আহমদ ছফার কবিতা

প্রকাশিত: ১:২০ পূর্বাহ্ণ, জুন ৮, ২০২২

আহমদ ছফার কবিতা

শামসুল আরেফীন |

আহমদ ছফা বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। আবার কবিতাও লিখেছেন। ‘জল্লাদ সময়’ (১৯৭৫), ‘দুঃখের দিনের দোহা’ (১৯৭৫), ‘একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’ (১৯৭৭), ‘লেনিন ঘুমোবে এবার’ (১৯৯৯) ও ‘আহিতাগ্নি’ (২০০১) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তাঁর ‘গো-হাকিম’ (১৯৭৭) নামক গ্রন্থটি শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত হলেও অজিত রায়ের মতে তা নিছক ছড়াগ্রন্থ নয়। গো-শাবকের হাকিম হওয়ার আবার হাকিম থেকে গো-শাবক হওয়ার কাহিনী গ্রন্থটিতে বর্ণিত হয়েছে। অজিত রায়ের মতে, এই গ্রন্থ সতেরো শতকের ইংরেজ কবি জন ড্রাইডেন (১৬৩১-১৭০০) ও আঠারো শতকের ইংরেজ কবি আলেকজান্ডার পোপ (১৬৮৮-১৭৪৪) প্রভাবিত। সলিমুল্লাহ্ খান এই প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন : ‘গো-হাকিম কবিতায় মোট ১৩২ জোড়া চরণ। প্রতি চরণই মাঝখানে ভাঙা। এই ধরনটি সতেরো কি আঠারো শতকের ইংরেজ কবিদের বিশেষ আলেকজান্ডার পোপের হাতে বিকশিত হইয়াছিল। এই ইংরেজ কবিরা আবার বর্জিল, জুবেনাল, ওবিদ প্রভৃতি লাতিন কবির তর্জমা করিয়াছিলেন, উহাদের আদর্শ অনুসরণও করিয়াছিলেন। … এই বিদেশি কবিদেরই নহে, নিজ দেশের পুরানা কবি চসারের তর্জমাও সম্পন্ন করিয়াছিলেন জন ড্রাইডেন। আলেকজান্ডার পোপের উত্তরসূরি স্যামুয়েল জনসনও (১৭০৯-১৭৮৪) জুবেনালের কবিতার আদর্শে নতুন ব্যঙ্গকবিতা রচনা করিতে কসুর করেন নাই’।
‘গো-হাকিম’সহ আহমদ ছফার কাব্যগ্রন্থগুলো নিবিড়ভাবে পাঠ করলেই বুঝা যায়, তিনি একজন আধুনিক কবি এবং তাঁর কবিতা গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ। আহমদ ছফা লিখেছেন: ‘তাজা কয়লায় ছাঁকা/ সুস্বাদু কাবাবের মতো স্বাদ আমার কবিতার।/ নাকে ঘ্রাণ লাগতেই খাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয়।/ কড়া পাকের, খাড়া পাকের নরম গরম মিহি/ সব ধরনের কবিতা রান্নায় আমার হাতযশ আছে’। [কবিতার দোকান]
এই উচ্চারণ থেকে উপলব্ধি করা যায়, নিজের কবিতার বিষয়বস্তু ও স্বকিয়তা সম্পর্কে তিনি সজাগ ছিলেন; এমনকি অন্যদের কবিতা থেকে নিজের কবিতার পার্থক্য সম্পর্কেও সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। তাঁর ‘জন্মভূমি’ কবিতায়-‘তসবিহমালার মতন গোটা গোটা/ মাগো তোমার চোখের জলের ফোঁটা/ দরদরিয়ে শঙ্খ নদের বেগে/ রেখায় রেখায় মেঘলা আনন ভাসায়/ সোঁদর বনের বাঘিনী মা/ তুমি কেন গর্জে ওঠ না!’ চরণসমূহে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ‘চিরস্মরণযোগ্য চিত্রসৌন্দর্য’ খুঁজে পেয়ে ‘চিত্রকল্প সৃষ্টিতে ছফার দক্ষতা অসাধারণ’ মন্তব্য করে লিখেছেন: ‘আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমাদের কালে তিনি একজন প্রধান কবি হিসেবে সাধারণ পাঠকসমাজে আদৃত নন’। উল্লেখ না করলেই নয় যে, অনেক কবির কাছেও তিনি প্রধান কবি হিসেবে দূরে থাক, একজন সাধারণ কবি হিসেবেও আজ পর্যন্ত মূল্যায়ন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
