নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ৩০ আগস্ট ২০২৩ : আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি ও ভূমির অধিকারসহ বিচার বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় আদিবাসীরা। আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি রক্ষায় কমিশন গঠন করলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের সম্মান উজ্জ্বল হবে। এ দেশের ভূমি, প্রকৃতি রক্ষায় আদিবাসীদের রক্ষা করা দেশের জন্যই জরুরি হলেও রাষ্ট্র আদিবাসীদের প্রতি বারবার বঞ্চনা করছে। বিভিন্ন হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ন্যায় বিচার আদিবাসীরা পাচ্ছে না বলে বক্তারা দাবি করেন।

বঞ্চনা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের লড়াই-সংগ্রামের ৩ দশক (১৯৯৩-২০২৩) পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন আজ বুধবার (৩০ আগস্ট ২০২৩) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম।
বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ সভাপতি এস কে সিকদার, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং বাবু, নাটোর জেলা কমিটির সভাপতি রঘুনাথ এক্কা বক্তব্য রাখেন।

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। কিন্তু আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ হয়নি। আদিবাসীরা এখন হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ভূমি জবরদখল সহ অন্যায় অত্যাচারের বিচার পাচ্ছে না। আদিবাসীদের প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। আদিবাসীদের বঞ্চনা দূর করতে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি,সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ভূমি আদিবাসীদের জীবন, প্রাণ। সেই ভূমিই আদিবাসীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিককে বাঙালি বলা হয়েছে যা অবৈজ্ঞানিক। বাংলাদেশ একটি বহু ভাষা, জাতি, সংস্কৃতির রাষ্ট্র তা সংবিধানে নেই। আদিবাসীদের উপর বিভিন্ন পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্র আদিবাসীদের কোন দৃষ্টিতে দেখে তা পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যেই বোঝা যায়। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণ থেকে বাঁচতে হলে সাহসী হতে হবে। বাংলাদেশকে রাষ্ট্রকে কেবলমাত্র ধর্ম নিরপেক্ষ হলে চলবে না, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি নিরপেক্ষ হতে হবে।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এসডিডিজ বাস্তবায়ন করতে হলে কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। আদিবাসীদের পিছিয়ে রেখে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাদের এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ দরকার। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের লড়াই-সংগ্রামের ৩ দশক পূর্তিতে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টায় ঢাকার শাহবাগ চত্তরে আদিবাসীদের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আদিবাসীদের দাবি সমূহ:
১. সকল আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সরকারি চাকুরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা পুনর্বহাল এবং উচ্চ শিক্ষায় আদিবাসীদের কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. গাইবান্ধা জেলার সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার চাই। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পাওয়ায় অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিচার চাই।
৫. সারাদেশে আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জমি জবর দখল, মিথ্যা মামলা, লুটপাট, পুলিশী হয়রানি, আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ, ভূমি অফিসের ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৬. পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনতিবিলম্বে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।