নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ার অঙ্গীকার মহিলা পরিষদের

প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২২

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ার অঙ্গীকার মহিলা পরিষদের

ঢাকা, ০৩ এপ্রিল ২০২২ : বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ৫২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। “সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তুলি”- এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি এবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে।
নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারী জাগরণের অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৬৯ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সময়ের পরিক্রমায় নারী আন্দোলনের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। নারীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কিন্তু নারী আন্দোলনের লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম বাসস’র সাথে আলাপকালে বলেন, “গত ৫২ বছরে যা করতে চেয়েছিলাম, তার সবটা করতে পারিনি। তবে মৌলিক কাজটি করতে পেরেছি। তখন আমাদের লক্ষ্য ছিলো নারীরা সচেতন হোক। তাদের মধ্যে জাগরণ আসুক। তাদের মধ্যে মুক্তির আকাংখা তৈরি হোক। যেটা আমরা চেয়েছিলাম। সেটা হয়েছে। ” তিনি বলেন, নারীরা আজ একটি সামাজিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারীদের মধ্যে একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে। মুক্তির আকাংখা তৈরি হয়েছে। যেটা আমরা সাধারণভাবে সকল নারীদের মধ্যে দেখতে পাই। কিন্তু দাবি আদায় হয়নি। সমাজে এখনো নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সমঅধিকার বা সমঅংশীদারিত্ব বলে যা বুঝি, সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বলা যায় যে, নারীর কাঠামোগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।
১৯৬৯ সালে বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে সমাজের বিশিষ্ট নারীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে প্রথম কাজ শুরু করে মহিলা পরিষদ। তিনিই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নামকরণ করেন। শুরুর দিন থেকে দীর্ঘ ৫২ বছরের পুরোটা সময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. ফওজিয়া মোসলেম। ২০২১ সালের ২জানুয়ারি সেই সময়কার সভাপতি আয়শা খানমের মৃত্যুর পর, সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. ফওজিয়া।
শুরুতে নারী আন্দোলনকে যেভাবে দেখা হতো, এখন নারী আন্দোলনের বিষয় অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। এর সাথে নারীর নানা ইস্যু যুক্ত হয়েছে। নারীদের উপলব্ধির গভীরতাও তৈরি হয়েছে। শুরু থেকেই নারী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক রূপের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো মহিলা পরিষদ। তবে তা সীমিত আকারে ছিলো। পরবর্তীতে গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সাংগঠনিক যোগাযোগও বিস্তৃত হয়েছে। মহিলা পরিষদের কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে।
ড. ফওজিয়া বলেন, নারী আন্দোলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কাজেই এতে সমসাময়িক চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমসাময়িক চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কর্মপরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হলে, তাও আনা হবে। তবে খুব একটা পরিবর্তন আনার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। এটাকে আসলে পরিবর্তন না বলে, নতুন অন্তর্ভূক্তি বলা যায়। যেমন, আমরা সামাজিক মাধ্যমগুলোকে মহিলা পরিষদের কাজে ব্যবহার করতাম না। আমরা ভাবতাম যে এতে আমাদের গোপনীয়তা, নিয়মানুবর্তিতা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা যখন অনলাইন মিটিংগুলো করতে শুরু করলাম, সেটা সংগঠনকে বিশাল সহায়তা করেছে। করোনার সময় সংগঠনের টিকে থাকার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে অনলাইন যোগাযোগ।
সময়ের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেই আন্দোলনকে এেিগয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন মহিলা পরিষদ সভানেত্রী। তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনের কর্মসূচিতে নতুন নতুন ইস্যু যুক্ত হচ্ছে। আগে যেমন যৌতুক, বাল্যবিবাহ, সম্পত্তির অধিকার এগুলো নিয়ে কথা বলতাম। কিন্তু এখনতো নারীরা চাকরি করছে। নারীদের বড় একটা অংশ বাইরে যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে, তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলতে হবে। এখন নারী আন্দোলন নতুন চরিত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংগঠনটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সমাবেশ, শোভাযাত্রা, সেমিনার, ওয়েবনিয়ার, গণমাধ্যমে প্রচারণাসহ সপ্তাহব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গত ১ এপ্রিল শুক্রবার কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। কেন্দ্র ও বিভাগীয় পর্যায় ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কার্যালয় রয়েছে। সেসব কার্যালয়েও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।