আহমদ ছফার ভাগ্য আসলে অনেকটা দস্তোয়েভস্কি ও আমাদের দেশের কবি বুদ্ধদেব বসুর মতো। এককালে দস্তোয়েভস্কিকে কৃপণতার সঙ্গে উপস্থাপন করা হতো। তাঁর প্রতিভাকে বিকৃত করে আলোচনা করা হতো। বুদ্ধদেব বসু তাঁর ভক্ত ছিলেন। মনে করা হতো, বুদ্ধদেব বসু কবিতা নয়, কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন এবং তাতেই তাঁর প্রতিভার উপযুক্ত বিকাশ ঘটেছিল। সভা-সমিতিতে এমন মতও প্রচার করা হতো যে, তিনি কবিই নন। এখন আমরা দেখি, আহমদ ছফার কবি-প্রতিভাকেও খাটো করে দেখা হয়।
দস্তোয়েভস্কিকে কৃপণতার সঙ্গে উপস্থাপন করা হলেও, পরবর্তীকালে তাঁর কর্মকে প্রগতির পর্ব ও প্রতিক্রিয়ার পর্বে ভাগ করা হলে দেখা গেল, কোন পর্বেই তাঁর প্রতিভা অনুজ্জ্বল নয়। বুদ্ধদেব বসুর কবি-প্রতিভার অবমূল্যায়নের কথা আমরা তুলে ধরলেও একথা বলতেই হবে যে, জীবনানন্দ দাশরা তাঁর কবি-প্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন করেছিলেন। জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘কঙ্কাবতী’ কাব্যের আলোচনায় লিখেছেন: “বুদ্ধদেব বসুর কবিহৃদয়ের আভার থেকে ‘কঙ্কাবতী’র জন্ম হয়েছে। বুদ্ধদেব অনেকদিন থেকে কবিতা লিখছেন। ‘কঙ্কাবতী’ ছাড়া কবিতার বই আগেও আরো প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই বইটির ভিতরেও নিহিত রইল তাঁর কবিযশ; এই রস পান ক’রে বুঝতে পারলাম আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি একজন প্রধান কবি; প্রধানদের ভিতর অন্যতম: তাঁর ‘কঙ্কাবতী’ অবশ্যম্ভাবী পিপাসা জাগিয়ে গভীর পরিতৃপ্তি-কুহক নিয়ে এসেছে”। [জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত প্রবন্ধাবলী: ফয়জুল লতিফ চৌধুরী সম্পাদিত, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, মাওলা ব্রাদার্স-ঢাকা, পৃ. ৫৩]
আমাদের বিশ্বাস, আহমদ ছফার কবিতা ও কবি-প্রতিভাও একদিন সঠিক মর্যাদায় সমাসীন হবে।
বলেছি, আহমদ ছফা একজন আধুনিক কবি। কিন্তু তিনি অতীত সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি দ্বারাও প্রভাবিত ছিলেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এখন পর্যন্ত আদি নিদর্শন হলো চর্যাপদ। ১৯০৭ সালে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নিদর্শনটি নেপালের রাজদরবারে আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রায় ৯ বছর পর তা নেপালে প্রাপ্ত অন্য তিনটি পুঁথির সাথে একত্রে প্রকাশ করেন ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে। ‘চর্যাপদ’ পাঠে লক্ষণীয়, প্রতিটি চর্যাই গান এবং এগুলোর রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যরা। লুইপাদানাং, কুক্কুরীপাদানাং, বিরুবাপাদানাং, গুন্ডরীপাদানং, চাটিল্লপাদানাং, ভুসুকুপাদানাং, কাহ্নপাদানাং প্রমুখ সিদ্ধাচার্যের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এঁরা বৌদ্ধধর্ম নয়, বৌদ্ধ লোকধর্মের অনুসারী। চর্যাসমূহে এঁরা ‘লোক’ হিসেবে নিজেদের দুঃখ-বেদনা এবং এঁদের অনুসৃত লোকধর্মকে কেন্দ্র করে ধর্ম-সাধনার কথা ব্যক্ত করেছেন।
