অবিলম্বে জনগণের সকল অংশকে আগামী তিনমাসের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে : ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২১

অবিলম্বে জনগণের সকল অংশকে আগামী তিনমাসের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে : ওয়ার্কার্স পার্টি

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১১ জুন ২০২১ : “করোনা প্রতিরোধে অবিলম্বে জনগণের সকল অংশকে আগামী তিনমাসের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে এবং করোনা সংক্রমণ রোধে এই মুহুর্তে ভ্যাকসিনই হচ্ছে প্রধান বিকল্প। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে অন্য অনুসঙ্গগুলো প্রতিপালন একই সঙ্গে জরুরী। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রথমেই ভ্যাকসিন এনে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারলেও এখন ভ্যাকসিন আনা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারি মহল থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।”

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আজ দিনব্যাপী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ভার্চুয়াল (জুম) মাধ্যমে কমরেড রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করোনা অতিমারী মোকাবেলায় জীবন ও জিবিকা রক্ষায় জনগণ পাশে দাঁড়াতে ১৮দফা নির্দেশনা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, ভ্যাকসিন সংগ্রহে মাত্র একটি উৎসে নির্ভরতা, একক ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনায় বাধা প্রান এবং ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি ও কুটনীতি সরকারের প্রাথমিক সাফল্যকে ম্লান করে দেয়নি কেবল, জনগণের জীবন ও জীবিকাকেও ঝুঁকিতে ফেলেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, মানুষের জীবনই প্রধান বিষয়; সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও অদক্ষতা আরেকবার প্রকট হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। সীমান্ত জেলাগুলোতে যেখানে বহু আগেই লকডাউন প্রয়োজন ছিল, সেখানে তা না করায় এখন সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রির নির্দেশ থাকার পরও এখনও অর্ধেকের বেশী জেলায় ‘আইসিউ’র কোন ব্যবস্থানেই। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্র্ণই ভেঙ্গে পড়বে। প্রস্তাবে, করোনা সংক্রমণে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উদ্ধার পেতে জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহবান জানানো হয়। অতিমারির প্রভাবে বিধ্যস্থ দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের জন্য খাদ্য সহাতা প্রদান, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি সহজিকরণ, আগামী ছয়মাস পাঁচহাজার টাকা নগদ সহায়তা প্রদান ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সার্বজনীন পেনশন চালুর দাবী জানানো হয়।
সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় কমিটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে।
শোক প্রস্তাবে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির প্রবীণনেতা, সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মীর দেলোয়ার হোসেন, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য কমরেড গোলাম রাব্বানী মুকুল, রংপুর জেলার পার্টি সভ্য কমরেড মকবুল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহর কমিটির সদস্য কমরেড পরিতোষ ঘোষ, পাবনা জেলার বেড়া থানার পার্টি সদস্য কমরেড আব্দুল বাতেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি)’র প্রেসিডিয়ামের প্রাক্তন সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোর্শেদ আলী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাড. আব্দুল মতিন খসরু, বিশিষ্ট কলামিস্ট, গবেষক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালিদ, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মিতা হক, একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি, সাবেক মহাপরিচালক, লেখক, গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কিংবদন্তী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী সরওয়ার, একুশে পদক প্রাপ্ত দেশবরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও খুলনা জেলার পার্টি সভ্য বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক, সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির পুত্র সাংবাদিক আশিস ইয়েচুরি ও বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও শক্তিমান সাহিত্যিক কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে। এছাড়া সম্প্রতি ইসরাইলী সেনাদের হামলায় নিহত ও আহত প্যালেষ্টাইনের নাগরিকদের প্রতি এই সভা গভীর শোক ও সংহতি জানায়।
সভায় আলোচনায় অংশ নেন কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড সুশান্ত দাস, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড নুর আহমেদ বকুল, কমরেড কামরূল আহসান, কমরেড ইব্রাহিম খলিল, কমরেড দিপঙ্কর সাহা দিপু, কমরেড এড, নজরুল ইসলাম, কমরেড নজরুল ইসলাম কমরেড এড. লোকমান হোসেন, কমরেড জাকির হোসেন রাজু, কমরেড আব্দুল মজিদ, কমরেড সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কমরেড মুহিবুল্লাহ, কমরেড এড. এন্তাজ বাবু, কমরেড দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, কমরেড এড. ফিরোজ আলম, কমরেড এড, কাজি মাসুদ, কমরেড কিশোর রায়, কমরেড গোলাম নজব চৌধুরী পাওয়ার, কমরেড তপন রায়, কমরেড রুহুল আলম মাষ্টার, কমরেড বেনজীর আহমেদ, কমরেড মুর্শিদা আক্তার নাহার প্রমুখ।
সভায় করোনা মোকাবেলা এবং জনগণের জীবন ও জিবিকা রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়াতে ১৮ দফা যে নির্দেশনা কর্মসূচি প্রদান করা হয়েছে তা প্রতিপালনে পাটির সকল স্থরের নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান জানানো হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ‘ভলেন্টিয়ার বাহিনী’ গঠন করে পার্টি স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রমে নেমে পড়েছে তা অনুসরণ করে অন্যন্য জেলাতেও এই কর্মসুচি গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি সকল জেলা কমিটিকে আহবান জানাচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমবায়ের মালিকানাকে চালকের আসনে বসানোর সংবিধানে বিধান লিপিবদ্ধ থাকলেও করোনাকালেও কৃষি বাজেট প্রস্তাবনায় সেই বিধান সংরক্ষণ করা হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত বছর মার্চ মাস থেকে সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।
জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়লেও প্রকৃত হিসেবে উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিক কৃষক সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে এবং দেশে করোনার প্রকোপে প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, দেশে দারিদ্রাতা ও বৈষম্যের হার বেড়ে চলছে।
দীর্ঘকাল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশটিকে মহামারি শেষে আবার শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরত আনা সহজসাধ্য হবে না। অনেক শিক্ষার্থীদের বাল্য বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। শিশু শ্রম বেড়ে যাচ্ছে। ঝড়ে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী।
স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, খাদ্য-কর্মসংস্থান এবং কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে; গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; শিক্ষাখাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ অথবা জাতীয় বাজেটের ২৫% বরাদ্দ দিতে হবে, উন্নয়ন বাজেটে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে; মাঝারি, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক শিল্পোদ্যোক্তাদের পরিকল্পিতভাবে প্রণোদনা দিতে হবে; বেকারদের কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার এবং আত্মকর্মসংস্থানে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে; নিম্নআয়ের আড়াই কোটি পরিবারের জন্য আগামী ছয় মাস প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নগদ অর্থ প্রদানে বরাদ্দ থাকতে হবে।”