রাজধানীসহ সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২১

রাজধানীসহ সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে

ঢাকা, ০২ জুলাই ২০২১ : কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ রোধকল্পে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। কঠোর বিধি নিষেধ বাস্তবায়নে প্রথম দিনের মতো আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনেও মাঠে তৎপর রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে ও পথচারীদের দাঁড় করিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান আজ সকালে জানান, প্রথম দিনের মতো আজও অতিপ্রয়োজনীয় যানবাহন, রিকসা ও পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি। ডিসি জানান, সকাল ৬টা থেকে পুলিশ ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় আজ রাস্তায় তেমন লোকজন দেখা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রথমদিনের মতো রাজধানীতে সব ধরনের বিপনি বিতান, অলিগলির মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার ভেতর থেকে খোলা জায়গায় বসানো হয়েছে।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু ও ৮ সহস্রাধিক ব্যক্তির আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই তথ্যে জনমনে কিছুটা হলেও শঙ্কা বেড়েছে। সে কারণে শুক্রবার সকালে সড়কে লোকজন কম দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা আছে, রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে আজ সকালে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। ছুটির দিন সকালে নগরবাসীর অনেকেই বাজার করে থাকেন। কিন্তু সকালে লাগাতার বৃষ্টি থাকায় অনেকেই ঘরের বাইরে বের হননি।
লকডাউন বান্তবায়নে এবার সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস সাত দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে।
সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
চলমান লকডাউন অমান্য করে প্রথম দিন অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে রাজধানীতে পুলিশের আটটি বিভাগ অভিযান পরিচালনা করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালানো এসব অভিযানে ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৫৮ জনকে নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২১২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। মুচলেকা দিয়েছেন ৩৯১জন।
এদের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে আটজনকে।
ডিএমপি’র মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের এডিসি মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, গতকাল মোট জরিমানা করা হয়েছে চার লাখ ৯২ হাজার ৫০৭ টাকা। এর মধ্যে ট্রাফিক বিভাগ চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করেছে। মামলা হয়েছে ২৭৪টি। গাড়ি আটক করা হয়েছে ছয়টি। রেকারিং করা হয়েছে ৭৭টি।
তিনি জানান, প্রথম দিনের মতো আজও সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে সকাল থেকে একযোগে ডিএমপি’র ক্রাইম, ট্রাফিক ও গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে কাজ করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিভাগেই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সকাল থেকে রাজধানীর রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করছে পুলিশ।
এর আগে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে সরকার ঘোষিত বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
বুধবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সব ইউনিট প্রধানদের এ নির্দেশনা দেন তিনি।
আইজিপি সরকারি বিধি-নিষেধ চলাকালে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ও অনুরোধ করেন।
১ জুলাই থেকে রাজধানীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বের হলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
করোনাভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধকল্পে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সপ্তাহব্যাপী জারিকৃত এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছে আইন শৃংখলা বাহিনী।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সাথে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। লকডাউন কার্যকর করতে শুক্রবার সকাল থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পৌর এলাকা ছাড়াও শহরতলী ও গ্রামের বাজারগুলোতে টহল দিচ্ছে। এসময় তারা হ্যান্ড মাইকে মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য সচেতন করছেন।
যদি বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে হয়, তাহলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলা হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকেই শহরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। শুধু খোলা রয়েছে কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার। খাবার দোকানগুলো থেকে শুধু পার্সেল বিক্রি করা হচ্ছে।
প্যাডেল চালিত রিকশার সাথে কিছু মোটরচালিত অটো রিকশা ও টমটম চলাচল করছে।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুস ছালেক বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ পথে ছয়টি স্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। আমাদের পুলিশের তিনটি টহল টিম রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি রয়েছে।
৯টি ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা বিট পুলিশ সদস্যরা গ্রাম অঞ্চলে কাজ করছে। ’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে আমরা মাঠে রয়েছি। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনও আমাদের নিকট সন্তোষজনক মনে হয়েছে। মানুষ সরকারের বিধিনিষেধ মেনে চলছেন। ’

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