চর্যাপদ (পুঁথিটির নাম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে) আবিষ্কার ও প্রকাশের পর তা মূলত বাংলাভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হলেও কিছু গবেষক একে লোকসঙ্গীত বা লোকসাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন হিসেবেও চিহ্নিত করেন। ড. আনোয়ারুল করিম প্রমুখের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখনীয়। তিনি ‘বাংলাদেশের বাউল : সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত’ নামক গ্রন্থের ৩৯৫ পৃষ্ঠায় লিখেন: “লোকধর্মভিত্তিক সাধনসঙ্গীতই বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের আদিতম প্রকাশ। চর্যাপদ বা ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’ শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদিম রূপের পরিচয় বহন করে না, বরং এদেশের মাটি ও মানুষের এযাবৎকাল আবি®কৃত লোকধর্মনির্ভর গণমুখী লোকসঙ্গীতের সার্থক প্রকাশ বলেও তা স্বীকৃত”। (বর্ণায়ন, জানুয়ারি ২০০২)
চর্যাপদ লোকসঙ্গীত বা লোকসাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন হিসেবেও চিহ্নিত হওয়ায় প্রতীয়মান হয় যে, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল উৎস হলো লোকসংস্কৃতি। আমাদের দেশের বাউল, কীর্তন, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুরশিদি, গম্ভীরা, পালাগান, মারফতি, ভাবগান, শব্দগান, অষ্টক, কবিগান, ঘাটুগান, জারিগান, সারি গান, বিচার গান, বাইলান্তি গান, গাজীর গীত, মালসী, পাঁচালি, টপ্পা, মাইজভাণ্ডারী, জাহাঁগিরি, বারমাসি, গীতিকা, পুঁথি, মহাভারত, রামায়ণ, লোকনাটক, লোকনৃত্য, লোকাচার প্রভৃতি, এছাড়া লোকশিল্প থেকে বিষয়টি আরও বেশি করে প্রতীয়মান হয়।
আহমদ ছফা আধুনিক কবি বা সাহিত্যিক হলেও বিষয়টি অনুভব করেছিলেন। তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন ছোটবেলায় মহাভারত ও রামায়ণসহ বিভিন্ন পুঁথি ও লোকনাটকের সাথে পরিচয়ের কারণে। ছোটবেলায় যে-বয়সে তিনি কোরান মুখস্থ করেন, সেই বয়সেই তাঁদের একটু দূরের প্রতিবেশী মনমোহন আচার্যের মায়ের কণ্ঠে মহাভারত, রামায়ণ ও ভগবত শুনতে শুনতে পুঁথিত্রয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাঁর মুখস্থ হয়ে যায়। এছাড়াও উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সিরাজুল ইসলাম ওরফে খুইল্যা মিয়া নামক এক পুঁথি-পণ্ডিতের, যিনি তাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও ছিলেন, কাছে পুঁথি পাঠ করতে শিখেন। পুঁথিগুলোর মধ্যে পদ্মাবতী, শাহনামা, জৈগুন বিবি, সোনাভান, শহীদে কারবালা, জঙ্গনামা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। লোকনাটকের সাথেও সেই সময়ে তাঁর পরিচয় ঘটে এই সিরাজুল ইসলামের কল্যাণে। সিরাজুল ইসলাম বলেন:
