সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ : “বিরাজমান সংকটের সমাধানে দরকার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।”
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৩) সকাল ১১টায় (ঢাকা সময়) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (Forum for Bangladesh Studies – FBS)-এর আয়োজনে ‘সংবিধান সংশোধনের রাজনীতি’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আইন কর্মকর্তা ড. রিদওয়ানুল হক এবং গবেষক আদিবা আজিজ খান। এছাড়াও ভার্চুয়ালী যুক্ত হন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান।
ওয়েবিনারের চ্যাটিংয়ে কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।” অামরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
মূল প্রবন্ধে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হয়েছিল। যেমন, ১৯৭২ সালের সংবিধান, সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংসদ বহাল রেখেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়, যার ফলে ভেঙে যায় রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’।
এরপর তিনি আদালতের এক রায়ের প্রেক্ষিতে বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ও কার্যাবলি, কমিটির সিদ্ধান্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে কমিটি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের গ্রহণযোগ্যতা ও আইনসিদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের বিধ্বংসী পরিণতি, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২১ জুলাই ২০১০ তারিখে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ১৫ জন সদস্যের বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকগুলোতে সদস্যদের বক্তব্য ছিল খোলামেলা, চিত্তাকর্ষক, যেখানে পুরো সংবিধান পর্যালোচনা ও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। কমিটি দশ মাসে মোট ১০৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামতও গ্রহণ করে। উক্ত কমিটি গঠনের ১১ মাস পর ১০ মে ২০১১ তারিখে আপিল বিভাগের এক সংক্ষিপ্ত আদেশে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শর্তহীনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে ভবিষ্যতের জন্য অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সংসদীয় বিশেষ কমিটির সদস্যগণ সর্বসম্মতভাবে এবং আমন্ত্রিত ১০৪ জন বিশেষজ্ঞসহ অতিথিদের প্রায় সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রেখেই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেন। সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৯ দিন পর, ২৯ মে ২০১১ তারিখে কমিটি একটি সর্বসম্মত সুপারিশমালা তৈরি করা হয়, যাতে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য বহাল রেখেই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করে। সর্বসম্মত সুপারিশ প্রণয়নের পরদিন, ৩০ মে ২০১১ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সদস্যগণ সাক্ষাৎ করে, এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে এবং সংসদ বহাল রেখেই পরবর্তী সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ৫ জুন কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। ৩১ মে তারিখে প্রধানমন্ত্রী একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। একই দিনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আরেক সংবাদ সম্মেলন উচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখা সম্ভব হবে না বলে দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি…আদালত বাতিল করেছেন…আইনের শাসন মানলে আদালতের রায় মানতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, সংসদ মনে করলে পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসতে পারে।’ (প্রথম আলো, ১ জুন ২০১১) এগুলো ছিল আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশের অপব্যাখ্যা। এরপর ৩০ জুন ২০১১ তারিখে সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২৯১-১ ভোটের ব্যবধানে ‘মেজরেটেরিয়ান’ পদ্ধতিতে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংশোধনীটি পাস করা হয়, যা ছিল ভয়াবহ স্বার্থপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত। সংক্ষিপ্ত আদেশের প্রায় ১৬ মাস পর, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য অসাংবিধানিক ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়, রায়ে সংসদের অনুমোদনের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী দুই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা ছিল সংক্ষিপ্ত আদেশের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। কারণ আদালত যেসব বিষয় আমলে নেয়নি যে তত্ত্বাবধায়ক ছিল দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল, একটি মীমাংসিত ও জনপ্রিয় বিষয়। আরও বিবেচনায় নেননি যে এর মাধ্যমে রিপাবলিকান ক্যারেক্টার (গণপ্রজাতন্ত্রী চরিত্র) রক্ষা পায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকরা আইনের ‘পলিটিকাল কোয়েশ্চান’ তত্ত্ব উপেক্ষা করেছেন, অতীতের আদালতের রায় উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। আদালত বিবেচনায় নেননি যে, তাঁদের সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদানের পরও, বিশেষ সংসদীয় কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অপরিহার্য মনে করে তা বহাল রেখেই সংবিধান সংশোধনের সর্বসম্মত সুপারিশ করেছিল। তাছাড়া আদালত অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করেছেন।’
