বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: মেনন

প্রকাশিত: ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৩

বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: মেনন

Manual4 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ০৭ আগস্ট ২০২৩ : বিএনপির এক দফা দাবির বিরুদ্ধে জোটগতভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও মাঠে নেমেছে। ক্ষমতাসীন এই জোট ৭ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশ করেছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৪ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কাদির কল্লোল।

প্রথম আলো: বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোটের এক দফা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপির কাছে ক্ষমতা দেওয়া হবে না। আপনারও একই রকম বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এ ধরনের বক্তব্যের অর্থ কী দাঁড়ায়?

রাশেদ খান মেনন: আমি বলেছি, বিএনপির হাতে ক্ষমতা গেলে দেশটা কোথায় যাবে, সেটা বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বিএনপি-জামায়াত দেশটাকে আবার পেছনের দিকে নিয়ে যাবে। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের ধারণা রয়েছে। সেদিক থেকে জনগণই বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না।

কিন্তু বিএনপির কর্মসূচিগুলোয় লোকসমাগম বাড়ছে। তারা সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। সেটি কীভাবে দেখছেন?

মেনন: বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহায়তা নিয়ে দক্ষিণ ও চরম ডানপন্থী দলগুলোকে এক করেছে। বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের ডানপন্থীদের সমর্থন দেবে না। তারা হয়তো খণ্ড খণ্ড ঘটনা ঘটাতে পারবে, কিন্তু বড় কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে না। যেমন তারা মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে লোক এনে বড় জমায়েত করেছে। পরদিনই গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে তারা চুপসে গেছে।

তাহলে সরকার এবং ১৪-দলীয় জোট আপনারা বিরোধী দলের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না?

মেনন: সরকার ও জোট পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। সরকার শেষ পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন করার অবস্থানে থাকবে। এখানে অন্য কোনো চিন্তার কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুটি পক্ষ যেভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, তাতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কি না, এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?

Manual6 Ad Code

মেনন: আমি মনে করি, দেশে নির্বাচন হবেই। বিএনপি না এলেও নির্বাচন হবে। নির্বাচনে না এসে বিএনপি হয়তো অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য খণ্ড খণ্ডভাবে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। বিএনপি মাঝেমধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, তবে নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।

Manual1 Ad Code

আপনারা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথেই ফয়সালা করার কথা বলছে। এই পরিস্থিতিটাকে সংকট হিসেবে দেখেন কি না?

মেনন: না, সংকট যদি বলেন, এটা সংকট নয়। তবে একটা সমস্যা তো বটেই। কারণ, সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করাটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। সেখানে বিএনপি-জামায়াত যে এক দফা ঘোষণা করেছে, সেটি একটা সমস্যা। তবে জেনারেল এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। এখন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে জনগণ সেভাবে সম্পৃক্ত নয়। ফলে তাদের আন্দোলনকে সংকট মনে করি না। কিন্তু তারা মাঝেমধ্যে লোক জড়ো করে খণ্ড খণ্ডভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটিই সমস্যা, তবে সংকট নয়।

বিষয়টাকে সমস্যা হিসেবে দেখলেও তা সমাধানে সংলাপ বা আলোচনা করা উচিত কি না?

Manual2 Ad Code

মেনন: সংলাপ কখনো একপক্ষীয় হয় না। সংলাপ উভয় পক্ষীয় বিষয়। বিএনপি ও তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা এক দফার কথা বলছে। কিন্তু সরকারের পদত্যাগের দাবি নিয়ে কী আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে সংলাপ হবে না বলে আমি মনে করি।

কোনো সংলাপ বা সমঝোতা যদি না হয়, তাহলে কি রাজপথেই লড়াই এবং সংঘাত হবে?

মেনন: শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে—এমন দাবিতে সংলাপ হতে পারে না। বিরোধী দলের এ ধরনের অবস্থানে সংলাপ সম্ভব নয়। আর বিএনপি তো বলেছে, তারা রাজপথেই ফয়সালা চায়। তবে তাদের আন্দোলনে বড় কোনো সংকট হবে না। আমি বারবার বলছি, তারা খণ্ড খণ্ডভাবে একটা পরিস্থিতি তৈরি করবে অথবা হঠাৎ হঠাৎ উত্তাপ ছড়াতে পারবে। তাতে কখনো কখনো অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কোনো সংকট হবে না এবং মূল কাজ নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে না।

২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। এবার বিএনপিকে বাদ রেখে আবারও একতরফা নির্বাচন করা হলে তাতে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ আরও বাড়তে পারে কি না, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপর।

মেনন: বিএনপি না এলেও সরকার নির্বাচন করবে। তাতে হয়তো প্রথম কিছুদিন সমালোচনা হবে। এ ছাড়া কিছু নিষেধাজ্ঞার বিষয়ও আসতে পারে। তবে বাংলাদেশের যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও বাংলাদেশকে প্রয়োজন। ফলে নির্বাচনের পর কিছুদিন সমালোচনা বা আলোচনা চললেও সেটা সরকারকে কোনো সমস্যা করবে না। আর বৈধতার প্রশ্ন তোলারও কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।

ধরুন, কোনো সমঝোতা হলো এবং বিএনপি নির্বাচনে এল এবং নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলো, তখন কি আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির কাছে ক্ষমতা দেবে?

মেনন: এটা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই বলা হয়েছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং ভোটে যে জয়ী হবে, সে-ই সরকার গঠন করবে। তবে নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীন।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Manual6 Ad Code

মেনন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code