সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সাইফুর রহমান তপন | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও তৎকালীন স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার প্রবক্তা, কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক পলিটব্যুরোর সদস্য, বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাম তাত্ত্বিক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত তিনি। ‘ফরাসি বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব’, ‘বাংলা সাহিত্যে প্রগতির ধারা’, ‘পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ’সহ রাজনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে তাঁর অনেক বই আছে। তাঁর আত্মজীবনী ‘শতাব্দী পেরিয়ে’র জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক রনো জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালে কলকাতায়।
অারপি নিউজ: বর্তমানে আপনি অসুস্থ। তারপরও পাঠকদের জন্য আপনার শারীরিক-মানসিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: কিছুদিন হাসপাতালে, কিছুদিন বাসায়- এভাবেই চলছে আমার জীবন। বাথরুমে গেলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যেতে হয়। চোখেও দেখি না। ফলে লেখা বা পড়া; কিছুই করতে পারি না। তবে মানসিকভাবে খারাপ আছি, বলা যায় না। এই ৩১ অাগস্ট আমার ৮১ বছর পূর্ণ হয়েছে।
অারপি নিউজ: আপনার জীবনের বড় একটা সময় রাজনীতিতে দিয়েছেন। রাজনীতিতে হাতেখড়ি কখন কীভাবে হলো?
হায়দার আকবর খান রনো: আমি আসলে একটা রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার নানা সৈয়দ নওশের আলী শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির ১৯৩৭ সালের সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি যশোরের খুব জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। মাত্র দেড় বছরের মাথায় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি; ওই কেবিনেট থেকে মন্ত্রিসভা তাঁর দেওয়া জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ এবং আন্দামান থেকে রাজবন্দিদের ছাড়িয়ে আনার প্রস্তাবে সায় দেয়নি বলে। পরে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। সুভাষ বোসের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেখানে নেহরুর সঙ্গে বিরোধ হলে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং দীর্ঘদিন এ দল থেকে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। আমার জন্ম কলকাতায় নানাবাড়িতে। তা ছাড়া বাবা বদলির চাকরি করলেও বছরে একবার-দু’বার আমরা কলকাতায় নানাবাড়িতে যেতাম। ওই বাড়িতেই কমিউনিস্ট পার্টির অফিস ছিল। সেখানে জ্যোতি বসু, ডাঙ্গে, সুন্দরাইয়া প্রমুখ নেতাকে দেখতাম। আমি ছিলাম হাফপ্যান্ট পরা বালক। তাই আমার দিকে তাঁদের খেয়াল করার কথা ছিল না; পরে অবশ্য আমি যখন নেতা হই তখন ওই নেতাদের সঙ্গে বহুবার দেখা ও কথা হয়েছে। ফলে ছোটবেলায়ই বাম রাজনীতির একটা প্রভাব আমার ওপর ছিল।
অারপি নিউজ: সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছেন তাহলে অনেক পরে?
হায়দার আকবর খান রনো: সক্রিয় রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তা শুরু করি ১৯৬০ সালে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। আমি সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে কমিউনিজমের কথা বলতাম। তখন এক বড় ভাই, মকবুলার রহমান নাম, বাড়ি রংপুর; আমাকে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি আমার হাতে তুলে দেন ‘শিখা’ নামে একটা পত্রিকা। গোপনে কাজ করা কমিউনিস্ট পার্টি বের করত এটা। হাতে লেখা, সাইক্লোস্টাইল করা। মাত্র তিনটি সংখ্যা বের হয়। ১৯৬১ সালে দলের সদস্যপদ পাই আমি।
অারপি নিউজ: আপনি ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হওয়ার আগেই কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হলেন?
