বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন

প্রকাশিত: ৭:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০২১

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন

ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর ২০২১ : বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বেড়ে যাবে ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে যাবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর ২০২১) বিকালে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে “বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায়বিচার” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)-এর সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। ভৌগলিক অবস্থান, উন্নয়নশীল অর্থনীতি, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ এবং দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়ার জন্য বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদীবিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ প্রতিবছর বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (এএসকে)-র নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ সরকারের ও প্রফেসরিয়াল ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সেমিনারে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) প্রেসিডেন্সির বিশেষদূত আবুল কালাম আজাদ, ইউএনডিপি জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ. কে.এম মামুনুর রশিদ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিদম মজুমদার বাবু, ওয়াটার এইড-এর কান্ট্রিডিরেক্টর হাসিন জাহান।
প্রফেসর ড. মো.জাকারিয়া মূলবক্তা হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করা ও দ্রুত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে ঐতিহাসিকভাবেই শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ দায়ী। বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো, যাদের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা খুবই নগণ্য, অথচ শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সেই দেশগুলোই।
বক্তারা বলেন, উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি ও মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বক্তারা জানান, ১২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, নাগরিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সাংবাদিকরা মিলিত হয়েছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬)।
বাংলাদেশ ৫৫টি দেশ নিয়ে গঠিত জলবায়ু বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ফোরাম সিভিএফ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।
মূলবক্তা প্রফেসর ড. মো.জাকারিয়া বলেন, আমরা যে অসম বিশ্বে বাস করি সেখানে ন্যায় বিচার ও জীববৈচিত্র্য প্ররোচিত কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশুর ওপরে।
তিনি আরো বলেন, “জলবায়ুপরিবর্তন ও জলবায়ু বিষয়ক ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়াজ তুলেছি ও তুলে যেতেই থাকবো।”