সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২২
‘ঘুরে এলাম মণিপুর’ হাজী মো: আব্দুস সামাদ এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত একটি বিখ্যাত বই। এখানে লেখক তাঁর চোখেদেখা-ঘুরেদেখা এমন বাস্তব ঘটনাগুলো তাঁর লেখিনীর মাধ্যমে ফুটে তুলেছেন যা ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের সহজে আকৃষ্ট করবে। লেখকের
লেখা প্রথম ইতিহাস মূলক বই ‘মণিপুরি মুসলমানদের ইতিবৃত্ত’ বহুল পাঠক প্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। পত্র পত্রিকায় তিনি প্রচুর লিখেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা,সাময়িকী,অনলাইন পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। লেখার জগতে হাজী মো,আব্দুস সামাদ ব্যাপক পরিচিত ও জন আদৃত লেখক।
গ্রন্থ আলোচনা
গ্রন্থের নাম ;– ঘুরে এলাম মণিপুর
গ্রন্থাকার হাজী মোঃ আব্দুস সামাদ
প্রথম প্রকাশ ;- ফেব্রুয়ারী, ২০২২
স্বত্ব ;-লেখক
প্রকাশক ;– তিউড়ি
প্রচ্ছদ ;– শামীম আরেফীন
অনলাইন ;– teuribooks.com
teuri.net
rokomari.com
মুদ্রণ ;– তিউড়ি প্রিন্টার্স, ঢাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা;– ২২২
মূল্য ;– ৪০০.০০
হাজী মো,আব্দুস সামাদ ৩০ জুলাই ১৯৫২ সালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন আদমপুর ইউনিয়ন এর পশ্চিম সীমান্তে প্রবাহিত তরঙ্গিণী ধলাই নদীর গাঁ ঘেষে থাকা পশ্চিম কান্দিগাঁও গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম মণিপুরি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম মো, আব্দুস সহিদ এবং মাতা মরহুমা রোকিয়া বেগম। কমার্স গ্র্যাজুয়েট হাজী মো,আব্দুস সামাদ ১০ ই জানুয়ারি ১৯৭৫ সনে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লিঃ এ যোগদান করেন এবং ২০১০ সনে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় অবসর গ্রহন করেন। তিনি বর্তমানে পশ্চিম কান্দিগাঁওস্থ নিজ আলয় ‘পাঙাল নিবাস’ এ অবসর যাপন করছেন।
‘ঘুরে এলাম মণিপুর’ গ্রন্থটির সৌজন্য সংখ্যা লেখকের কাছ থেকে আমি সংগ্রহ করতে পেরে পুলকিত এবং সমৃদ্ধ হলাম। এই গ্রন্থটি কেবল ভ্রমণবৃত্তান্ত নয় এর বাঁকে বাঁকে রয়েছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য ও উপাত্ত। ভ্রমণ প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ভ্রমণকালীন সময়ের প্রয়োজনীয় তথ্যভান্ডার। সফরে দৃশ্যমান মানুষ ও প্রকৃতির বিবরণ ছাড়াও রয়েছে মণিপুর,জিরিবাম,কাছাড়, আসাম ও ত্রিপুরার ইতিহাসের অনেক খন্ড খন্ড বিবরণ। রয়েছে ভ্রমণকৃত জায়গা সমুহের ঐতিহাসিক পরিচিতি। এখানে উল্লেখ্য যে– এই ভ্রমণ কাহিনী পড়ে আমার মনে হয়েছে আমিও লেখকের সাথে আছি। লেখক যেসব জায়গায় গিয়েছেন তাঁর অনেক জায়গাতে আমার আত্মীয় স্বজনরা রয়েছে। মণিপুর থেকে ফেরার পথে ঐতিহাসিক রেলস্টেশন শিলচর(তারাপুর) হতে অরুণাচল রেলজংশনে যাত্রা বিরতির কথা উল্লেখ করেছেন। এ জংশন থেকে অতি নিকটে জয়নগর গ্রাম-টি, আমার নিকট আপনজনদের বসবাস। এই অরুণাচল জংশনের সাথে আমার গভীর স্মৃতি বিজড়িত–কত কথা মনে পড়িয়ে দেয় কত প্রিয়মুখ! আপন জনদের অশ্রুভেজা চোখ! সেই কষ্টের বিদায় আজ মনে পড়ে আমাকে কষ্ট দেয়।