হায়দার আকবর খান রনো: তখন তো আইয়ুবের সামরিক শাসনের কারণে ছাত্র ইউনিয়নের কোনো কমিটি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত আমরা কয়েকজন ১৯৬২ সালের শুরুর দিকে ঠিক করলাম একটা প্রতিবাদ সভা করার। আমরা তারিখ ঠিক করলাম ২১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু হঠাৎ সোহরাওয়ার্দী গ্রেপ্তার হন। এতে ছাত্রলীগ মাঠে নামতে উৎসাহী হয়ে ওঠায় আমরা তারিখটা এগিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ঠিক করি। ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক শাসনের মধ্যে প্রথম ছাত্র ধর্মঘট হলো, সেই সঙ্গে আমতলায় হলো ছাত্রসভা। শ পাঁচেক ছাত্র যোগ দিয়েছিল তাতে; আর বক্তা ছিলাম আমি একা। তখন আমাদের নেতা ছিলেন কাজী জাফর আহমদ ও মোহাম্মদ ফরহাদ। সেপ্টেম্বরে গুলি হলো; মোস্তফা-বাবুল-ওয়াজিউল্লারা মারা গেল। সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে হরতাল ডাকতে অনেক অনুরোধ করার পরও তিনি রাজি হলেন না। আন্দোলন ওখানেই থেমে গেল। অক্টোবরে আমরা গোপন সম্মেলন ডেকে ছাত্র ইউনিয়নের একটা কমিটি করলাম; যেখানে কাজী জাফর সাধারণ সম্পাদক হলেন, আমি যুগ্ম সম্পাদক। এর পরের কমিটিতে, অর্থাৎ ৬৩-তে আমি সাধারণ সম্পাদক হলাম।
অারপি নিউজ: কমরেড রাশেদ খান মেনন আপনার পরে সংগঠনের নেতা হলেন?
হায়দার আকবর খান রনো: ছাত্র ইউনিয়ন ৫২ সালে শুরুর পর পাঁচটা কমিটি পায়। এর পর সামরিক শাসনের কারণে আর কমিটি হয়নি। ৬২ সালে ওই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা ছাত্র ইউনিয়নকে পুনরুজ্জীবিত করি। সাধারণ সম্পাদক হয়ে আরও অনেকের সঙ্গে আমি জেলে যাই। জেলে থাকা অবস্থায়ই ১৯৬৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি পিকিং-মস্কো লাইনে ভাগ হয়ে যায়। আমাদের অংশ মেননকে এবং অন্য অংশ মতিয়াকে সভাপতি করে কমিটি করে। আমি আর ছাত্র রাজনীতি করিনি। আমি এবং কাজী জাফর টঙ্গী চলে যাই শ্রমিক রাজনীতি করতে।
অারপি নিউজ: আপনি বললেন, আপনাদের প্রধান ছাত্রনেতা ছিলেন কাজী জাফর ও মোহাম্মদ ফরহাদ, যিনি পরবর্তী সময়ে কমরেড ফরহাদ হিসেবে বেশি পরিচিতি পান। আমরা চীনপন্থিদের কাছে কাজী জাফরের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা শুনেছি; মস্কোপন্থিদের কাছে শুনেছি কমরেড ফরহাদের কথা। আপনি এখন এক সময় মস্কোপন্থি বলে পরিচিত সিপিবির নেতা। এ দু’জন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
হায়দার আকবর খান রনো: আমাদের প্রজন্ম দু’জন অত্যন্ত প্রতিভাবান নেতা পেয়েছিল। একজন কাজী জাফর আহমদ, আরেকজন কমরেড ফরহাদ। ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে দু’জনেরই অসাধারণ ভূমিকা ছিল। জাফর ভাই যেমন ভালো বক্তা ছিলেন; তেমনি অসাধারণ মাঠের সংগঠক ছিলেন। এ দুটি গুণ কমরেড ফরহাদের ছিল না। ফরহাদ ভাই ভালো ছিলেন বৈঠকি আলোচনায়। জাফর ভাই এক সময় কমিউনিজম ত্যাগ করলেও তাঁর একটা গণভিত্তি ছিল। শ্রমিকদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। অন্যদিকে ফরহাদ ভাই কখনোই বিপ্লবী লাইনে হাঁটেননি। যে কারণে ছাত্র ইউনিয়নকে অনেক বড় সংগঠনে পরিণত করলেও শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর কোনো কাজ ছিল না। তা না হলে তাঁরই হাতে গড়া কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে বিলুপ্ত করে কীভাবে?
অারপি নিউজ: আচ্ছা, কমিউনিস্ট পার্টির বিলুপ্তির যে কারণটা আপনি উল্লেখ করলেন; বর্তমান কমিউনিস্ট পার্টি কি সেভাবে বিষয়টা মূল্যায়ন করে?
