স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মসূচি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাহিদাকে প্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ সিপিডির

প্রকাশিত: ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২১

স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মসূচি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাহিদাকে প্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ সিপিডির

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২১ : চলমান করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করতে কোভিড ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাহিদা মেটানো ও প্রকৃত কৃষকদের সহায়তা প্রদানকে প্রাধিকার দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বৃহস্পতিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় এসব সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সভায় সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য রাখেন।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, কোভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রান্তিক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় চারটি খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধিকার দিয়ে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ও রাজস্ব কৌশল নেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
এই চারটি খাত হলো-কোভিড স্বাস্থ্যসেবা, নতুন করে যারা দরিদ্র হয়েছেন তারাসহ সামগ্রিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাহিদা মেটানো ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রকৃত কৃষকদের সহায়তা প্রদান এবং কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত বড় প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো।
তিনি বলেন, গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন প্রবনতা থেকে বেরিয়ে এসে কোভিড বাস্তবতায় প্রাধিকার খাত সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এর আলোকে বরাদ্দ দিতে হবে এবং করকাঠামোর কৌশলও সেভাবে প্রস্তুত করা জরুরি।
সিপিডির এই গবেষক বলেন, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোভিড ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে টিকা প্রাপ্তি আরও সহজ করা, অক্সিজেন সরবরাহের পর্যাপ্ততা তৈরি ও আইসিইউ বেড স্থাপনে অধিক মনোযোগি হওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। কোভিড ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব তহবিল আসছে, সেগুলোকে আরও দক্ষভাবে ব্যবহার করা এবং কোভিড সম্পর্কিত ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জমাদি আমদানির ক্ষেত্রে কর পরিহারেরও পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেই অনুযায়ী টিকা প্রাপ্তি উৎস থেকে শুরু করে অন্যান্য কৌশল গ্রহণের সুপারিশ করেন।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য সরাসরি নগদ সহায়তা প্রদান কর্মসূচিকে ভাল উদ্যোগ অভিহিত করে সংস্থাটি বলছে, নতুন করে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর ব্যপ্তি আরও বাড়াতে হবে এবং এই কর্মসূচি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ কৌশলের বিষয়ে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি বেশ ভাল। কোভিডের মধ্যে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভালই বলতে হবে। তবে আরও বেশি রাজস্ব পাওয়ার কথা ছিল, সেটা পাচ্ছি না। কর ফাঁকি হচ্ছে। তাই আগামী বাজেটে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করে ফাঁকি রোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে ব্যক্তিখাতের করহার সর্বোচ্চ ধনীদের জন্য ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ শতাংশ করা হয়। সেটা আবারও ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে যাদের সম্পদ বেশি আছে তাদের কাছ থেকে বেশি কর নেয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদেরও এমন নীতি নেয়ার প্রয়োজেন, না হলে আমরা কোভিডের অভিঘাত মোকাবেলা করতে পারব না।
কর ফাঁকি রোধে বিভিন্ন লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নাম্বারের পাশাপাশি কর সার্টিফিকেট প্রদান বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
এছাড়া সিপিডি এবারও বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বন্ধের সুপারিশ করেছে। একইসাথে খাদ্য পণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে অগ্রিম কর পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহার বহুলাংশে বেড়ে গেছে। অপরদিকে মানুষের আয়ও কমে গেছে। তাই কোভিড পরিপ্রেক্ষিতে অত্যাবশকীয় এই সেবা আরও সহজ করতে হবে। এর জন্য তিনি মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ রহিত করার সুপারিশ করেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন কোভিড অভিঘাত মোকালোয় কৃষিখাত দারুণভাবে সহায়তা করছে। তবে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা সহায়তা সম্প্রসারণ এবং প্রণোদানার আওতায় পাওয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা তিন বছর করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ঋণ যেন প্রকৃত কৃষকরা পায়, সেদিকে অধিক মনোযোগি হতে হবে।
এর পাশাপাশি কোভিড প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিবর্তে বৈদেশিক উৎসের ঋণের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ করেন ফাহমিদা খাতুন।
অন্যদিকে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কোভিড অভিঘাত মোকাবেলায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তায় ২ বছরের জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দেন।