সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে সনাকের মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১০:২০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২১

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে সনাকের মানববন্ধন

শ্রীমঙ্গল, ২৮ অক্টোবর ২০২১ : চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এবং সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে টিআইবি কর্তৃক পরিচালিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর আয়োজনে অদ্য বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর ২০২১) ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সনাক সভাপতি কবি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্যের সভাপত্বিতে শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজার রোডস্থ ১ নং পুলের নিকট মানবন্ধন কর্মসূচি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

টিআইবি’ শ্রীমঙ্গল এর এরিয়া কো-অর্ডিনেটর পারভেজ কৈরী’র সঞ্চালনায় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সনাক সদস্য জহর তরফদার।
বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান; সনাকের শাহ আরিফ আলী নাসিম, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি ও সনাক সদস্য জিডিশন প্রধান সূছিয়াং, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও স্বজন সদস্য সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, সাংস্কৃতিক কর্মী নিতেশ সূত্রধর, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী এস.কে দাস সুমন, উন্নয়নকর্মী পংকজ ঘোষ দস্তিদার, সুনীল কুমার মৃধা, ব্যবসায়ী সুশীল বণিক, বাবুল সূত্রধর, চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী জাবেদ ভুঁইয়া প্রমূখ।
সনাক সভাপতি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, সম্প্রতি শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লার একটি পূজামন্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, মন্দির-পূজামন্ডপ, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক। ভুক্তভোগীদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তড়িৎ পদক্ষেপ নিলে সহিংসতার মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা এড়ানো যেত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) শ্রীমঙ্গল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাচ্ছি সনাকের পক্ষ থেকে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সনাকের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ তুলে ধরছি :
১. সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সমস্ত ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান;
২. সহিংস ঘটনার যেন বিস্তৃতি না ঘটে সেজন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক তাৎক্ষণিক জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ;
৩. শাহাবুদ্দিন কমিশন কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং এতে উল্লেখিত সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ;
৪. সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করতে হবে এবং প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিপূর্ণ নিরপেক্ষতা ও পেশাগত উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সহিংসতা রোধে শিক্ষাক্রমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয় পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ;
৬. ভবিষ্যতে যেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় সেজন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গলের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ,সাংবাদিকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীগণ। অনুষ্ঠাানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইয়েস গ্রুপ, সনাক শ্রীমঙ্গল।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এবং সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, “সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলা-মন্দির ভাঙ্গচুরকে কেন্দ্র করে দোষারোপের রাজনীতি ঐসব ঘটনাবলীর সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত পরিচয়কেই আড়াল করবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ করে চলার নীতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অবাধ প্রচার, ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং সর্বোপরি অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বিস্তার ঘটিয়েছে তাতে কেউই দায়মুক্ত নয়।
কুমিল্লার পুজামন্ডপের ঘটনায় ধৃত ইকবালকে ‘ভবঘুরে’ আখ্যা দিয়ে তার অপরাধ বা পরিস্থিতিতে লঘু করে দেখার অবকাশ নাই। এখন দেখা যাচ্ছে কোরান অবামাননার ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি হিন্দু নয়, মুসলমান। কিন্তু এখন আর তথাকথিত ধর্মপ্রেমীদের মুখে কথা নাই। আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি সমস্ত ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত, যে কারণেই ঐ ধৃত ব্যক্তির পিছনে কারা আছে সেটা উদঘাটন করতে হবে।