বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২২ জুন ২০২২ : সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম মানিক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ সংবাদপত্রে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, গত ৩/৪ দিনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ৪৮ ঘন্টায় ১৭২ মিলিমিটার বিরামহীন বৃষ্টি হয়েছে। এলাকার ভুক্তভোগী লোকজনের মতে, জুন মাসে ১২০ বছরেও এমন অঝোর বৃষ্টি বয়স্করাও দেখেননি। ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে সিলেট বিভাগের সবকটি জেলায় প্রবেশ করছে। একারণে সিলেট শহরের প্রায় সব ঘরদোর, ওসমানি বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিপনিবিতান, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ সবকিছুই পানিতে তলিয়ে যায়। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আচমকা এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা কেউ ভাবতেই পারেনি। অন্যদিকে দেশের উত্তারঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে গোটা দেশের নদনদীর পানি। ইতোমধ্যে তিস্তা ও ব্রহ্মপূত্র অববাহিকার ৫ জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এ অববাহিকার চরাঞ্চচলের অসংখ্য পরিবার ইতোমধ্যে হয়েছে পানিবন্দি। তিস্তা অববাহিকার পরিস্থিতি সিলেটের মতো না হলেও উজানে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। স্মরণকালের বিরামহীন ভারি বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। মানুষের খাদ্য সংকট চরমে। গবাদিপশুর অবস্থাও শঙ্কটাপন্ন। তিস্তা- ব্রহ্মপূত্র-পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
নেতৃবৃন্দ বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনায় সামরিক বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ইতোমধ্যে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় শামিল হয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ সরকারের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পানিবন্দি মানুষ ও গবাদিপশুকে দুর্গত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার দাবি জানান। উচুস্থানের জায়গায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুদল ভবনে “আশ্রয়কেন্দ্র” খোলার পরামর্শ দেন নেতৃবৃন্দ। আশ্রয় কেন্দ্রে সুপেয় পানি, খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রীসহ ওষুধপত্র সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নেতৃবৃন্দ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের অব্যাহত বিরূপ অভিঘাত মোকাবেলায় ঢলের পানি সংরক্ষণে সিলেটসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে জলাধার নির্মাণ, নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর খনন ও দখলমুক্ত করার কাজটিকে “সর্বাধিক” গুরুত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়নের কথা বলেন। সেচ কাজে ভূ-উপরোস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত, পানি ব্যবস্থাপনায় কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় গড়ে তোলার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষক, মাছ-সবজি চাষি, গরু খামারি, পোল্ট্রিসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা স্কিম ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি চালুর জন্য সরকারকে এক্ষুণি পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান।
তিস্তার দুর্গতি ও দু:খের কথা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিস্তাকে সুরক্ষা করা না হলে, তিস্তার শাখা-প্রশাখা খনন-দখল ও দূষণমুক্ত করা না গেলে, তিস্তার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন তিস্তার শাখা-প্রশাখার সংযোগ পুন:স্থাপন করতে না পারলে আগামীতে শুধু তিস্তাপারের মানুষজনই পানিতে ঢুবে থাকবেনা, বিভাগীয় নগরি রংপুরসহ তিস্তা অববাহিকার সব জেলা পানির নিচে ঢুবে যাবে।
তিস্তা প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, বছরের পর বছর তিস্তা চুক্তি হচ্ছেনা। দুই দেশ মিলে অববাহিকাভিত্তিক যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। আবার তিস্তা নদী খননের যে সমীক্ষা সরকার করেছে তার বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হচ্ছেনা। কি সেই ভূ-রাজনৈতিক বাঁধা!(?)।
নেতৃবৃন্দ কলক্ষেপন না করে তিস্তার দু:খ মোচনে তিস্তা অববাহিকার সোনার কৃষি ও কোটি মানুষের জান বাঁচাতে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (মহাপরিকল্পনা) কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
Post Views:
১৮৯