প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১:১১ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২২

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৯ জুন ২০২২ : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ‘গেদুচাচা’ খ্যাত কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০২০ সালের ২৯ জুন ৭০ বছর বয়সে নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

জনজীবনভিত্তিক ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ নামে কালজয়ী কলাম লিখেছেন তিনি। বিপুল পাঠকপ্রিয় এ কলামটির জন্মের লক্ষ্যই ছিল ভিমরুলে ঢিল ছোড়া। গতি ছিল স্রোতের উজানে, বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের ভেলার মতো।

Manual8 Ad Code

সংশপ্তক এই কলমযোদ্ধার জন্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার গতিয়া পূর্ব সোনাপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। পিতা এটিএম খোন্দকার ওবায়দুল হক এবং মাতা সৈয়দা আজিজুন নেছা খানম। তাঁর শিক্ষাবিদ পিতার পূর্বপুরুষ ছিলেন বাগদাদের অধিবাসী।

প্রখ্যাত এই সম্পাদক ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট, লেখক ও কবি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক-শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী ও সমাজসংস্কারক, উনসত্তরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তুখোড় ছাত্রনেতা। ধর্মীয় পন্ডিতও। তাছাড়া অটুট স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রণাঙ্গনে সম্মুখসমরে লড়াকু অকুতোভয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা অসীম সাহসে নিজ জেলা ফেনীতে প্রথম উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

Manual8 Ad Code

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, গণতন্ত্রের ধারক ও বাঙালির বাতিঘর আপসহীন সংগ্রামী এই প্রবাদপ্রতিম পুরুষটি বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে এক উজ্জ্বল তারকা। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন।

আজকের সূর্যোদয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ছাড়াও ছিলেন জি-নিউজ ওয়ার্ল্ড এবং রূপসী বাংলা টিভির পরিচালক। তাছাড়া ওয়ার্ল্ডওয়াইড অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিইও, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যস্ত সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী সিনিয়র সদস্য, হিউম্যান রাইটস গ্রুপ- বাংলাদেশের মহাসচিব, চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম- ঢাকার সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্ত্রীয় কমিটির সম্পাদক, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান, কয়েকটি বিদেশি গণমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের গুরুদায়িত্বে ছিলেন তিনি।

Manual3 Ad Code

প্রখ্যাত এই সম্পাদক এ সকল পরিচয় ছাপিয়ে বন্ধুর পরিবেশেও অক্লান্ত সারথির মতো লিখে হয়ে উঠেছিলেন আমজনতার গেদুচাচা, সবচেয়ে পাঠকপ্রিয় কলাম লেখক এবং মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সত্যনিষ্ঠ নির্লোভ নির্ভীক সাংবাদিকতার কিংবদন্তি।

যাত্রালগ্নেই ‘গেদুচাচা’ ছদ্মনামের আড়ালে সামরিক স্বৈরশাসক আর শোষকশ্রেণির মনে হৃদকম্পন জাগাতেন যেমন, তেমনি ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জাতীয়তাবোধের স্ফুরণ ঘটিয়ে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ী করে তুলতেন।

‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ কলামটি ছিল বিশ্বসাংবাদিকতায় এক অনবদ্য সৃষ্টি। এ কলামে থাকত গণমানুষের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-বেদনা, দাবি-দাওয়া। আর থাকত সমাজ ও সরকারসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের যতসব অনাচার-অসঙ্গতি, ভুল-ভ্রান্তি, অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা ও জুলুমের বিরুদ্ধে অনিরুদ্ধ এক গতি। এতে হয়ে উঠেছিলেন ৬৮ হাজার গ্রামের মুখপাত্র ও অভিভাবক।

আশির দশকে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে কঠিন খারাপ সময়ে রাঙা প্রভাতের অঙ্গীকারে ধূমকেতুর শক্তিতে ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ কলামটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। তখন দেশ চলছিল দুর্দান্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মুখোশে নির্ভেজাল ডিক্টেটরি স্টাইলে। তখন সাংবাদিকতাও ছিল গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামেরই অংশ।

সামরিক জান্তা জেনারেল এরশাদের ওই স্বৈরশাসনামলের এক বেয়াড়া সময়ে সাপ্তাহিক ‘সুগন্ধা’ সম্পাদনাকালে ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ শিরোনামে চিরায়ত গেঁয়ো ভাষায় ব্যতিক্রমধর্মী সাড়া জাগানিয়া এই কলামটি প্রবর্তন করা হয়।

টক-ঝাল-মিষ্টি মেখে ও নিজস্ব ভাষাভঙ্গিতে উপস্থাপিত খোন্দকার মোজাম্মেল হক ‘গেদুচাচা’ হয়ে মানুষের মনের কথাকে দরদী ভাষায় উপস্থাপন করতেন তীর্যকভাবে। পাশাপাশি কলামে উপস্থাপন করতেন রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের স্বৈর রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের গঠনমূলক সমালোচনা শুধু নয়, বাতলে দিতেন এর সঠিক সমাধানের পথও।

তিনি খালেদা-তত্ত্বাবদায়ক-হাসিনা শাসনামলেও সমাজে, রাষ্ট্রে ও সরকারে ঘটে যাওয়া চুম্বকাংশ তৃতীয় নয়নে গেদুচাচার মুখেই যেন নিজের মতামত ও পরামর্শ এক অভিনব কায়দায় বলে যেতেন। যা লিখতেন, তা পরিমিত কিন্তু চৌকস ভাষায় যুক্তিগ্রাহ্য করে খোলাখুলিভাবেই লিখে গেছেন।

Manual4 Ad Code

নিশ্চিতভাবে নব্বই দশকের গোড়াতে ‘সুগন্ধা’ পত্রিকা ছেড়ে প্রথমে ‘সূর্যোদয়’ এবং পরে ‘আজকের সূর্যোদয়’ পত্রিকা বের করে এ এযাবৎকাল লাভ করেন জনমতকে প্রভাবিত করার দুর্লভ ক্ষমতা। জাতীয় স্বার্থের প্রতি অবিচল ও দায়িত্বশীল থেকে যুক্তির ভাষায় প্রতিটি ইস্যু গণতান্ত্রিক ফয়সালার দিকনির্দেশনা দিতেন।

খোন্দকার মোজাম্মেল হক-সৃষ্ট গেদুচাচা চরিত্রটি সত্যিই এক অনন্য-অনবদ্য সৃষ্টি। সত্য ও ন্যায়ের বিক্রমী সাংবাদিকতার মূর্ত প্রতীক গেদুচাচা। তাঁর পরিচয় একজন কলাম লেখক ও সাংবাদিক-সম্পাদক হলেও তাঁর ভূমিকা ছিল একজন ‘স্টেটসম্যান’ – এর মতোই অসামান্য।

বিশ্বনন্দিত ‘গেদুচাচার খোলাচিঠি’ কলামের পাশাপাশি একই পত্রিকায় তিনি সুসংবাদ-দুসংবাদ, সিদ্ধিবাবার উপলব্ধি, ক্রসকানেকশন, স্বর্গ-নরকসহ একটি ধর্মীয় কলাম লিখে গেছেন। আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বৃহত্তর নোয়াখালী সম্পাদক পরিষদ-ঢাকার পক্ষ থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করার কথা রয়েছে।

এদিকে পরিবারের পক্ষে প্রয়াত গেদুচাচার আত্মার শান্তি কামনা করে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code