হায়দার আকবর খান রনো: না, বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া হয়।
অারপি নিউজ: সিপিবির নেতৃত্বের বিভাজন নিয়ে কিছু বলবেন?
রনো: এটা সবাই জানে- সিপিবি নেতৃত্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত; তবে চীন প্রশ্নে কিন্তু দু’জন খুব কাছাকাছি মত পোষণ করে। শাহ আলম কিন্তু চীন কমিউনিস্ট না- এমনটা বলেই না। সেলিম তো চীনকে কমিউনিস্ট মনে করেই।
অারপি নিউজ: এটা আপনার প্রভাব? লোকে বলে, আপনার মতো চীনপন্থি গিয়ে সিপিবিকে পিকিংয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
হায়দার আকবর খান রনো: না, চীন প্রশ্নে আমার মত ওদের দু’জনের উল্টো। আমি মনে করি, চীনের অনেক বিচ্যুতি ঘটেছে; চীনের লাল রং অনেক ফিকে হয়ে গেছে। এবং এটা শুরু হয়েছে দেং শিয়াও পিং থেকে।
অারপি নিউজ: বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কথা উঠলেই একটা কথা অনেক শোনা যায়। তা হলো, বামপন্থিরা ৬ দফাকে সিআইএর দলিল বলেছিল। আপনারা কি আসলেই তেমনটা মনে করতেন?
হায়দার আকবর খান রনো: ৬ দফাকে আমরা কখনোই এভাবে চিত্রায়িত করিনি। আমরা বলেছিলাম, ৬ দফা অসম্পূর্ণ। এমনকি সিপিবির কংগ্রেসের দলিল দেখুন। সেখানেও লেখা আছে- ৬ দফা অসম্পূর্ণ। আনোয়ার জাহিদের মতো ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ এমন মন্তব্য করতে পারেন। আমি আপনাকে যা বললাম, সেটাই ছিল ৬ দফা সম্পর্কে দলের অফিসিয়াল অবস্থান। আনোয়ার জাহিদ এমন কাজ আরও করেছিলেন। টাঙ্গাইলের ব্যারিস্টার শওকত আলী খান, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা; ‘জনতা’ নামে একটা পত্রিকা বের করতেন, যার সম্পাদক ছিলেন আনোয়ার জাহিদ। সেখানে দুটি সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল ‘দুই কণ্ঠ’ আর ‘নীরব বিপ্লব’ শিরোনামে। এর বিষবস্তু ছিল কীভাবে আইয়ুব খান নীরব বিপ্লব ঘটালেন, আর কীভাবে আইয়ুব খান ও ভাসানী মিলে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারেন তা নিয়ে। তখন মওলানা ভাসানী আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন; একই সময়ে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো হচ্ছিল। লোকে ওই সম্পাদকীয়কে রেফার করেই আইয়ুবের সঙ্গে ভাসানীর আঁতাত আবিস্কার করে অপপ্রচার করতে শুরু করে। আমরা তখন আনোয়ার জাহিদের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। ৬ দফাকে সিআইএর দলিল বলার বিষয়টাও এভাবে আসতে পারে।
অারপি নিউজ: আপনারা তো এখানে একটা জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তা পূরণ হয়নি। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: না না; সেই স্বপ্ন তো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে একটা কাজ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি। এটা একটা বিরাট অর্জন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন এটা- সন্দেহ নেই। এবং আমার সমসাময়িক যাঁরা তাঁদের জীবনেরও শ্রেষ্ঠ অর্জন এ স্বাধীনতা। বাংলার ইতিহাসেরও শ্রেষ্ঠ অর্জন এটা। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি যে, ইতিহাসের এ শ্রেষ্ঠ ঘটনাটি দেখার সুযোগ আমি পেয়েছি। এমনকি তাতে অংশগ্রহণেরও সুযোগ আমার হয়েছে। বয়সটা তখন যুদ্ধ করারই ছিল। কিন্তু জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায়, তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি আমরা। জনগণতন্ত্র সমাজতন্ত্রেরই আগের একটা ধাপ। দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে, তবে তা সামান্য।
অারপি নিউজ: এখনকার বাম দলগুলোর ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
