মজুরী বৃদ্ধিসহ দ্রুত চুক্তি না হলে সব বাগানে ধর্মঘটে যাবে চা শ্রমিক ইউনিয়ন: আলটিমেটাম নেতাদের

প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২২

মজুরী বৃদ্ধিসহ দ্রুত চুক্তি না হলে সব বাগানে ধর্মঘটে যাবে চা শ্রমিক ইউনিয়ন: আলটিমেটাম নেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ০১ অাগস্ট ২০২২ : “চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরীসহ চার্টার অব ডিমান্ড পেশ করা হয়েছে ১৮/১৯ মাস পূর্বে। অালোচনার টেবিলে দরকষাকষি সন্তোষজনক নয়। এ পর্যন্ত ২৩ দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি নেই। এমতাবস্থায় ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যদি নতুন কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন করা না হয়, তাহলে আমরা সারা দেশের চা শ্রমিকদের নিয়ে চা বাগানে কর্মবিরতি সহ বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিবো। সব চা বাগানে ধর্মঘটে যাবো।“
সারাদেশের চা শ্রমিকদের সম্মানজনক ও গ্রহণযোগ্য মজুরী বৃদ্ধি সহ অবিলম্বে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের দাবীতে শ্রীমঙ্গলে অায়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সোমবার (১ আগস্ট ২০২২) বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর লেবার হাউসে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি এবং সংগঠনের বালিশিরা ভ্যালীর সভাপতি বিজয় হাজরা ও জুড়ি ভ্যালীর সভাপতি শ্রীমতি বাউরি প্রমুখ।

এসময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের ৭টি ভ্যালীর (বালিশিরা ভ্যালী, লস্করপুর ভ্যালী, সিলেট ভ্যালী, চট্রগ্রাম ভ্যালী, মনু-ধলই ভ্যালী, লংলাভ্যালী ও জুড়িভ্যালী) সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে চা শ্রমিক নেতারা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে আমাদের শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারের অনেক খরচ। একটি জিনিস কিনলে অন্যটি কিনতে পারছেননা তারা। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অার বারবার তালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফোঁসে উঠছেন। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের সংগঠনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন সাপেক্ষে মজুরী বৃদ্ধি করার নিয়ম থাকলেও মালিকপক্ষ অাইন ভঙ্গ করছেন। এমতাবস্থায় আমরা বাংলাদেশীশ চা সংসদের সাথে অালোচনায় বসবো। চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরী করার দাবীটি পুনরায় উত্থাপন করবো। যদি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোন আশানুরুপ কাজ না হয়, আমরা সারাদেশের চা শ্রমিকদের সাথে নিয়ে চা বাগানে কর্মবিরতি সহ বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিবো। সব চা বাগানে ধর্মঘট করা হবে।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেতারা বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগ থেকেই আমরা সরকারের শ্রম অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দিয়েছি। যেন মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক দিন অাগেই। তাও অনেক দিন চলে গেছে। আমরা বারবার তাদের কাছে নির্বাচনের জন্য যাচ্ছি। শ্রম অধিদপ্তর আমাদের বলেছে নির্বাচনের জন্য যে ফান্ড প্রয়োজন সেটা তাদের এই মুহুর্তে না থাকায় নির্বাচন দিতে পারছেন না। এখন আমরা নিজেরা যদি নির্বাচনের আয়োজন করি তাহলে সেটা বির্তকিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে বিধায় আমরা তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করছি। আমরা নির্বাচনটির জন্য বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছি। যেন তারা উদ্যোগ নিয়ে আমাদের একটি সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দেন।

শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির বিষয়টি মূলত মালিকপক্ষের সাথে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মোতাবেক হয়ে থাকে। সেখানে আমরা প্রভাব বিস্তার করতে পারি না। কিন্তু তারা যদি আমাদের কাছে বিচার প্রার্থী হয়, সেক্ষেত্রে আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে মিমাংসা করতে পারি।

নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর নির্বাচন সাধারণত তারা নিজেরাই করে থাকে। সরকার তাদের নির্বাচন করে দিতে বাধ্য নন। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেহেত একটি বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা নিয়ে লাখো শ্রমিক সম্পৃক্ত, সেক্ষেত্রে সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা অতীতে করে দিয়েছিল। এবছর আমাদের কাছে তারা নির্বাচনের জন্য এসেছিলো। আমরা অর্থ মন্ত্রনালয়ে এই খরচের জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে অর্থ না পাওয়ায় এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় কিছুই নেই। চা শ্রমিক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ দায়িত্ব মেয়াদ উত্তীর্ণের অাগেই তা অনুষ্ঠান করার কথা তাদেরই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