“আমি নাটক মঞ্চায়ন করতাম। আমার কাছে পুঁথি পাঠ করতে করতে একসময় তার শখ হয়েছিল নাটকে অভিনয় করবে। ব্যাপারটা আমাকে সে অবগত করলে বলেছিলাম, ‘বেশ, তা’ই হবে’। কোনো নাটকের যে কোনো একটা চরিত্রে তাকে দিয়ে অভিনয় করাতে পারাটা আমার জন্য খুশির কথা ছিল। অভিনেতা তো তৈয়ার করতে হবে। কিন্তু সে আব্দার করেছিল তাকে অভিনয় করাতে হবে নায়ক চরিত্রে। আর এ আব্দারে আমি বিপদে পড়েছিলাম। অন্য যে কোনো চরিত্রে তাকে দিয়ে অভিনয় করানো গেলেও নায়ক চরিত্রে তা করানো সম্ভব ছিল না। কেননা তার চেহারা বিশেষ ভালো ছিল না। আমি বলেছিলাম, ‘নায়ক চরিত্রে তোমাকে মানাবে না’। সে বলেছিল, ‘মানাবে আলবৎ’। আমি তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতাম। নায়ক চরিত্রে অভিনয় সে করতে না পারলে মন খারাপ করবে, এটা মেনে নেয়া আমার পক্ষে অসহ্য ছিল। অতএব একটা নাটকের নায়ক চরিত্রে তাকে অভিনয় করাতে আমি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। কিছুদিন ধরে রিহার্সেল চলেছিল। যেদিন নাটকটি মঞ্চায়িত হবে তার আগে আমি তাকে বলেছিলাম, ‘সফল হবে তো’? সে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিল, ‘হ্যাঁ’। কিন্তু সে মঞ্চে উঠেই আমাকে চরমভাবে হতাশ করেছিল। পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে অবস্থাতে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কী হলো ভাতিজা’? সে জবাব দিয়েছিল, ‘সংলাপ ভুলে গেছি চাচা’।”
ছোটবেলায় মহাভারত ও রামায়ণসহ বিভিন্ন পুঁথি ও লোকনাটকের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে আহমদ ছফা লোকসংস্কৃতিকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল উৎস মনে করার কারণে তাঁর লেখনিতে, তাঁর কবিতায় পড়েছিল এই লোকসংস্কৃতির কিছুটা প্রভাব; এছাড়া অতীত সাহিত্য ও ইতিহাস-পুরাণ-ঐতিহ্যের কিছুটা প্রভাবও পড়েছিল। আহমদ ছফার কবিতায় শ্রীমতি রাধিকা, বীর হানিফা, পুঁথি, সোনাভান, লখিন্দর, বেহুলা, শবরী প্রভৃতি শব্দ বা উপাদানের প্রয়োগ এই প্রভাবের প্রমাণ।
কালিন্দী নদের তটে শ্যামল বকুলমূলে বাজায় বাঁশরি
কোনজন শ্রীমতি রাধিকার মধুমাখা প্রিয় নাম ধরি [রবীন্দ্রানুসরণ]
বীর হানিফার সেই
পুঁথির জগত আর জ্যোস্নালোকে ভাসমান
কন্যা সোনাভান সমস্ত পেছনে রেখে
মধুতে পিঁপড়ের মত
এ শহরে ভিড় করে বেঁধে আছে নীড়। [বস্তিউজাড়]
মনে পড়ে তার মুখ! বড় একাকিনী
লখিন্দর সোনা যার কোল ছেড়ে যায়। [একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা]
বেহুলাকে ভেলার পিছে
স্রোতের টানে নদীর বাঁকে
দেখতে আমি পেয়েছি গো
বিষ কাটালির ফাঁকে ফাঁকে। [প্রাগুক্ত]
শবরী বালিকা কাঁচা যৌবনের মাধুরীর মত ঘন হয়ে নামে। [প্রাগুক্ত]
আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণ-প্রবাহ বুদ্ধদেব বসুও এ-ধরনের উপাদান, যেমন, দ্রৌপদী, ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতি ব্যবহার করে কবিতা রচনা করেছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁর রচিত ‘দ্রৌপদীর শাড়ি’ ও ‘ধৃতরাষ্ট্রের বিলাপ’ কবিতার কথা উল্লেখযোগ্য। সমর সেনকেও এ-ধরনের উপাদান, যেমন, মহুয়া, চিত্রাঙ্গদা প্রভৃতি প্রয়োগ করে কবিতা রচনা করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে তাঁর রচিত ‘মহুয়ার দেশে’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ কবিতার কথা উল্লেখ করা চলে।
