সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১০ জুন ২০২২ : করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যে বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, তাতে অনেক অসামঞ্জস্যতা দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
বিশাল ঘাটতির বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অবাস্তব ঠেকছে কারও কাছে। কেউ বলছেন, বিনিয়োগ কমিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর আশা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সঙ্কটের সমাধান কোন পথে আসবে, তাও দৃশ্যমান হচ্ছে না কারও কারও কাছে।
বাজেটে চমক হিসেবে পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে ফেরত আনার যে পরিকল্পনা আ হ ম মুস্তফা কামাল করেছেন, তার নৈতিকতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
গবেষণা সংস্থা সিপিডি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বাজেটে লক্ষ্যের প্রেক্ষিতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, তা অপরিপূর্ণ, নীতিকৌশলের পথনির্দেশনাগুলো অসম্পূর্ণ আর বিদ্যামান চ্যালেঞ্জগুলো অপর্যাপ্ত।
এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী স্লোগান তুলেছেন- ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।
নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত এ ব্যয়ের অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি; দেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।
আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সেজন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার মতো ঋণ করতে হবে সরকারকে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বড় চ্যালেঞ্জ: আহসান মনসুর
রাজস্ব আহরণ, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতার মধ্যে মধ্য মেয়াদে বাজেট সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
আহসান মনসুর বলেন, “এ বছরের (২০২১-২২) বাজেটে সরকার বলছে যে, এনবিআর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করবে, আসলে আমাদের হিসাবে তার চাইতে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা কম হবে; আরও কম হতে পারে।”
বাস্তবতার আলোকে সরকারকে বাজেটটাকে সংযমী করতে হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বৈদেশিক বাণিজ্যে বিশাল ঘাটতি আছে। আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির একটা বিশাল ধাক্কা আসছে। সবমিলিয়ে বাজেটের সাইজটাকে সরকারকে সংযত পর্যায়ে রাখতে হচ্ছে; যাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম হয়, আমদানি কম হয় এবং বাজেটটা যেন সম্প্রসারিত না হয়ে সঙ্কুচিত হয়।”
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রাজস্ব আহরণ। গত ১০ বছরের রাজস্ব বৃদ্ধিটা ১৩ থেকে ১৬ শতাংশের বেশি হয় না। এ বছর সেই রকমই হচ্ছে। যদিও আমদানিতে প্রচুর রাজস্ব পেয়েছে সরকার। তার পরেও সার্বিক প্রবৃদ্ধি কিন্তু ১৫/১৬ শতাংশই হবে।
আহসান এইচ মনসুরের ব্যাখ্যা, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হলে প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্য পূরণ করতে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে এনবিআরকে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৩০ শতাংশের মতো।
“৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনবিআর কোনোদিনও অর্জন করতে পারে নাই। আগামী বছর যেখানে অর্থনীতি হয়তো চাপের মধ্যে থাকবে, ব্যয়ের দিক থেকে সংযত হতে হবে, সাধারণ মানুষ হয়ত ব্যয়ের দিক থেকে সংযত হবে। সব মিলিয়ে বড় রকমের প্রবৃদ্ধি হবে না।”
প্রস্তাবিত বাজেটের সাড়ে সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়েও সন্দিহান এই গবেষক।
তিনি বলেন, “বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, সেটাও অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা আমার কাছে মনে হয় ক্ষীণ। বিশ্বজুড়েই কিন্তু একটা মন্দার ভাব চলছে। সমস্ত পৃথিবীই হয় মন্দার দিকে গেছে, না হয় অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ’র পূর্বাভাস বলছে, তাদের আগের পূর্বাভাস থেকে প্রবৃদ্ধি এক তৃতীয়াংশ কমে আসবে।”
জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি এবং প্রণোদনার পরিমাণ বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে ১৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে এর আকার করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
আহসান মনসুর বলেন, “সাবসিডিতে একটা বড় ধরনের চাপ আছে। যেটা ধরা হয়েছে সেটা কতখানি বাস্তবসম্মত তা নির্ভর করবে সরকার মূল্যগুলো কিভাবে ঠিক করে। তেলের, গ্যাসের দাম কত হবে?
