রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত: ৮:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ : রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহিব্বুল্লাহ অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ এর ডি-৮ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক শিহাব শিহাব কায়সার খান।

মুহিবুল্লাহ ‘রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যাান ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন বলে মনে করা হয়।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক শিহাব শিহাব কায়সার খান জানিয়েছেন, এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা তাকে ৫ রাউন্ড গুলি করে। তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুতুপালয়ের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুহিবুল্লাহর মৃতদেহ উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ১৫ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ বা এআরএসপিএইচ। স্থানীয় বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গেও এআরএসপিএইচ সখ্য গড়ে তুলে। ধীরে ধীরে সংগঠনটির প্রধান পাঁচ রোহিঙ্গা নেতার মধ্যে একজন হয়ে উঠেন মুহিবুল্লাহ।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ ১৯৯২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তখন থেকেই সে রয়েছে টেকনাফ অঞ্চলে।

দেশের বাইরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মহিবুল্লাহ বিভিন্ন উপায়ে সফর করেছেন একাধিকবার। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। সুস্পষ্টভাবে মুহিবুল্লার আজকের অবস্থানের মূল উত্থান হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৮ সালে ইউএনএইচসিআরকে সংযুক্ত করার পর। রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা থেকেই মদদ পায় মুহিবুল্লাহর সংগঠন এআরএসপিএইচ।

ইংরেজি ভাষা ও রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন বিদেশিদের। ২০১৮-এর জুলাইয়ে র‌্যাব একবার মুহিবুল্লাহকে আটক করে উখিয়া থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশে কোনো প্রকার রেকর্ড ছাড়াই তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরপর গত এক বছরে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ করানো হয়েছে।

এই মুহিবুল্লাই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানেও যোগ দেন মুহিবুল্লাহ।