যুক্তরাজ্যের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক বলা অযৌক্তিক। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত আদেশের অপব্যাখ্যার অনুকরণে পূর্ণাঙ্গ রায়ে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের অনুমতির শর্তটি জুড়ে দেওয়া ‘ফ্রড অন দ্য কোর্ট’ বা আদালতের সঙ্গে প্রতারণা এবং বিচারকের পেশাগত অসদাচারণ।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ‘লেজিটিমেসি’ বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ক্ষেত্রে গণভোট না করার ফলে জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত না হওয়া, সংসদ ও সংসদের বাইরে কোথায়ও সত্যিকারার্থে সুচিন্তিত বিতর্ক (ডেলিবারেশন) না হওয়া, অ্যামিকাস কিউরি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা, বিরোধী দলের মতামতের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, মীমাংসিত বিষয় ও জনমতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। একইভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যেমন, বিশেষ সংসদীয় কমিটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সুপারিশে পরিবর্তন, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন, ৭খ অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে ‘মৌলিক বিধানাবলি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সংশোধন অযোগ্য করা সংবিধানের লঙ্ঘন, কারণ এক সংসদ আরেক সংসদের হাত বেঁধে দিতে পারে না, ৭খ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে সংশোধন অযোগ্য করে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তত্ত্বের লঙ্ঘন, পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের ক্ষেত্রে গণভোট না করে সংবিধান লঙ্ঘন, অতীতের রায় লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের বিধ্বংসী পরিণতি হলো, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি ব্যর্থ ও একতরফা নির্বাচন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হওয়া এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সেস’ পদ্ধতি বা নজরদারিত্বের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়া। মূলত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে।’
প্রবন্ধের শেষভাগে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরাজমান সংকটের আশু সমাধানের জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন আরেকটি রাজনৈতিক বন্দোবন্ত। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যা থাকতে পারে তা হলো: ১. নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য, ২. সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, ৩. জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন-সহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা, কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ৪. আইনের শাসন নিশ্চিত ও মানবাধিকার সংরক্ষণ, ৫. রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরে আদালত যতগুলো রায় দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর রায় হলো ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়। এই রায়ের ফলেই আমাদের জনগণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে এবং আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে গেছে। আমি মনে করি, আগে থেকেই রায় ঠিক করে নিয়েঅ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে এবং অবাস্তব যুক্তির ভিত্তিতে তাড়াহুড়ো করে এই রায় দেওয়া হয়েছে।‘
তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক মানেই সবাইকে নির্বাচিত হতে হবে তা নয়। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য অল্প সময়ের জন্য অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। এত তাড়াহুড়ো করে পঞ্চদশ সংশোধনী বিলটি পাস করা হয়েছে যে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সঙ্গে অমিল রয়ে গেছে। মূলত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা টিকে থাকার জন্যই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এরফলে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে পাঁচ বছর পর আমরা একটা দিন নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের পছন্দের সরকার বাছাই করার সুযোগ পেতাম। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে সে সুযোগ রহিত করে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘যে কোনো সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ক্ষমতাসীনরাই এটি নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস-সহ বেশিরভাগ সংশোধনী পাসের ক্ষেত্রে গণভোট আয়োজন না করে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং অতি দ্রুততার সঙ্গে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাশ করা হয়েছে। তাছাড়া ১৯৮৯ সালের অষ্টম সংশোধনী ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদালত নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে সংকট রয়েছে তা হলো ২০১৪ সাল থেকেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া’। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
গবেষক আদিবা আজিজ খান বলেন, ‘বড় দুটি দলই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল। ১৯৯৫ সালে বিএনপি এর বিরোধিতা করে বলেছিল এটা অগণতান্ত্রিক। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আমরা দেখলাম বিএনপি সরকার বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে তোলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আদালতের এক সংক্ষিপ্ত রায়কে পুঁজি করে সংবিধান থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়।’ সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিল-সহ আরও কিছু দেশে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) বাংলাদেশ অধ্যয়ন এর সাথে সম্পৃক্ত একাডেমিক, বিশ্লেষক এবং গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম। এই ফোরাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয়ের ওপর গবেষনা, মতামত এবং নীতি-নির্ধারণ মূলক আলোচনার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। গবেষণামূলক অধ্যয়নের ভিত্তিতে ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, রাষ্ট্রীয় নীতি নিরীক্ষা করে এবং বাংলাদেশের সঙ্কট ও সম্ভাবনাকে উন্মোচন করে এমন প্রবন্ধ/নিবন্ধ এই ফোরাম প্রকাশ ও প্রচার করবে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D