“অনেক অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা আছে- এখানে। এগুলির কারণে এই বাজেটে ডেফিনিটিভ উত্তর বলে কিছু নাই এখানে। অবস্থা বুঝে মধ্যবছরে হয়ত ব্যবস্থাও নিতে হবে সরকারকে।”
বিনিয়োগ কমিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন বিনায়কের
চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ কমিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
তিনি বলেন, “২০২২-২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে একটি অদ্ভুত ব্যাপার আমি দেখছি। এখানে দেখা যাচ্ছে, আগের থেকে কম বিনিয়োগ করবে।
“২০২১-২০২২ সালের সংশোধিত বাজেটে দেখা যাচ্ছে জিডিপির তুলনায় দেশে বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কিন্তু এখন সেটাকে কমিয়ে দেখানো হচ্ছে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ। তার মানে ২০২২-২০২৩ সালে বিনিয়োগ আরও কমবে। কিন্তু আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ থেকে ৭ দশমিক ৫০ হবে।”
বিনিয়োগ কমিয়ে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে ‘অনেক শর্ত’ পূরণের বিষয় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং উল্টো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
“এখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২০২৩ সালের বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে টাকা আগের বছরের তুলনায় কমেছে। আগের বছরে পুরো বাজেটের ২৮ দশমিক ২ শতাংশ টাকা সামাজিক অবকাঠামো খাতে ছিল। এ বছর পুরো বাজেটের ২৭ দশমিক ১ শতাংশ টাকা সামাজিক অবকাঠামো খাতে দেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আগের বছরের বাজেটের অনুপাতে বরাদ্দ কমার কথা উল্লেখ করে বিআইডিএস মহাপরিচালক বলেন, “এসব হিসাব করলে বিনিয়োগ কমিয়ে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর বিষয়টি আমার কাছে বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না।”
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তাও ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেন বিনায়ক সেন।
“এছাড়া মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটাও আমার কাছে বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে না। এখন মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের উপরে। গত বছর ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই হিসেবে এই বাজেটের মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ সেটা বাস্তবসম্মত নয়।”
সম্ভাবনাময়, কিন্তু অসম্পূর্ণ: জাহিদ হোসেন
এবারের বাজেটে পোশাক খাতের মতো অন্যান্য রপ্তানি পণ্যেও একই কর্পোরেট কর হার করার প্রস্তাবকে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে দেখছেন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, এতদিন ধরে রপ্তানি পোশাক খাত ১২ শতাংশ হারে করপোরেট কর সুবিধা ভোগ করে আসছিল। আর পরিবেশবান্ধব হলে এই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে প্রস্তাবিত বাজেটে অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কর হারের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জাহিদ হোসেনের চোখে বাজেটের দ্বিতীয় চমক হচ্ছে শিল্পের কাঁচামালের ওপর উৎসে কর উল্লেখযোগ্য হারে কমানো। করপোরেট কর হার আবারও আড়াই শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্তকে তৃতীয় চমক হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
এবার ভর্তুকির বরাদ্দে ‘উদারতা’ রয়েছে মন্তব্য করে জাহিদ বলেন, “বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং সারে, যাতে বিদ্যুৎ এবং সারের দাম বাড়াতে না হয়। এই বরাদ্দ না দেওয়া হলে বর্তমানের মুল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেত এবং সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা ছিল।”
তবে দেশে ডলারের যে সঙ্কট চলছে, সে বিষয়ে বাজেটে দৃশ্যমান কিছু না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমাতে ফুল, ফল, প্রসাধনী ও আসবাব পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি।
“এ চারটি পণ্য মধ্যবিত্তরাই বেশি ব্যবহার করেন। সেখানে আমদানি কিছুটা কমলেও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। সরকার যদি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধনের সিদ্ধান্ত নিতে পারত, তাহলে এক ঢিলেই দুই পাখি মারতে পারতেন।
“সরকারের চলতি ব্যয় এবং সরকারের যেসব ব্যয়ের প্রয়োজন নেই বা অপচয় হয়, এমন ব্যয় কমিয়ে আমদানি এবং ডলারের চাপ দুটোই কমাতে পারতেন। কিন্তু বাজেটে সরকারি এসব ব্যয় কমানোর খুব একটি লক্ষণ আমরা দেখি নাই।”
সবমিলে এবারের বাজেটকে ‘সম্ভাবনাময়, কিন্তু অসম্পূর্ণ’ বলে অ্যাখ্যা দেন তিনি।
এবারও সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষক জাহিদ।
তার ভাষায়, “এই বরাদ্দ কিন্তু অনেক বড় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার। গত বছরের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ বাড়লেও আকারটা কিন্তু বিরাট।
“এই বরাদ্দ সুফল পেতে হলে এটা যাতে সুবিধাভোগীদের কাছে দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে এবং সময় মতো পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ। অতীতে ছিল এই চ্যালেঞ্জ, বর্তমানেও আছে।”
এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণকে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, “এতে রিটার্ন দাখিল করার ধমকাধমকি ছাড়া রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য তেমন কোনও উদ্যোগ নেই।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সুবিধা দেওয়া অনৈতিক: সেলিম রায়হান
বাজেটে শর্তসাপেক্ষে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সুযোগ সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনমিক মডেলিং-সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
