আদিবাসী পল্লীতে হামলাকারী ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি

প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৩

আদিবাসী পল্লীতে হামলাকারী ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ : সমতলের আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত, আদিবাসীদের জানমাল নিরাপত্তা, বসতভিটা, কৃষিজমি রক্ষা, বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসীদের উপর হামলাকারী ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি ২০২৩) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আদিবাসী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনসমূহের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আদিবাসী সংগঠনসমূহ জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জনউদ্যোগ, আদিবাসী যুব পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদী সমাবেশে উপরোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়।
লেখক ও আদিবাসী নেতা রাখী ম্রং-এর সভাপতিত্বে আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিংহের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা ডা. দিবালোক সিংহ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বৃহত্তর ঢাকা কমিটির সদস্য সচিব বিভূতী ভূষণ মাহাতো, যুগ্ম-আহ্বায়ক বিশুরাম মুমূু, বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্নিদাস, জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল প্রমূখ

সমাবেশে সংহতি বক্তব্য দেন সিপিবি নেতা মিহির ঘোষ, আসলাম খান, মাজাহারুল ইসলাম, যুবনেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ছাত্রনেতা দীপক শীল প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ৮ জানুয়ারি থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল, গোড়তা, কেশবপুর, মরাদিঘী, জয়নগর গ্রামে ভূমি দখলকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের উপর নির্যাতন ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। গত কয়েকদিন হামলা চালিয়ে আদিবাসী ১৯ জনকে গুরুতর আহত করে। এসএ গ্রুপ ও মন্ডল গ্রুপ ভূমি দখলের জন্য সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। হামলায় নারী-পুরুষ শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যখন স্থানীয় প্রশাসন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, সকল পক্ষের সাথে বৈঠক করছেন, তখন ভূমিদস্যুদের সন্ত্রাসী বাহিনী উদ্যোগকে উপেক্ষা করে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের সাথে সমঝোতা বৈঠকের দুইদিন পর আবারও হামলা চালিয়ে কয়েকজন আদিবাসীকে গুরুতর আহত করা হয়। এতে সেখানকার আদিবাসীরা গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে। হাট-বাজার, কাজ-কর্মে এমন কি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। গতবছরের ডিসেম্বর থেকে ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের জমি দখলের পায়তারা করে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সেখানকার আদিবাসীদের উপর হামলা চালিয়ে আদিবাসীদের আহত করে ভূমি দখলের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আদিবাসীরা থানায় মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ করা হয়নি।
বক্তারা দাবি করেন এই ঘটনায় জড়িত ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যক আদিবাসীদের কেনো সাংবিধানিক স্বীকৃত নেই। তারা ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমিসহ অন্যান্য অধিকার ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ভূমিদস্যুরা আইনের মারপ্যাচে জোর করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করছে।
তিনি বলেন, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশন গঠন, সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত ও সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে, আদিবাসী সংগঠনসমূহ দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে করে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন।
সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাইবান্ধার বাগদা ফার্ম, শেরপুরের ভবানীপুরের আদিবাসীরা উচ্ছেদ আতংকে ভুগছে। মধুপুর ইকো পার্কের নামে বন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। এখন পর্যন্ত পার্বত্য চট্রগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও স্বাধীন দেশে অবহেলিত অসহায় এই নির্যাতিত নিপীড়িত আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