আহমদ ছফা লোকসঙ্গীতের আদলেও কবিতা রচনা করেছিলেন। তাঁর ‘আহিতাগ্নি’ কাব্যগ্রন্থের ‘ঘর করলাম নারে আমি সংসার করলাম না’ গীতিকবিতাটি এরকমই।
আহমদ ছফা তাঁর কবিতায় চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলের আঞ্চলিক শব্দও, যেমন, শূয়র, আঁধি, নাহান, নমাজ, কান ছেদানি, মুসলমানি, মলুদ, মাজা, মরশুম, ডরাই প্রভৃতির প্রয়োগ করেছেন।
দাঁতাল জন্তুর মত গর্জমান নির্দয় সময়
তোমার আশ্রয়ে বাড়ে পুষ্ট হয় শূয়রের দল [জল্লাদ সময়]
কি করে দাঁড়াব শিরদাঁড়া মেলে
বাইরে আঁধি ভেতরে ঝড় [প্রিয়তমাসু]
বাঁধাকপির ডিমের নাহান গোল
দেখেছি তার পেলব কোমল মুখ [সে]
তোমার তলায় সমাজ নমাজ
ভূঁইয়ের আলের ঠেলাঠেলি
‘কান ছেদানি’ ‘মুসলমানি’
মলুদ শরীফ বেলাবেলি। [একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা]
নদীর মাজা কাঁপিয়ে এল
স্বাধীনতার অকাল বোধন। [প্রাগুক্ত]
বলীখেলার মরশুমেতে
অনেক কিছুর ধানাই-পানাই। [প্রাগুক্ত]
ছোটবেলা থেকে ভূগোলকে আমি
যমের মত ডরাই। আমার মস্তকে ভূগোল বিষয়ক [সীল মাছের খাস্লত]
দুই.
আহমদ ছফা বহু বিষয়ে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো, সময়-সচেতনতা। তাঁর সময় অর্থাৎ তাঁর সময়ের অনেক বিষয়ই তিনি তাঁর কবিতায় যত্নের সঙ্গে তুলে এনেছেন। আহমদ ছফার জন্ম হয় ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ প্রান্তে। তিনি বেড়ে উঠেন পাকিস্তান শাসনামলে। বাঙালির উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ভয়াবহ অপশাসন ও শোষণ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি দেখেছেন, বাঙালির অর্থে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে উঠে তিনটি নগরীÑকরাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ, নির্মিত হয় তারবেলা বাঁধ; এটাও দেখেছেন, বৈদেশিক সাহায্যের আশি ভাগ ব্যয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানে ও মাত্র বিশ ভাগ ব্যয় হয় বাংলায়। বাঙালির উপর পশ্চিম পাকিস্তানের নির্মম-নির্দয় ব্যবহারও তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের এই অপশাসন ও শোষণের কালকেই তিনি চিত্রিত করেছেন ‘জল্লাদ সময়’ কবিতায়: ‘সময়ের জানু চিরে বেরিয়েছ জারজ সময়/ টাটকা মনুষ্য প্রাণ মনে কর খেলার পুতুল/ ইচ্ছেমত ভাঙ্গ তুমি মর্জিমত বসাও মাশুল/ তোমার গর্ভের পাপে বঙ্গদেশে জেগেছে প্রলয়।/ দাঁতাল জন্তুর মত গর্জমান নির্দয় সময়/ তোমার আশ্রয়ে বাড়ে পুষ্ট হয় শূয়রের দল/ যা পারে তছনছ করে দুঃখিনীর অন্তিম সম্বল/ শোননা প্রজ্ঞার বাণী অনাচারে করনা সংশয়।/ সূর্যালোকে পিঠ দেয়া আততায়ী লজ্জিত সময়/ যা কিছু প্রকাশ্য তুমি বামহস্তে করছ গোপন/ সমূহ ধ্বংসের বীজ গর্ভাশয়ে করেছ রোপণ/ কিন্তু কিছু সত্য আছে কোনদিন লুকোবার নয়’।