তিনি বলেছেন, “কারণ এটা সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে এবং যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে তারা ডাবল রিঅ্যাওয়ার্ডেড হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্লোবাল এক্সপেরিয়েন্স খুব ভালো নয়।
“অর্থনীতি যদি অসম্ভব ক্রিটিকাল পর্যায়ে যায়, যেমন- যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, বড় ধরনের গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে – এমন পরিস্থিতিতে এধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির তো একটা শক্ত ভিত্তি আছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়, এধরনের প্রভিশন নৈতিকতার সঙ্কট তৈরি করে। এই জায়গাটায় আরও সতর্ক হওয়া দরকার এবং আমি আশা করব, এটাকে তুলে নেওয়া হবে।”
প্রস্তাবিত বাজেটে বৃহৎ শিল্পের জন্য কিছু কর সুবিধা দেওয়া হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং মূল্যস্ফীতির অভিঘাতের শিকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য খুব বেশি কিছু নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক সেলিম।
বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ শিক্ষক বলেন, “সামগ্রিকভাবে মোটামুটি প্রতিবছর যেমন বাজেট হয়, তেমনই হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কিছুটা রিফ্লেকশন আছে। কিন্তু এখন মূল্যস্ফীতির কারণে ও জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে যারা খুব কষ্টে আছে তাদের জন্য এই বাজেটে খুব স্বস্তিদায়ক খবর নেই বললেই চলে।”
কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বিষয়টিকে গতানুগতিক হিসাবেই দেখছেন সেলিম রায়হান।
সরকার ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে নীতি গ্রহণ করেছে তা ‘ভুল’ ঠেকছে সেলিম রায়হানের কাছে।
তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে যে, মূল্যস্ফীতিকে ঠিক করার জন্য সাপ্লাই বাড়ানো হবে এবং ডিমান্ডের গ্রোথ কমানো হবে। এখানে আমার মনে হচ্ছে যে, মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে একটা ভুল ধারণা, কারণ বর্তমান মূল্যস্ফীতি হচ্ছে কস্টফুল, নট ডিমান্ডফুল। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই মূল্যস্ফীতি হয়নি। মানুষের চাহিদা কমানোটাই যদি টার্গেট করা হয়, তাহলে তো মূল্যস্ফীতি নিয়ে এটা একটা রং পলিসি হবে।
“কোভিডের কারণে যেসব মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে ,তারা কীভাবে আগের জায়গায় ফিরে আসবে? এটাকে রিভিজিট করা প্রয়োজন বলে মনে করি।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়: সিপিডি
মহামারী আর ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আমরা পুরো বাজেটে দেখেছি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত নয়। আমরা বাজেট প্রস্তাবনায় বলেছিলাম, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যর উপর থেকে বিভিন্ন ধরনের কর আছে তা উঠিয়ে ফেলা। কিছু কিছু পণ্য থেকে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
“আমরা দেখেছি গম ছাড়া আর কোনো পণ্যে কর ছাড় দেখা যাচ্ছে না। আমরা বলেছিলাম চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর উপর কর ছাড় দেওয়া।”
কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোয় সিপিডির তরফে স্বাগত জানানো হলেও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
“অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করা হবে’। এর মানে হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। এই সময়ে এটি বাড়ালে তা জনগণের উপর ব্যয়ের চাপ বাড়াবে।
“সামাজিক সুরক্ষা খাতে এবার অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে কম। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়েও কমানো হয়েছে। অথচ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত যারা, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য যেগুলো সহায়ক; তাদের জন্য করা হয়নি।”
সার্বিক বিশ্লেষণে সংস্থাটি বলেছে, “যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, তা অপরিপূর্ণ, নীতিকৌশলের পথনির্দেশনাগুলো অসম্পূর্ণ আর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো অপর্যাপ্ত।”
মেগা প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়বে: ফিকি
প্রস্তাবিত বাজেটে মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
সংগঠনটি বলছে, “এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও খরচ দুটিই বৃদ্ধি পাবে। এর চেয়ে প্রকল্পের খরচ না কমিয়ে ব্যয়ের ক্ষেত্রে গুণগত মান বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্বারোপ করলে মেগা প্রকল্প ঘিরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বাস্তবায়ন সক্ষমতার উন্নয়ন হবে।”
তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দকে ইতিবাচক হিসেবে মূ্ল্যায়ন করে ফিকি বলছে, “বর্তমান অস্থির সময়ে এই সহায়তা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তাদের জীবন-যাপনে সহায়ক হবে। এতে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা আবশ্যক।”
শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহে ও কর্পোরেট করে ছাড় দেওয়াকেও স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি।
“কোম্পানির মুনাফা থেকে কর্মীদের অংশ দেওয়ার তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) অর্থ জমা দেওয়ার জন্য একটি সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন। যারা বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করবে। বিষয়টি শ্রম আইনে বলা হয়েছে।”
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D