সিলেট ২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২২ : অটিজম নিয়ে আলোচনায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়কে সম্পৃক্ত করে দেশে জাতীয় সচেতনতা তৈরি করা গেছে বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
তিনি আজ রোববার (২৪ এপ্রিল ২০২২) ‘প্রাচীর পেরিয়ে, স্টিফেন শোর- এর আত্মজীবনী ও অটিজম নিয়ে সায়মা ওয়াজেদের সাথে আড্ডা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন ।
ভার্চুয়াল ওই আলাপচারিতায় অটিজম নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক স্টিফেন মার্ক শোর।
অনুষ্ঠানে তার লেখা ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়াল’র বাংলা সংস্করণ ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও এতে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এচিভমেন্ট (অটিজমে) হচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী অটিজম সচেতনতামূলক তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। ‘সাধারণ মানুষের মাঝেও অটিজম নিয়ে যে ধরনের নেতিবাচক ‘স্টিগমা’ ছিল, সেটি থেকেও আমরা মুক্ত হতে পেরেছি’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা বলেন, আমাদের অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে এবং সেই সীমাবদ্ধতাগুলোই এক ধরনের শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটাও অটিজম সচেতনতা আন্দোলনের একটি অর্জন। অটিজম নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অটিজম আমাদের সমাজেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, জাতীয় পর্যায়ে এধরনের একটা সচেতনতা তৈরি করা গেছে। ‘তাদেরকে (অটিজম আক্রান্ত) আরও সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাদের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত- এটা এখন সবাই বুঝতে পেরেছে’ বলেন সায়মা।
যুক্তরাষ্ট্রে মনোবিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা। তাকে বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলেরও একজন সদস্য তিনি।
অধ্যাপক স্টিফেন মার্ক শোর বই বিয়ন্ড দ্য ওয়াল এর অনুবাদ করা হয় সূচনা ফাউন্ডেশন থেকে। বইটি রকমারি ডটকমসহ অন্যান্য স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অটিজম নিয়ে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে সায়মা বলেন, আমাদের দেশে শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যেই অটিজম ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীতাকে রাখা হয়নি। সরকার অটিজম নিয়ে মাল্টি সেক্টরাল এপ্রোচ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০টির বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অটিজম সচেতনতা বিষয়ক সরকারি তৎপরতায় সম্পৃক্ত এবং এটি নিয়ে আমাদের একটি জাতীয় কর্মকৌশল রয়েছে। এ কর্মকৌশল শুধু ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধ নয়, এতে প্রতিবন্ধীদের চাকরি ও অন্যান্য জীবনমুখী সমস্যা সমাধানের কথা বলা আছে।
অটিজম কোনো একক দেশের সমস্যা নয় জানিয়ে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, পৃথিবীর সব দেশে সব সমাজে অটিজম নিয়ে মানুষের মাঝে ‘স্টিগমাগুলো’ একই ধরনের। তাই দেশকাল-পাত্রভেদে সব দেশেই অটিজম নিয়ে মানুষকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য বাবা-মার পাশাপাশি দেশের সরকার ও নীতি নির্ধারকদেরও কিছু করার আছে। প্রাচীর ভেঙে সবাইকে সামনে আসতে হবে।’
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের এডেলফি ইউনিভার্সিটির স্পেশাল এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক মার্ক শোর জানান, বাবা-মা বিশেষ করে মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অটিজম নিয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে বিষয়বস্তু করে বইটি লিখেছেন। অটিজম আক্রান্তদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বইটি লেখা। ভবিষ্যতে অটিজম আক্রান্তদের সহায়তামূলক একটি এবং ৫২টি দেশ ভ্রমণ করে অটিজম পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি লেখা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তার।
মার্কিন এই লেখক বলেন, ‘অটিজম নিয়ে কথা বলতে বিশ্বের ৫২টি দেশে গেছি। পৃথিবীর সব দেশের অটিস্টিক শিশুরা প্রায় একই ধরনের আচরণ করে। তবে তাদের অভ্যন্তরে কিছু স্বতন্ত্র বৈচিত্র থেকে যায়। প্রতিটি অটিজম আক্রান্ত মানুষ চিন্তা, চেতনায় আলাদা। তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা যদি বাড়িয়ে তুলতে পারি, তাহলে তারাও অন্যান্য মানুষের মত আচরণ করতে পারবে।
ভার্চুয়াল আলোচনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারের ওপর জাতীয় সংসদে একটি কর্মশালা হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেখানে ১০০ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। ওই কর্মশালায় সাময়া ওয়াজেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, সায়মার নেতৃত্বে সূচনা ফাউন্ডেশন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, কার্যকর নীতি প্রণয়নের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তারই উদ্যোগ ও নেতৃত্বে জাতিসংঘে অটিজম বিষয়ে বিশ্বে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক রেজ্যুলেশনও গৃহীত হয়েছে। সায়মা বাংলাদেশে এএসডি বা অটিজম স্টেকট্রাম ডিজঅর্ডার বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে বইটির পাঠ পর্যালোচনায় ইনসাইটস নলেজ লিমিটেডের সিও নিগার রহমান বলেন, ‘আমার ২৩ বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে। প্রাচীর পেরিয়ে বইটি পড়ে মনে হচ্ছে পুরোনো দিনের স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছি। আমার জীবনের সঙ্গে বইটি পাতায় পাতায় মেলাতে পারছিলাম।
তিনি বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশে অটিজম কী সেটা বুঝতই না। আমার ছেলের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রমী আচরণ দেখার আগে আমারও এ বিষয়ে ধারণা ছিল না। ২০১১ সালের দিকে সায়মা ওয়াজেদ আপা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার ফলে এখন অটিজম বিষয়টি অনেকাংশেই পরিষ্কার।’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের (এনআইএমএইচ) সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর জেইন পিয়ার্স বক্তব্য রাখেন।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D