সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২১
লালমনিরহাট প্রতিনিধি, ২৭ জুলাই ২০২১ : লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমে গেলে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গৃহহীন হয়ে পড়ছে শত শত পরিবার। তিস্তা তীরবর্তী মানুষেরা এখন আর ত্রাণ চায় না। তারা চায় তিস্তা নদীকে নিয়ে সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীকে ঘিরে সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন তিস্তাপাড়ের লোকজন।
সম্প্রতি জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চর সির্ন্দুনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় তিস্তা নদীর ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য। প্রতি মুহূর্তে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গৃহহীন হচ্ছে অসংখ্যা পরিবার। সির্ন্দুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ২টি মসজিদ হুমকির মুখে।
অনেকেই এক বছরেই দুই-তিন বার তাদের বসতবাড়ি নদী ভাঙনের কারণে সড়িয়ে নিয়ে গেছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করছেন। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করছেন।
এছাড়া ৫/৭ বছর আগে যাদের কয়েক একর ফসলি জমি ছিল, যাদের বাড়িতে প্রতিদিন ৪/৫ শ্রমিক দিনমজুর কাজ করতো, বছরে কয়েকশ’ মণ ভুট্টা ও ধান উৎপাদন করতো; নদী ভাঙনের কারণে তারাই আজ অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি করেন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে।
তিস্তাপাড়ের ওই এলাকায় লোকজন বলেন, আমাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে পুনর্বাসনের জন্য আমাদের দুই বান্ডিল টিন, ৬ হাজার টাকার সাথে কিছু চাল-ডাল দেয়া হয়। আমরা ওইসব ত্রাণ চাই না। আমরা চাই তিস্তা নদীকে ঘিরে সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমাদের ভাগ্য আমরাই পরিবর্তন করতে পারবো।
ওই এলাকার দুই জন ইউপি সদস্য জানান, এ বছরে সির্ন্দুনা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে দুই শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এতে প্রায় আধা কিলোমিটার ফসলি জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে। তিস্তাপাড়ের মানুষ এখন আর ত্রাণ চায় না। তারা চায় তিস্তা নদীকে নিয়ে সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীকে ঘিরে সকল সমস্যার সমাধান হবে- এমনটি মনে করছেন তিস্তাপাড়ের লোকজন। তাদের মতে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন নদী ভাঙন কমে যাবে, অন্যদিকে হাজার হাজার একর ফসলি জমি বের হবে। এতে ওই এলাকার লোকজনের কৃষিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে এক হাজারের বেশি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। গৃহহীন পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনরকম বসবাস করছে। তাদের পুনর্বাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরল আমিন জানান, তার ইউনিয়নের চর সির্ন্দুনা গ্রামে ৩ শতাধিক পরিবার তিস্তা নদীর ভাঙনের মুখে। আশ্রয় দেয়ার মতো উঁচু স্থান তার ইউনিয়নে আর নেই। ইতোমধ্যে অসংখ্য বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। তাদের পুনর্বাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া তিস্তা নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, আমি নদী ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D