হায়দার আকবর খান রনো: নাহ; কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া আর কয়টা বাম পার্টি আছে? একটা পার্টি হতে হলে ন্যূনতম গণভিত্তি লাগে, ঐতিহ্য লাগে। সেটা ক’টা পার্টির আছে? একটা অফিস নিয়ে একটা সাইনবোর্ড লাগালাম, একটা থিসিস দিলাম; এতেই বাম পার্টি হয়ে গেল? তবে কমিউনিস্ট পার্টিকে আমি আইডিয়াল পার্টি বলছি না। একটা তো সংশোধনবাদের প্রভাব এখনও আছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে গেল তখন এ পার্টির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ বললেন- মার্কসবাদ ভুল। বুঝুন, অবক্ষয়টা কোন পর্যায়ে গিয়েছিল! সেলিম, মনজুরুল আহসান খানরা মিলে পার্টিটাকে রিবিল্ড করেছেন। তারপরও শোধনবাদের অবশেষ রয়ে গেছে।
অারপি নিউজ: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি তিনটি দিক থেকে দেখতে চাই। প্রথমত, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার দাপট অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৭২ সালে আমার ধারণা ছিল, সংবিধানে যে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে, তা হয়তো বুলিবাগীশতা। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার পর এখানে সাম্প্রদায়িকতা ফিরবে না। আজকে দেখা যাচ্ছে, আমার ধারণা ভুল ছিল। এখানে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ক্রমাগত বাড়ছে। ধর্মীয় মৌলবাদকে বঙ্গবন্ধু একভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সব ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের একটা বড় অপরাধ হলো- তিনি ধর্মভিত্তিক দলের ওপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন। ফলে জামায়াত, মুসলিম লীগ ইত্যাদি দল আবার প্রাণ পেল। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে মুছে ফেললেন। বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে ফিরিয়ে আনলেও জামায়াতকে মোকাবিলা করার নামে কখনও হেফাজতকে সঙ্গে নেয়, আবার কখনও হেফাজতের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এভাবে হবে না। দ্বিতীয়ত, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র। ভোট কীভাবে হয় এখানে আমরা জানি। আইনের শাসনও নেই, সুষ্ঠু নির্বাচনও নেই। তৃতীয়ত, যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তা কতটুকু জনগণের কাজে লাগছে- সে প্রশ্ন আছে। পদ্মা সেতু করেছে বিশ্বব্যাংককে উপেক্ষা করে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে। সে জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা আমরা করি। কিন্তু উন্নয়নের নামে কতজন ধনী হয়েছে আর কতজন গরিব হয়েছে; ধনী-গরিবের বৈষম্য কী সংখ্যায় বেড়েছে; সে আলোচনাও করতে হবে।
অারপি নিউজ: শেষ প্রশ্ন। যদি আপনার ৮১ বছরের তৃপ্তি-অতৃপ্তি নিয়ে কিছু বলতে বলি; কী বলবেন?
হায়দার আকবর খান রনো: যে জীবন আমি যাপন করেছি, তা যে খুব খারাপ- আমি বলব না। আমি সারাজীবন মানুষের সঙ্গে থেকেছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। টঙ্গীর শ্রমিকদের সঙ্গে থেকেছি-খেয়েছি; রাস্তার মানুষের সঙ্গে থেকেছি; সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিছিল করেছি। তাদের সবার ভালোবাসা আমি পেয়েছি। এর চেয়ে বড় জিনিস আর নেই। এ জীবন যাপন করার জন্য কোনো খেদ তো নেই-ই; অভিযোগও নেই। তবে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলাম, তা পূরণ হয়নি- এ কষ্ট তো একটু হয়ই। এ কষ্ট শুধু আমার কেন, সঙ্গে যাঁরা ছিলেন; সবারই হওয়ার কথা।
অারপি নিউজ: ধন্যবাদ হায়দার আকবর খান রনো। অনেক অসুস্থতার মধ্যেও অারপি নিউজকে সময় দিলেন। আপনাকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা। আশা করি, সুস্থ হয়ে উঠবেন। আবার কথা হবে আপনার সঙ্গে।
হায়দার আকবর খান রনো: অারপি নিউজকেও ধন্যবাদ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D