‘আমাদের সময়’ কবিতায় তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, অরাজকতা ও মানুষের নিরাপত্তাহীনতা তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন ‘আমাদের এ সময় সুসময় নয়’ এবং ‘জেনে রাখ সর্বনাশ সম্মুখে তোমার’। ‘আমাদের এ সময় সুসময় নয়/ জোয়ারে হিন্দোল দোলা, ভাটায় মন্থর;/ চেনাজানা ভদ্র নদী ভেবে/ যেজন ভাসাবে ডিঙ্গা পৈতৃক বিশ্বাসে/ জেনে রাখ সর্বনাশ সম্মুখে তোমার।/ মেঘনা পদ্মা কর্ণফুলী যেই নামে ডাক/ পুরোপুরি পাল্টে গেছে জলের শরীর;/ এই নদী সেই নদী নয়/ খরধার বেগবান তরঙ্গিত গতি/ সহিংস আঘাতে খায় সাবেক বসতি’।
‘দুঃসময়’ কবিতায় তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ভণ্ড রাজনৈতিক নেতাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন; তাদের বলেছেন ‘প্রাচীন ভাঁড়ের দল’। স্বাধীনতা অর্জনের পরে, বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে মানুষের চরম দুর্দিনে, কোনো কাজ না করে এই ‘প্রাচীন ভাঁড়ের দল’-এর মুখের বুলি বা ‘কথার ফানুস’ উড়ানোর বিষয়টিও তিনি তুলে এনেছেন এই কবিতায়: ‘দুঃসময় শিকারী বাজের মত চঞ্চু মেলে গুণছে প্রহর/ গ্রামগুলো সর্বস্বান্ত বৃক্ষপত্রে জাগে আর্তস্বর/ বলির পাঁঠার মত চোখ মেলে কাঁপছে শহর।/ নিদারুণ পরিস্থিতি চারিদিকে মহামারী-সন্ত্রস্ত/ এই মৃত অর্ধমৃত দেশে শুধু কথার ফানুস/ রঙিন প্ল্যাকার্ড যেন অহরহ জ্বলছে সুন্দর।/ অবস্তু বস্তুর বেশে প্রতিদিন কত রঙ্গ করে/ প্রাচীন ভাঁড়ের দল অধুনার নাটমঞ্চে/ টেরিকাটা কুশীলব সেজে, অশ্লীল ধ্বনির ঝড়/ শব্দের তাণ্ডব ইঙ্গিতে জাগিয়ে দেয় যখনি তখনি/ ইহাদের চেনা ভাল পরিচয়ে হালাকু বাহিনী’।
আহমদ ছফা তাঁর সময়ের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও সজাগ ছিলেন। ‘ঘোষণাপত্র’ কবিতায় তিনি তাঁর সময়কার জং ধরা পৃথিবীকে সারিয়ে তোলার গভীর আকুতি প্রকাশ করেছেন : ‘এরই মধ্যে পৃথিবীর কলকব্জায় প্রচুর জং ধরেছে/ ঘুরতে ফিরতে বিশ্রী আওয়াজ দেয়/ শরীরের ভাঁজে ভাঁজে পুঁজ-পুষ্ট ঘা/ চীৎকারে প্রতিদিন বাতাস পর্যন্ত কাঁদে।/ ধন্বন্তরী আত্মাদের প্রতি/ প্রেরণার মত ওয়ারলেস ম্যাসেজ রিলে করেছিÑ/ সারিয়ে তুলুন পৃথিবীকে, সুন্দরীর হৃত/ যৌবন ফিরিয়ে দিন’।
আহমদ ছফা খুবই মানবিক ছিলেন বলেই তাঁর সময়ের কথা, জং ধরা পৃথিবীকে সারিয়ে তোলার কথা বলেছেন তাঁর কবিতায়। তাঁর ‘বস্তিউজার’, ‘মানুষ দাঁড়াবে তবু’, ‘একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’, ‘লেনিন ঘুমোবে এবার’, ‘কবি ও সম্রাট’ প্রভৃতি কবিতায়ও দেখি মানুষের কথা, মানবিকতারই কথা। ‘মানুষ দাঁড়াবে তবু’ কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘মানুষই রচনা করে, সব ক্ষতি তুচ্ছ করে শিরদাঁড়া তুলে/ মানুষ দাঁড়াবে তবু অন্তরের অমৃতের বলে’। ‘লেনিন ঘুমোবে এবার’ কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘স্তব্ধ হোক জাগরণ, সাময়িক বিপ্লবের কেটে যাক ধার/ তবুও প্রথম চোটে মুমুক্ষু মানুষ উঠে দাঁড়াবে আবার’। ‘একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা’ কবিতায় তিনি বনস্পতির কাছে মানুষকে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখার প্রার্থনা করেছেন: ‘পিতামহ বনস্পতি;/ বিনীত সন্তানে তুমি দাও এই বর/ সূক্ষ্ম শরীর ধরে এই মাঠেÑ/ যেন আমি বেঁচে থাকি অনেক বছর’।
