একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই

প্রকাশিত: ১০:০১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২১

একুশে পদকপ্রাপ্ত গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ৩০ নভেম্বর ২০২১ : একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

Manual4 Ad Code

আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর ২০২১) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতালের ডিউটি অফিসার ডা. অভিজিৎ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Manual5 Ad Code

গত ৭ অক্টোবর পেটের ব্যথা নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন জাতীয় এই অধ্যাপক। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফুসফুসে পানি ধরা পড়ে তার। তখন থেকে তিনি সেখানে বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি মেডিসিন) বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেনের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা রফিকুল ইসলামকে ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। পরে তাকে রাজধানীর এভার কেয়ারে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার জন্য ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।

বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। ৮৭ বছর বয়সী এই লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময়ের দুর্লভ কিছু আলোকচিত্রও তুলেছিলেন তিনি। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই লেখা এবং সম্পাদনা করেছিলেন তিনি।

Manual1 Ad Code

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম একুশে পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকেও ভূষিত হয়েছিলেন তিনি।

তিনি একসময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে।

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিবৃত্তির উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম উপাচার্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। ২০২১ তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি পদে যোগদান করেছিলেন। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মানুষের আদর্শ হিসেবে তিনি বাঙালি জাতির প্রজ্ঞা এবং চেতনায় স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথিতযশা শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা এদেশের প্রগতিশীল শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃত। তাঁর সাহিত্যিক অবদানের ছত্রে ছত্রে রয়েছে সেই দিক নির্দেশক আলোর দিশা। সাহিত্যিক হিসেবে, লেখক হিসেবে পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত রাখার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মৃত্যু বাঙালি জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তাঁর স্মৃতি, তাঁর জীবন ও কীর্তিকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।

সৈয়দ অামিরুজ্জামানের শোক

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “নিভে গেল আরেকটি দ্বীপশিখা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নজরুল গবেষক, জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম চলে গেলেন না ফেরার জগতে। দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন তিনি। পুরোটা জীবনজুড়ে তিনি কাজ করেছেন বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে, বাঙালি জাতির মনন গঠনে। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের যেসব ছবি আমরা দেখি তার সবগুলোই তুলেছিলেন তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ক্যামেরায়। কোনো সাতেপাঁচে না থাকা নিপাট-নিরীহ এই মানুষটি যে কতভাবে আমাদেরকে সমৃদ্ধ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। রফিকুল ইসলাম স্যারের জন্য শোক ও শ্রদ্ধা!”

Manual8 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code