জানা অজানার রবীন্দ্রনাথ–২৪

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২২

জানা অজানার রবীন্দ্রনাথ–২৪

সুচিন্ত‍্য চট্টরাজ |

১৯২১ সাল। রবীন্দ্রনাথ তখন মিউনিখে। একজন অস্ট্রিয়ান ভদ্রমহিলা Hugo Heller এলেন তাঁর কাছে অস্ট্রিয়ায় বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ নিয়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া তখন অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল। মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। হাপ্স্বুর্গ রাজত্বের আনন্দোচ্ছল ভিয়েনা তখন এক অভিশপ্ত শহর। অধিবাসীদের পরণে জীর্ণ পোশাক,পুষ্টির অভাবে জরাজীর্ণ শরীর। কিন্তু শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণ রুদ্ধ হয়নি। থিয়েটার, কনসার্ট, অপেরা, বক্তৃতাসভায় মানুষ টিকিট কেটে উপস্থিত থাকে, অর্ধাহারে থেকেও।

Hugo Heller বললেন রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি,তাঁর কথা যুদ্ধ-পীড়িত
মানুষগুলোর মনে শান্তির আশ্বাস যোগাবে।

কিন্তু অতি ব‍্যস্ত কর্মসূচির মাঝে অস্ট্রিয়া যাবার সময় বার করা রবীন্দ্রনাথের পক্ষে একান্তই অসম্ভব। কিন্তু ভদ্রমহিলা কোনও কথাই শুনবেন না। তিনি শুধু বলেন আমাদের সারা দেশ অপেক্ষায় আছে আপনার আগমনের পথ চেয়ে। যদিও আমরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত তবুও এক সপ্তাহ অভুক্ত থেকেও আমরা আপনার বক্তৃতার জন‍্য সম্মানমূল‍্যের ব‍্যবস্থা করব।

রবীন্দ্রনাথকে রাজি হতেই হল। অস্ট্রিয়া গেলেন তিনি মানবধর্মের বাণী বহন করে। যুদ্ধের পীড়নে অস্থির মানুষ তাঁর কথা শুনলেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। রবীন্দ্রনাথ পড়লেন মূল বাংলা কবিতা, পরে তার ইংরেজি অনুবাদ। সভায় তিলধারণের জায়গা ছিল না। তাঁকে দেওয়া হল মোটা অংকের সম্মানদক্ষিণা। তিনি তা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন অস্ট্রিয়ার অভুক্ত শিশুদের মুখে কিছু অন্ন তুলে দেওয়ার জন‍্য যেন সেই অর্থ ব‍্যয় করা হয়।

রবীন্দ্রনাথের এই মানবিক আচরণ তৎক্ষণাৎ গোটা অস্ট্রিয়ার মন জয় করে নিল।

এর কিছুদিন আগের কথা। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাষণমালার জর্মন অনুবাদ করেছেন হেলেনে মায়ার-ফ্রাঙ্ক (Flustern Der Seele–Whisperings of the Soul)। প্রথম সংস্করণের দশ হাজার কপি সম্পূর্ণ নিঃশেষিত কয়েক দিনের মধ‍্যে। রবীন্দ্রনাথের প্রাপ‍্য রয়ালটি দশ হাজার মার্ক তিনি দান করে দিলেন বার্লিনের Deutsche Kinderhilfe (German Children’s Aid)এবং ম‍্যুনিখ Kinderhilfe কে সমানভাবে।

রবীন্দ্রনাথের এই সাহায্যের ঘোষণার সময় সমবেত শ্রোতৃমন্ডলীর করতালি থামতেই চাইছিল না।

তথ‍্যঋণ- On the Edges of Time–Rathindranath Tagore
রবিজীবনী- প্রশান্তকুমার পাল (অষ্টম খন্ড)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