মানবিক কবি আহমদ ছফা কবিতা রচনা করা ছাড়াও বিদেশি কবিতাও অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর অনূদিত ‘ফাউস্ট’ কাব্যনাটকের কথা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ‘ফাউস্ট’-এর মূল কবি য়োহান ভোলফগাঙ ফন গ্যোতে। আহমদ ছফা এই জার্মান কবির ‘ফাউস্ট’ অনুবাদ করে প্রকাশ করেন ১৯৮৬ সালে। ছফা এই অনূদিত ‘ফাউস্ট’-এর ভূমিকায় লিখেছেন: ‘আক্ষরিক অনুবাদ আমি করিনি। ভাবানুবাদ করেছি, একথাও সঠিক নয়। ফাউস্টকে জার্মান পরিপ্রেক্ষিত থেকে তুলে এনে বাঙালি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মধ্যে যাতে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সে রকমের একটি প্রচেষ্টা আমি করেছি। জার্মান ছন্দ অনুবাদ করার প্রশ্নই ওঠে না, কারণ সে যোগ্যতা হয়ত আমার কোনদিন জন্মাবে না। তাই বাংলা ছন্দ যেটা যখন স্বাভাবিক মনে হয়েছে, সেটিই ব্যবহার করেছি। কৃত্তিবাস, কাশীরাম, বৈষ্ণব কবিকুল, আলাওল, ভারতচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে আধুনিক কবিদের শব্দসম্ভার পর্যন্ত আমি অবলীলায় গ্রহণ করেছি। এই অনুবাদের কাব্যভাষাটির জন্য রবীন্দ্রনাথই যে আমাকে সর্বাধিক সাহায্য করেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। প্রাচীন ভাষারীতির সঙ্গে চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে একটা ক্লাসিক আবহ তৈরি করা যদি কৃতিত্বের কাজ হয়ে থাকে, সেটুকু আমি দাবি করতে পারি’।
আহমদ ছফা অত্যন্ত ভালবেসে এই অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেন। জার্মানের প্রচলিত লোককাহিনী অবলম্বনে রচিত ‘ফাউস্ট’-এর বিষয়বস্তুর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি প্রাগুক্ত ভূমিকায় লিখেছেন: “ফাউস্ট প্রথম খণ্ডের তুলনায় দ্বিতীয় অংশে বেশি ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ এবং দার্শনিক জিজ্ঞাসায় পরিপূর্ণ। কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ড সম্পর্কে কোন কথা বলার অধিকার উপস্থিত মুহূর্তে বর্তমান নিবন্ধকারের নেই। এই খণ্ডটি সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বলার জন্য সুদীর্ঘ সময়ের পঠন-পাঠন এবং চিন্তার যে পরিশ্রতি প্রয়োজন তার কোনটাই বর্তমান নিবন্ধকারের আওতার ভেতরে নেই। তাই অনিচ্ছায় আলোচনা প্রথম খণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। ফাউস্ট নাটকের প্রথম খণ্ডটি গ্রেচেন ট্রাজেডি হিসেবেও পরিচিত। একটি অবলা সরলা বালিকার গভীর প্রেমের মর্মান্তিক পরিণতি এই অংশের প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছে। গ্রেচেন চরিত্রটি গ্যোতের একটি অমর