কর্মচারীদের মজুরীসহ সুযোগ-সুবিধাদি খর্ব করার প্রতিবাদে টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩

কর্মচারীদের মজুরীসহ সুযোগ-সুবিধাদি খর্ব করার প্রতিবাদে টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : চা শিল্প সেক্টরে কর্মচারীদের মজুরীসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি খর্ব করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন।

শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের গুহ রোডস্থ বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ করা হয়।
এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. আমিনুর রহমান, সহসভাপতি শেখ কাউছার মিয়া ও কংকনজ্যোতি ভট্টাচার্য, সহসাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ সুরজিত দাস, প্রচার ও সমাজসেবা সম্পাদক ইব্রাহিম মিয়া সোহেল, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রাসেল ও বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রতিনিধিবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মজুরী বোর্ড শাখা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা (বৃহস্পতিবার আগষ্ট ১০, ২০২৩) মোতাবেক চা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরী সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়। এই চূড়ান্ত গেজেটে শ্রমিক ও কর্মচারীদের স্বার্থের সহিত সাংঘর্ষিক এবং মজুরীসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পূর্বাবস্থা থেকে খর্ব করা হয়েছে, যাহা প্রচলিত শ্রম আইন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস)
সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার সাথে সাংঘর্ষিক।
বর্তমান শ্রমবান্ধব সরকার দেশ পরিচালনা করছেন এবং আমরা শ্রমজীবী মানুষেরা সর্বদা একাত্মতা প্রকাশ করে থাকি। সেহেতু আমরা চা শিল্পের শ্রমজীবী মানুষেরা আশাকরি নি¤œতম মজুরী বোর্ড কর্তৃক উক্ত প্রকাশিত গেজেট স্থগিত করে পূণরায় শ্রমবান্ধব গেজেট প্রকাশিত করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আবশ্যক যে, আপনারা জানেন বিগত ১৯৫৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ঐতিহ্যবাহী “বাংলাদেশ টি এষ্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন” নামক অত্র সংগঠন রেজি: নং-বি-২৫১ গঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৭০ বৎসর যাবৎ অত্র সংগঠন ‘‘বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস)’’ এর সহিত প্রতি ০২ (দুই) বছর অন্তর অন্তর কর্মচারী/ড্রাইভারদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি আলোচনার মাধ্যমে দরকষাকষি সাপেক্ষে বৃদ্ধি করে আসছে, যাহা অদ্যাবধি বলবৎ আছে। অত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নি¤œতম মজুরী বোর্ডে একজন প্রতিনিধিত্ব মনোনয়নের জন্য বারংবার অনুরোধ করা সত্তে¡ও নিম্নতম মজুরী বোর্ড আমাদের অনুরোধ আমলে নেননি (কপি সংযুক্ত)। উল্লেখ আবশ্যক যে, মজুরী বোর্ডে চা শিল্পের শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মি. রামভজন কৈরী ও পরবর্তীতে মি. পংকজ এ কন্দ দায়িত্বরত ছিলেন, কিন্তু তাহারা বারংবার চা শিল্পে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের প্রকাশিত গেজেটে আনীত প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইনের সহিত সাংঘর্ষিক মজুরী সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা খর্ব না করার প্রস্তাব করেন, পরবর্তীতে উক্ত নিম্নতম মজুরী বোর্ড উল্লেখিত শ্রমিক প্রতিনিধি কর্তৃক বারংবার উত্থাপিত বক্তব্য আমলে না নিলে প্রতিনিধিগণ পর্যায়ক্রমে পদত্যাগ করেন।
নিম্নতম মজুরী বোর্ড বাংলাদেশ টি এষ্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের সদস্যদের মজুরীসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন ও বাংলাদেশী চা সংসদের (বিসিএস) সহিত দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদিত হয়ে আসা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামাকে উপেক্ষা করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেন, সেই মোতাবেক আমাদের আপত্তি ও সুপারিশ এবং তথ্য উপাত্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো:-
ক) বিগত ১০.০৮.২০২৩ইং (বৃহস্পতিবার) নিম্নতম মজুরী বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেটের তফসিল-গ এর শর্তাবলী এ মজুরী স্কেল অনুযায়ী
প্রারম্ভিক বেতন মালিকপক্ষের সহিত সম্পাদিত চুক্তিনামা (২০২২-২০২৩) অনুযায়ী সঠিক রাখা হয়েছে, কিন্তু সর্বোচ্চ বেতন কাঠামোর প্রতিটি কর্মচারী পদ বিন্যাসে প্রায় ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা কম দেখানো হয়েছে। যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার সহিত সাংঘর্ষিক।

