বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: হাসানুল হক ইনু

প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২২

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড: হাসানুল হক ইনু

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৪ অাগস্ট ২০২২ : “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেনি, খুনীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকেই হত্যা করে পাকিস্তানী আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিল। তাই খুনীরা সংবিধান থেকে চার নীতি মুছে ফেলে।”
জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে অায়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তৃতায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির উদ্যোগে আজ রবিবার (১৪ আগস্ট ২০২২) বিকাল ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট সেমিনার হলে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ জননেতা আমির হোসেন আমু এমপি।
আরও বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদ (খাজা) এর আহবায়ক রেজাউর রশীদ খাজা, জাসদের সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোহসীন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মোঃ নুরুন্নবী, ঢাকা মহানগর দক্ষিন জাসদের সভাপতি হাজি ইদ্রিস ব্যাপারি, জাতীয় কৃষক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভপতি নুরুল আমিন কাওসার, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল কবীর স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ননী-মাসুদ) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নু।

প্রধান অতিথির ভাষনে আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরে খালেদা জিয়ার ১০ বছর, বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যারা দেশ পরিচালনা করেছেন, তাদের ধারাবাহিকতা, তাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষন, মেন্টাল সব কিছু ছিলো পাকিস্তানী ভাবধারা এবং সেই পাকিস্তানী ভাবধারাই প্রধান্য পেয়েছে। খালেদা জিয়ার ১০বছরে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। আর বিকৃত ইতিহাস রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এদেশের যা কিছু অর্জন তা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এ দেশের মানুষের মনের ব্যাথাকে বাদ দিয়ে একটি নতুন ধারা দিতে চেয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিএনপি নব্য পাকিস্তান নয়, পাকিস্তানের সাথে একটা কনফেডারেশন করার চেষ্টা করেছে। আজকে তারাই বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বিপদগামী করে এবং আন্দোলনের নামে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যা করে, দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক বিষবাস্পের মধ্যে টেনে নিতে চায়।
তিনি বলেন, তারা জাতীয় চার মূলনীতি বনবাসে পাঠিয়েছিল, তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুই একটি জায়গায় কিছুটা অসঙ্গতী-অসম্পূর্ণতা রয়েছে-এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই অসম্পূর্ণতার কারণটা আমাদের বুজতে হবে। সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা, দেশের অবস্থা পরিবর্তনের কারণেই সাধারণত এই অসম্পূর্ণতাটা জাতীয় চার মূলনীতিতে রয়েছে।

সভাপতির ভাষণে জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি, বিয়োগান্তক ঘটনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুনীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেনি, খুনীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকেই হত্যা করে পাকিস্তানী আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিল। তাই খুনীরা সংবিধান থেকে চার নীতি মুছে ফেলে। ইতিহাসের ভাগাড় থেকে কুখ্যাত দ্বি-জাতিতত্ত্ব, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তুলে এনে রাষ্ট্র ও সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়েছিল। খুনীরা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নামনিশানা মুছে দিতে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানপন্থী রাজাকার-আলবদরদের সমাজে-রাষ্ট্রে-রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পথে ঠেলে দেয়।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুনী মোস্তাক-জিয়ার পাকিস্তানপন্থার এই রাজনীতি এখনো বিএনপি বহন করে চলেছে। বিএনপি জামাতের হাত ধরেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তিতে আঘাত করে চলেছে। জনাব ইনু বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরেই ২০০৯ সালে মোস্তাক-জিয়ার চাপিয়ে দেয়া পাকিস্তানপন্থা থেকে বাংলাদেশকে বাংলাদেশের পথে ফিরিয়ে আনার রাজনীতি শুরু হয়েছে। তাই পাকিস্তানপন্থার মূল ঘাঁটি বিএনপি-জামাত পাকিস্তানপন্থাকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
ইনু বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তিকে নিরাপদ রাখতে হলে পাকিস্তানপন্থার রাজনীতির ঘাঁটি ও বিষবৃক্ষ বিএনপি-জামাতকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার পাশাপাশি জনগণের ঘরে ঘরে স্বাধীনতা ও উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেয়ার সংগ্রাম করতে হবে। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের কোন ভুল-ত্রুটি-সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই। জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন সচল রাখা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার-প্রশাসনে ভুল-ত্রুটি-সমন্বয়হীনতা দূর করা এবং দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের কঠোর হস্তে দমনের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু সমহিমায় জাগরুক থাকবেন এবং বাংলাদেশ তার স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাবে।

জনাব ইনু বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট সমাধানের সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব না দিয়ে বিএনপি-জামাত সংকটের ফলে জনজীবনে যে সাময়িক দুর্দশা ও কষ্ট বেড়েছ তা নিয়ে অমানবিক রাজনীতি ও সরকার উৎখাতের জন্য মাঠ গরমের রাজনীতিতে নেমেছে।
তিনি সংকটে অস্থিরতা ঝেরে ফেলে সংকট সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