সিলেট ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২১
মৌলভীবাজার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ : মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত হয় মৌলভীবাজার জেলা। উড্ডিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।
১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটির একাংশের নেতৃত্বে পল্টনের বিশাল জনসভা থেকে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’র কর্মসূচি প্রকাশ্যে উত্থাপন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় বাঙালির স্বাধীনতা আন্দলন ও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তের প্রতি মজলুম জননেতা মওলানা অাব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একাত্মতা ঘোষণার পর জাতিগত নিপীড়ন-শোষণ-বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার মুক্তিপাগল বাঙালি যুদ্ধের জন্য তৈরিই ছিলো বলা যায়।
১৯৭১ সালের ১ ও ২ জুন কলকাতার বেলেঘাটায় যুদ্ধরত কমিউনিস্ট ও বামপন্থী দল এবং গণসংগঠনসমূহ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। এ সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্র তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকার করেই সমন্বয় কমিটি সরকারকে সহযোগিতাও যেমন করবে, তেমনি স্বতন্ত্রভাবেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করবে। এ সমন্বয় কমিটির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দল ছিল ন্যাপ (ভাসানী) ও ‘কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি’ যার নেতৃত্বে সারাদেশে ১৪টি সশস্ত্র ঘাটি এলাকা ছিল।
২৭ মার্চ মৌলভীবাজারের শহরের পশ্চিম দিকে কনকপুর থেকে একটি প্রতিরোধ মিছিল আসে। অপর মিছিলটি আসে শহরের পূর্বদিক থেকে চাঁদনীঘাট ব্রিজ হয়ে। হাতে লাঠি, দা, গাদা বন্দুক। এটা মেনে নিতে পারেনি আগে থেকে শহরে অবস্থান করা পাক আর্মিরা। প্রতিরোধ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। নিহত হন তারা মিয়া ও মো. জমির। মো. উস্তার ও সিরাজুল ইসলাম কলমদরকে চাঁদনীঘাট ব্রিজের কাছে প্রদর্শনী করে হত্যা করে পাক-হায়েনারা।
মনু নদীর তীর ঘেষা সিএন্ডবি’র ইটখোলায় কাজ শেষে নিরীহ শ্রমিকরা ঘুমিয়ে ছিলো। একদিন ভোরে নরপশুরা সাত শ্রমিককে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করে। পরে তাদের শহরের শাহ মোস্তফা সড়কের বেরি লেকের কাছে ফেলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের একটি কবরে সমাহিত করে।
এছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার বর্তমান বিজিবি ক্যাম্পে ছিল পাক আর্মির ক্যাম্প। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সুদর্শন, মুকিত, রানু, সমর, শহীদকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। পিটিআই টর্চার সেলে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, নির্যাতন করে পাকবাহিনী।
আর্মিরা ধরে নিয়ে যায় ব্যেমকেশ ঘোষ টেমা বাবুসহ অনেককে। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
দেশ স্বাধীন হবার শেষ সময়গুলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাটছিলো উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে। ২ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সারা দেশ হানাদারমুক্ত করার একটি ছক তৈরি করা হয়। ‘মারো অথবা মরো’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যার উপর যে দায়িত্ব পড়েছিলো সে অনুযায়ী অগ্রসর হতে থাকে।
ভারত থেকে চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে মুক্তিবাহিনী। প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হন মুক্তিযোদ্ধারা। এখানে প্রায় আড়াই’শ মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী শমসেরগর ঢুকে পড়ে এবং শমসেরনগরকে হানাদারমুক্ত করা হয়। ৪ ডিসেম্বর শমসেরনগরেই অবস্থান করে পরবর্তী কৌশল নির্ধারন করা হয়। ৭ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজার মুক্ত হওয়ার খবর গ্রামেগঞ্জে পৌছে যায়। যে কোন অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে শহরের প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। কিন্তু ৮-ডিসেম্বর মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা বিজয় উল্লাসের জোয়ার আর ঠেকানো যায়নি। উঁচু টিলার উপর অবস্থিত মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড্ডয়ন করেন গণপরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান।
দিবসটি পালন উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D