রীমুর মাকে লিখেছিলেন রুমীর মা

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২

রীমুর মাকে লিখেছিলেন রুমীর মা

মলয় ভৌমিক |

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন ৩ মে। জুনের ২৬ তারিখ তাঁর প্রয়াণ দিবস। শহীদ জননীর জন্মদিন থেকেই পুরনো ফাইল ঘাঁটতে শুরু করি। শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল।
১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভোররাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা জুবায়ের চৌধুরী রিমু শিবির ক্যাডারদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। এই নৃশংসতা দেশের সকল বিবেকবান মানুষকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়।
ঘটনার পরপরই শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নিহত রিমুর শোকাহত মা জেলেনা চৌধুরীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
চিঠিটি আমার মাধ্যমে তৎকালীন দেশের প্রধান প্রগতিশীল কাগজ ‘সংবাদ’এ ‘রিমুর মাকে লিখেছেন রুমীর মা’ শিরোনামে ছাপা হয় সে বছরই ১৮ অক্টোবরে।
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় ২৯ বছর আগে সংবাদ এ প্রকাশিত চিঠির কাটিংটি নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে তুলে ধরলাম। কাটিঙের ছবিতে চাপ দিলে সহজেই চিঠিটি পাঠ করা সম্ভব হবে। যাঁদের পড়তে সমস্যা, তাঁরা চিঠির অনুলিপি এখানেও পড়তে পারেন।
“চির চেনা বোন,
আপনি আমার অপরিচিত কিন্তু রিমুর শাহাদাতের ঘটনার মাধ্যমে আপনি আমার চির চেনা বোন হয়ে গেছেন। রিমুর মতো আমারও এক ছেলে ছিল বিশ বছরের টগবগে তরুণ– নাম ছিল রুমী, সে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চিরকালের মতো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। তার বিচ্ছেদ ব্যথা আমি বাইশ বছর ধরে ভোগ করছি।
পুত্র শোকের এই জ্বালা থেকে আমি আপনার মনের ব্যথা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। আপনাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই, সে চেষ্টাও আমি করবো না। শুধু এইটুকু বলবো– সময়ই আপনার এই শোককে শক্তিতে পরিণত করবে। যে অপশক্তি একাত্তরে সক্রিয় থেকে রুমিসহ তিরিশ লাখ বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করেছিল, তারাই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আপনার রিমুসহ হাজার হাজার তরুণকে হত্যা করে মায়েদের বুক খালি করছে। পুত্র শোকের বজ্রাঘাততুল্য শোককে বজ্রের শক্তিতে পরিণত করে এই ফ্যাসীবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”
#
মলয় ভৌমিক
অধ্যাপক | রাজশাহী

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