লেখক ভারত যাত্রার শুরুতে প্রথমে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরে প্রবেশ করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের ঊনকোটি জেলার পাহাড় টিলার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মুসলিম মণিপুরি অধ্যুষিত এলাকা কমলপুরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান এবং সেখানে যাত্রা বিরতি করেন। লেখক সেখানকার মেথিরমিয়া,হালাহালি,মানিক ভান্ডার, মলয়া ইত্যাদি মুসলিম মণিপুরি গ্রামগুলোতে যান এবং সেখানে সবার সাথে পরিচয় হন এবং নামাজ আদায় করেন। অতঃপর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বিমানযোগে সেই চিরকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেশ মণিপুরের বীর টিকেন্দ্রজিত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ইম্ফল গিয়ে পৌঁছেন। লেখক তাঁর ভ্রমন সঙ্গীদের নিয়ে মণিপুর উপত্যকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ব্যবস্হাপনায় আটদিন কাটান। সেখানকার ঐতিহাসিক বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সেখানকার সিটি কনভেনশন সেন্টারের সেমিনার হলে AMMOCOC এর সহযোগী ১৩ টি সংগঠনের নেত্রীবৃন্দদের সাথে পরিচয় সম্বর্ধনা ও বক্তব্য প্রদান করেন। সেখানে লেখকের সাথে মণিপুর রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এন, বিরেন সিং সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচিত হন।
হাজী মোঃ আব্দুস সামাদ বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষ। তিনি একদিকে যেমন– লেখক,কবি,গবেষক তেমনি অপর দিকে ইসলামি চিন্তাবিদ,সমাজ সেবক ও সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত।
আলোচ্য ‘ঘুরে এলাম মণিপুর’ গ্রন্থখানি ভ্রমণ পিপাসু পাঠকদের যেমন তৃষ্ণা মেটাবে,তেমনি হাজী মোঃ আব্দুস সামাদের ভ্রমণ সাহিত্য সম্পর্কে সুগভীর চিন্তাচেতনা ও তাঁর প্রশংসনীয় সৃষ্টিকর্ম পাঠক মনকে আকৃষ্ট করবে। এ গ্রন্থের প্রতিটি পাতায় তাঁর চিন্তাশীল,সৃজনশীল এবং ধৈর্য্যের কথা উল্লেখযোগ্য। আমার বিশ্বাস এই গ্রন্থ-পাঠক মনে জাগ্রত করবে দেশ ঘুরার-দেশ দেখার দূর্নিবার রোমাঞ্চ !
গ্রন্থটির শেষের পৃষ্ঠাগুলোতে লেখক এবং তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে তুলা মণিপুর ভ্রমনের কিছু স্মৃতিময় স্থির চিত্র রয়েছে–যা পাঠকদের মন আকৃষ্ট করবে। লেখক মা মণিপুর-কে মনেপ্রাণে ভালবেসে তাঁর ‘ঘুুরে এলাম মণিপুর’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ অংকিত করিয়েছে ‘মণিপুর ইম্ফলে অবস্হিত ঐতিহাসিক কাংলা প্রসাদের প্রধান ফটকের প্রতিকৃতি’ এবং তিনি পাঙাল সমাজকে বিশ্ব সমাজে পরিচিতি লাভের লক্ষ্যে বইটি উৎসর্গ করেছেন– ‘বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঙাল সম্প্রদায়ের সকল সদস্যদের প্রতি।’
বইটির প্রকাশনার মান উন্নত। তিউড়ি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী তরুণ লেখক ও কবি মাইবম সাধন অত্যন্ত মেধা ও মননশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বইটি হাতে নিলেই বুঝা যায় এখানে আন্তরিকতার ছুঁয়া রয়েছে।
পরিশেষে লেখকের লেখার ধারা আরো স্নিগ্ধতর উজ্জ্বলতর হোক। আরো নতুন নতুন সৃষ্টির অপেক্ষায় আমরা সাগ্রহে দিন গুনছি।
রওশন আরা বাঁশি খূৎহৈবম
দক্ষিণ কাজল শাহ
সিলেট।
২রা জুন ২০২২ ইং।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D