সৃষ্টি। শেকস্পীয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকের ওফেলিয়ার মনে যে আবেদন সৃষ্টি করে, গ্রেচেন চরিত্রও অনুরূপ ভাবাবেগ জন্ম দিতে সক্ষম। কোন কোন দিক দিয়ে ওফেলিয়ার চাইতে গ্রেচেন চরিত্রটি অনেক বেশি সুগঠিত, পরিপূর্ণ এবং বিকশিত মনে হওয়া একটুও অস্বাভাবিক নয়। এই গ্রেচেন চরিত্রের মধ্যে গ্যোতের প্রথম জীবনের এক প্রেমিকার ছায়াপাত ঘটেছে বলে সমালোচকেরা মনে করেন। ফাউস্ট নাটকের প্রথম অংশে গ্রেচেন ছাড়া অপর দুই প্রধান চরিত্র হলো ফাউস্ট এবং মেফিস্টোফেলিস। ফাউস্ট হচ্ছেন সংশয়-সন্দেহে দোলায়মান একজন পণ্ডিত। তার মনে প্রবল অন্তর্দ¦ন্দ্ব একদিকে পৃথিবীর আনন্দ-সুখ সবকিছু দুহাত ভরে ভোগ করতে চান, অন্যদিকে জীবনের নশ্বরতা এবং ত্যাগের বাণী তাঁর অন্তরাত্মায় হাহাকারের ঝড় সৃষ্টি করে। ফাউস্টের মনে যে ব্যাকুলতা তা অনেকেই গ্যোতের নিজের মনের ব্যাকুলতা বলে মনে করে থাকেন। গ্যোতে গোটাজীবন ধরে যে জিজ্ঞাসার হুলে দংশিত হয়েছেন, ফাউস্ট চরিত্রের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রশ্নভার জর্জরিত ব্যথাদীর্ণ মানসের ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন। এই নাটকের অপর প্রধান চরিত্র মেফিস্টোফেলিস। বাইবেল কথিত শয়তানের আরেক নাম মেফিস্টোফেলিস বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু গ্যোতের মেফিস্টোফেলিস বাইবেলোক্ত শয়তান বা রূপকথার মেফিস্টোর চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি। কারো কারো মতে, গ্যোতের প্রথম যৌবনের সাহিত্যগুরু হার্ডারের চরিত্রের অনুকরণে তিনি মেফিস্টোফেলিস চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আসলে মেফিস্টোফেলিস এবং ফাউস্ট উভয়েই গ্যোতের আপন সত্তার দুটি আলাদা অংশবিশেষ। সমাজবিজ্ঞান নির্ভর সাহিত্য-সমালোচকরা গ্যোতের মেফিস্টোকে আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা এবং বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার প্রতীক বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন। কেননা মেফিস্টো যন্ত্রবিজ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে মানব-সমস্যার সমাধান দিতে পারে, কাগজের মুদ্রার প্রচলন করে জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পারে। এই নাটকে পৃথি¦আত্মার অবতারণা গ্যোতের এক অভিনব পরিকল্পনা। এই পৃথি¦আত্মা আাসলে কোন শক্তির প্রতীক তা আজ পর্যন্ত অনেকটা অনির্ণীতই থেকে গেছে। মহাকবির মনের কি গূঢ় অভিলাষ ছিল কে বলতে পারে ? তবে বেশিরভাগ সমালোচকই মনে করে থাকেন এই পৃথি¦আত্মাকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎসস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়াই ছিল মহাকবির উদ্দেশ্য। মধ্যযুগের অবসানের পূর্বলগ্নে সমকালীন ইউরোপীয় তথা জার্মান সমাজের গোটা প্রতিচ্ছবিটিই এই নাটকে ফুটে উঠেছে”।
আহমদ ছফা কবি ও ফাউস্ট-এর অনুবাদ হিসেবে সার্থক।
সমাপ্ত
শামসুল আরেফীন : লোকগবেষক ও কবি; জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