এমন একটা সংগঠনকে চালতে হয়েছিল, যা প্রাক-আধুনিকতা থেকে মুক্ত খর্বিত হয়নি; থেকে গেলে সেই মানসিকতা, যা যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, নানা অলৌকিক বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত। এভাবে আধুনিকতার বৈভব প্রাক-আধনিকতার জঞ্জালে আটকা পড়ে গেল। নেহরু-পর্বের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই পুরাতন সমস্যা এসে হাজির হলো, তাহলো দেশের বহুধা বিভক্ত নাগরিকদের ঐক্যের জন্য সাধারণ একটা যোগসূত্রের অন্বেষণ। উপনিবেশ-উত্তর সমদর্শিতা(equity) বা উন্নয়ন প্রচেষ্টা এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি, যাতে সবাই এক ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষে অংশীদার হয়ে পড়ে। কংগ্রেস ব্যবস্থা যা এতকাল রাজনৈতিক ঐক্যের নির্দেশক ছিল তার ভিত আলগা হতে শুরু করল। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এলো উগ্র হিন্দুবাদী রাজনীতি। জাতীয় রাজনীতি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিতে শুরু করল।

সার্বিক প্রশ্রয়ঃ

এই প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারটা সর্বাত্মক, রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসন এমন কী বিচার বিভাগ সবাই অংশীদার। তার থেকেও বড় কথা যুক্তির থেকে মিথ যে এই সমাজে সর্বজনগ্রাহ্য, তার চিহ্ন খুব স্পষ্ট হয়ে উঠল। বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমি বিতর্ক এর সব থেকে উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরণ। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে একটি মুর্তি বাবরি মসজিদের মধ্যে বসানো হলো। পণ্ডিতনেহরু নির্দেশ দিয়েছেন মুর্তিটি বের করে নিতে, কিন্তু তার নির্দেশ পালিত হয়নি প্রশাসনে হিন্দুবাদীদের প্রভাবের জন্য। রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরের তালা খুলে দেওয়া হলো, ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে শিলান্যাস করতে দেওয়া হলো। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়, তখন নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী। তিনি মারা যান ২০০৬ সালে। তার মৃত্যুর পর তার লিখিত গ্রন্থ Ayodhya; 6 December 1992 প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকটি পড়লে বোঝা যায় কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দুবাদীদের প্রভাব কতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় যুক্তিশীলতার বদলে বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাহলে তো মিথ বা বিশ্বাস স্বীকৃত বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। কোর্টের রায় কোন পক্ষকেই জমির একমাত্র স্বত্বাধিকারী বলে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু এই রায়ের ভিত্তি হলো এক ধর্মীয় চরিত্রের জন্মস্থান হিসাবে কিছু মানুষের সতত বিশ্বাস। ঘটনাচক্রে এই রায় রামজন্মভূমি আন্দোলনের আদর্শভিত্তিকে বৈধতা দান করেছে। আরও একধাপ এগিয়ে বলা যায়, এই রায় বাবরি মসজিদ ভাঙার বৈধতা প্রদান করেছে। হিন্দু পত্রিকায় এক নিবন্ধে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের রায়ের নির্ভুলতা ধরে নিলে এটা দাঁড়ায় যে ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজের তলায়। অথবা ১৫২৮ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল মন্দিরের ভগ্নস্তূপের ওপর।

(চলবে)