দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন টার্গেটে এলাকামুখী আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরীক দলগুলো

প্রকাশিত: ১:৫৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২৩

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন টার্গেটে এলাকামুখী আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরীক দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৩ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, ন্যাপ (মোজাফফর), গণআজাদী লীগ, তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতা, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে এলাকামুখী হয়েছেন। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সবাই এবার এলাকামুখী যার যার অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের কাছে উন্নয়ন তুলে ধরে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সংগ্রামকে দখলে রাখার কৌশলমুখী হবে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো।

কোরবানির ঈদের পর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো। অন্যদিকে সরকারবিরোধীরাও রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তাই কোরবানির ঈদ ঘিরে রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশে শান্তি সমাবেশ, জনসভাসহ উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলো। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও গুজবের জবাব দেওয়া, সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির অতীতসহ আগুন সন্ত্রাসের কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের।

এদিকে ঈদুল আজহার দিন গণভবনে পারিবারিক আবহে সময় কাটাবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে শনিবার (১ জুলাই) সকাল ৮টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সড়ক পথে কোটালীপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন। তার সফর কর্মসূচি থেকে জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই সড়কপথে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ যাবেন। ২ জুলাই ঢাকায় ফিরবেন। এ সফরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। চলতি বছরে একাধিকবার তিনি টুঙ্গিপাড়ায় সফরে গেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ভোটারদের কাছে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলের নেতাকর্মী, সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গণসংযোগ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা আছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এমনটা ধরে নিয়েই রোডম্যাপ তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে চলছে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ। কী কী থাকবে ইশতেহারে সেগুলো সংযোজন-বিয়োজনের কাজ চলছে। তৃণমূলে চলছে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন। মূলত ইউনিট কমিটিই হলো ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি। কোরবানি ঈদের পরে গণভবনে বিভেদ-দ্বন্দ্বপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে সিরিজ বৈঠকে মতবিনিময় করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ইতোপূর্বেই তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে নানামুখী নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাদের কথা শুনছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন মাঠ জরিপের কাজ গুছিয়ে এনেছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকেই নৌকা উপহার দেওয়া হবে। সম্প্রতি গণভবনে কাতার ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভা সফর সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘শত ফুল ফুটতে দিক, যে ফুলটি সব থেকে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব, আমার উত্তর পরিষ্কার।’

দলীয় সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী পক্ষের নানামুখী অপতৎপরতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি, দ্রব্যমূল্য, লোডশেডিং,কূটনীতিক চাপসহ নানা ধরনের রাজনৈতিক অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টি হয়েছে। তাই কোরবানি ঈদের পরই টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি আগামী জাতীয় নির্বাচন পযন্ত পালন করে রাজপথ দখলের রাখার কৌশল রয়েছে। দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতারাও সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি রাজপথে পালন করবে।

এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এসবের সঙ্গে প্রশাসনকেও জড়ানো হচ্ছে। ঈদের পরে রাজধানী থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে আওয়ামী লীগের কোনো শাখার সম্মেলন হবে না। তবে যেসব স্থানে পূর্বেই তারিখ চূড়ান্ত ছিল শুধুমাত্র সেই শাখাগুলোর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিবারের ন্যায় এবারও রাজধানীতেই ঈদ করবেন। ঈদের দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তিনি ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের দিন কাটবে। এরপর সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে অংশ নেব।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য ঈদের মতো এবারও এলাকার নেতাকর্মী, আত্মীয় স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও তার নির্বাচনি এলাকা মাদারীপুর গেছেন। ঈদের দিন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এরাবও আমাদের মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে ঈদের খুশি সরবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তার নিজ নির্বাচনি এলাকা জয়পুরহাটে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। তিনি বলেন, ‘দেশে থাকলে নিজ এলাকায় ঈদ পালন করার চেষ্টা করি। সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও মানুষের সঙ্গে ঈদের জামাতে একত্রিত হওয়ার আনন্দ সবসময় আলাদা থাকে। আর মাননীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকেই ঈদের খুশি এবারও আমরা সারাদেশে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করব।’

কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান

জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান বলেন, “নতুন এক অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, উন্নয়ন সমৃদ্ধি অগ্রযাত্রার স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি আর্থসামাজিক টেকসই কর্মসূচি প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়নের রোডম্যাপসহ ২১ দফা দাবীতে বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন এক দায় নিয়ে সকল বিভাগসহ জেলা-উপজেলায় চলছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির গণসংযোগ। এছাড়াও এ গণসংযোগ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ও হচ্ছে মৌলভীবাজার শহর, সদর উপজেলা, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া ও রাজনগরে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি সহ সকল স্তরের জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশী।”