সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ১৬ অাগস্ট ২০২২ : মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির মধ্যে ৩০০ টাকা মজুরীসহ দাবীনামা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চলমান দরকষাকষি অালোচনাকে টেবিলে রেখে ও অাইনী প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ অাগস্ট ২০২২) বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খালেদ মামুন চৌধুরী।
শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল উপ-পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদিকুর রহমান, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল হক মুন্সি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল), শ্রীমঙ্গলের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদ্বীপ তালুকদার, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা, সিলেট ভ্যালি সভাপতি রাজু গোয়ালা, জুড়ি ভ্যালির সভাপতি কমল চন্দ্র বুনার্জি, চট্টগ্রাম ভ্যালির সভাপতি নিরঞ্জন নাথ প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।
দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে শ্রমিক নেতারা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, বর্তমান বাজারে সব ধরনের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তারা ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে যাবেন।
বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, আগামী ২৩ আগস্ট চা মালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে শ্রমিকদের দাবির পক্ষে তিনি কথা বলবেন বলে জানান।
তিনি চা শিল্প ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আগামী ২৩ তারিখ পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
এরপরই সাধারণ শ্রমিকরা বৈঠকে হট্টগোল শুরু করেন। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বৈঠক থেকে বের হয়ে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
পরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে কর্মবিরতির আহ্বান সাধারণ শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। আমরা আন্দোলন ও আলোচনা এক সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের অপর একটি অংশ রোববার দুপুরে চা শ্রমিক ইউনিয়ন অ্যাডহক কমিটির ব্যানারে ৫০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
পরে এডহক কমিটির সভাপতি ও রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জির নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি বিজয় বুনার্জি ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলরত শ্রমিক নেতাদের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ দাবি করে বলেন, তারা মালিক পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই শ্রমিক নেতারা চা মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে ১২০ টাকা মজুরির কাজ করে অট্টালিকার মালিক হয়ে গেছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি বিজয় বুনার্জি বলেন, গত ১৯ মাস থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে কোনো দাবি আদায় করতে পারেননি তারা। এখন আবার ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনের নামে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়েছেন।
বিজয় বুনার্জি আরো বলেন শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য ইউনিয়নের নেতাদের প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে মাসে ১৫ লক্ষাধিক টাকা ইউনিয়ন নেতাদের হাতে আসে। যে আন্দোলন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের করার কথা ছিল সে আন্দোলন শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে করবে কেন। বিজয় বুনার্জী শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ, ব্যর্থ এবং অবৈধ আখ্যায়িত করে তাদের দ্রুত পদত্যাগ করে লেবার হাউস ত্যাগ করার আহ্বান জানান।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি অনেক আগে থেকেই আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে আসছি।
তিনি শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
গত ১৩ আগস্ট সকাল থেকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রীমঙ্গলসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানে শ্রমিকরা একযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D