খ) তফসিল-ঘ এর শর্তাবলী ক্রমিক নং-৪ এ গ্র্যাচুয়িটি কলামে উল্লেখ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ২৬ ও ২৭ মোতাবেক ‘‘কর্মচারী চাকুরীর নিম্নতম মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বৎসর পূর্ণ করা সাপেক্ষে প্রতি বৎসর চাকুরীর
জন্য ১ (এক) মাসের মূল বেতন গ্র্যাচুয়িটি হিসাবে প্রাপ্ত হইবেন”, যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইন ২০০৬/২০১৩ এর ধারা ২ সংজ্ঞা (১০) ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার ধারা ২০ এর পরিপন্থী (দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার কপি সংযুক্ত)।
নিম্নে উক্ত আইনের বিস্তারিত তুলিয়া ধরা হইল:
“গ্র্যাচুয়িটি” অর্থ কোন শ্রমিকের প্রতি পূর্ণ বছর চাকুরী অথবা ছয় মাসের অতিরিক্ত সময়ের চাকুরীর জন্য তাহার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ন্যূনতম ৩০ দিনের মজুরী অথবা ১০ বৎসরের অধিককাল চাকুরীর ক্ষেত্রে তাহার সর্বশেষ প্রাপ্ত মজুরী হারে ৪৫ দিনের মজুরী যাহা উক্ত শ্রমিকের তাহার চাকুরীর অবসানে প্রদেয়, ইহা এই আইনের অধীনে শ্রমিকের বিভিন্নভাবে চাকুরীর অবসানজনিত কারণে মালিক কর্তৃক প্রদেয় ক্ষতিপূরণ বা নোটিশের পরিবর্তে প্রদেয় মজুরী বা ভাতার অতিরিক্ত হইবে”।
গ) উক্ত গেজেটের তফসিল-ঘ এর শর্তাবলী ক্রমিক নং-০৫ এর (খ) উৎসব ভাতা প্রসঙ্গে বলা আছে “কর্মচারী প্রচলিত প্রথায় বা বোনাস স্ক্রিম অনুযায়ী উৎসব ভাতা প্রাপ্য হইবেন”। যাহা বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার পরিপন্থী। বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার ধারা ৫(বি)(ররর) এর (সি) ও ১৩(বি) অনুযায়ী লিখা আছে:- “কর্মচারী ও ড্রাইভারগণ প্রতি বৎসর ২ মাসের উৎসব ভাতা প্রাপ্ত হইবেন, যাহা ঈদুল ফিতর/লাল পূজা এবং ঈদুল আযহা/দূর্গা পূজায় প্রদান করা হইবে” (উৎস: দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামা)।
ঘ) উক্ত গেজেটে বর্ণিত তফসিল-ঘ এর শর্তাবলী ক্রমিক নং-১২ এর অত্র সংগঠনের সদস্যদের কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত মুনাফার অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের সহিত দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদিত চুক্তিনামা অনুযায়ী প্রাপ্ত মুনাফা খর্ব করা হয়েছে। যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত
আইন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত অত্র সংগঠনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামার পরিপন্থী এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের সহিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিনামার ধারা ৮(এ) এর (র)(রর)(ররর)(রা) ও (বি) তে বিস্তারিত বর্ণিত আছে। (উৎস: দ্বিপাক্ষিক চুক্তিনামা)
ঙ) উক্ত গেজেটে প্রকাশিত তফসিল-ঙ এর শর্তাবলী ক্রমিক নং-০৫ এর ৩য় প্যারায় বর্ণিত “আরো শর্ত থাকে যে শ্রমিক ও কর্মচারীগণ তফসিল-ঘ এ উল্লেখিত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হইবেন”। ইহাতে চা শিল্পে কর্মরত
কর্মচারী/ড্রাইভারদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে, যাহা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের সহিত সাংঘর্ষিক।
চ) উক্ত গেজেটে প্রকাশিত তফসিল-ঙ এর শর্তাবলী ৭নং এ উল্লেখ করা হয়-
“টি গার্ডেন” শিল্প সেক্টরের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাথে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশীয় চা সংসদ প্রতি ০২ (দুই) বৎসর অন্তর সুযোগসুবিধা ও উৎপাদনশীলতা বিষয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন”।

গত ৩০.০৩.২০১০ইং রোজ মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের শর্তাবলী-৪ (গেজেট কপি সংযুক্ত) এর পরিপন্থী। যাহা নিম্নরূপ:
“চা শিল্পের বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুযায়ী টি-গার্ডেন শিল্প সেক্টরের চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশীয় চা সংসদ প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর মজুরী সহ উৎপাদনশীলতা ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করিয়া সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন”।
পূণরায় উল্লেখ আবশ্যক গত ১০.০৮.২০২৩ইং তারিখে প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার পূর্বে গত ১৩.০৬.২০২১ইং তারিখে যে প্রকাশিত খসড়া বাংলাদেশ গেজেটে (কপি সংযুক্ত) বলা হয় “গেজেট প্রকাশের ১৪ (চৌদ্দ) দিনের মধ্যে উক্ত আপত্তি বা সুপারিশ উপাত্তসহ লিখিতভাবে চেয়ারম্যান, নিম্নতম মজুরী বোর্ড বরাবর পাঠাতে হইবে”। এর ধারাবাহিকতায় অত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে যথারীতি গত ২২.০৬.২০২১ইং (প্রেরিত আপত্তি ও সুপারিশ পত্রের কপি সংযুক্ত) উক্ত খসড়া গেজেটের উপর আপত্তি ও সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ আবশ্যক যে, গত ১৩.০৬.২০২১ইং রোজ রবিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট এর খসড়া
সুপারিশ নং ৭ নিম্নরূপ:
“চা শিল্পের বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুযায়ী “টি-গার্ডেন” শিল্প সেক্টরের চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ চা সংসদ প্রতি ০৩ (তিন) বছর অন্তর অন্তর মজুরী ছাড়াও উৎপাদনশীলতাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করিয়া সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন”। (কপি সংযুক্ত) যাহা বর্তমানে প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেটের সহিত আংশিক অর্থাৎ প্রতি ০২ (দুই) বৎসর অন্তর অন্তর মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ এর সহিত দীর্ঘদিনের সিবিএ অধিকার যেমন মজুরী সংক্রান্ত আলোচনা করার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ইহা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সহিত দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদিত চুক্তিনামার সাথে সাংর্ঘষিক।
গত ১০.০৮.২০২৩ইং রোজ বৃহস্পতিবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত চূড়ান্ত গেজেট, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত
প্রচলিত আইনের সহিত সাংঘর্ষিক ও শ্রমজীবী মানুষের মজুরীসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি খর্ব হওয়ায় চা বাগান কর্মচারী/ড্রাইভারদের মধ্যে চরম অসন্তোষ্টি বিরাজমান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