পুনরায় বিয়ে ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার

প্রকাশিত: ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩

পুনরায় বিয়ে ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার

Manual8 Ad Code

পুলক ঘটক |

বেশ্যাবৃত্তির অনুমতি আছে, পুনরায় বিয়ে করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার নেই। হিন্দুরা কোনটা চান? ======================

আপনারা অনেকেই সনাতন ধর্মশাস্ত্র চর্চা করেন। শিক্ষিত মানুষ যারা শাস্ত্র ঘাটার সময় পান না, তারাও বিষয়টি বুঝবেন। বলুন দেখি পরাশর সংহিতার এই বিধানটি ধর্মীয় কিনা?

“নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে ক্লীবে চ পতিতে পতৌ।
পঞ্চস্বাপৎসু নারীণাং পতিরণ্যো বিধিয়তে।”
এই শ্লোকে নারীর পুন:বিবাহের বিধান দেওয়া আছে এবং কোন কোন অবস্থায় তা করা যাবে সেকথা বলা হয়েছে।
শ্লোকটির অর্থ হল, “স্বামী যদি নিরুদ্দেশ হয়, মারা যায়, প্রব্রজ্যা অবলম্বন করে (অর্থাৎ সন্ন্যাসী হয়ে যায়), ক্লীব (পুরুষত্বহীন) হয় অথবা পতিত(ধর্ম বা সমাজ থেকে বিচ্যুত) হয় – এই পাঁচ প্রকার বিপদ উপস্থিত হয়, তবে নারীর জন্য অন্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া বিধেয়।” এই বিধানের প্রতিপালন সনাতন ধর্ম, নাকি ইংরেজদের বানানো আইন মানাটা ধর্ম?

ইংরেজরা যে হিন্দু আইন বানিয়ে গেছে তাতে বিশেষ প্রয়োজন হলেও হিন্দু নারী-পুরুষের বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার নেই। বড়জোর আলাদা বাস করতে পারবেন। আর নারীর পুনরায় বিয়ের তো প্রশ্নই ওঠেনা। তবে পুরুষরা যত ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে। ইংরেজরা এ সংক্রান্ত “The Hindu Married Women’s Right to Separate Residence and Maintenance Act” নামে আইনটি বানিয়েছে ১৯৪৬ সালে। অর্থাৎ তারা ভারতবর্ষ থেকে বিদায় নেওয়ার মাত্র এক বছর আগে এটা করেছে। তাহলে তার আগে কি সনাতন ধর্ম ছিল না?

Manual7 Ad Code

আমরা বাংলাদেশের হিন্দুরা বৃটিশের আইন মানছি বলে এখনো ধার্মিক অছি, কিন্তু ভারতে আইন সংশোধন হওয়ায় সেখানকার হিন্দুরা আর ধার্মিক নেই- এ কথা বলার কি সুযোগ আছে?

Manual2 Ad Code

পরাশর সংহিতার উপরোক্ত শ্লোকটি ছাড়াও আমি বেদ, সংহিতা, রামায়ণ ও পুরাণ থেকে নারীর পুন:বিবাহের পক্ষে এরকম অনেকগুলো সুস্পষ্ট বিধান ও ঘটনার দৃষ্টান্ত দেখাতে পারব। সনাতন ধর্মে বিয়েও একপ্রকার নয়, বহুমাত্রিক এবং বহুরকমের। সেগুলো সব উল্লেখ করে লেখাটি বড় করছি না। তবে কেউ যদি জানতে চান অথবা চ্যালেঞ্জ করতে চান তবে মন্তব্যে রেফারেন্সসহ জবাব দেব।

আচ্ছা, আমাদের ধর্মগ্রন্থে বিবাহবিচ্ছেদ এবং নারীদের পুনরায় বিবাহের যে বিধান দেওয়া হয়েছে তা কি সমাজের অকল্যাণের জন্য করা হয়েছে? একজন নেশাগ্রস্ত যুবক বদ্ধপাগলের মতো রাস্তাঘাটে পরে থাকে। সেই ছেলের ঘরে যে যুবতী স্ত্রী অসহায় হয়ে পড়ে রয়েছে–স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্যসম্পর্ক নেই — পাগল ছেলেটির কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া মঙ্গলজনক কিনা?

Manual1 Ad Code

তাহলে বলুন, আমরা যারা হিন্দু আইন সংস্কার চাচ্ছি তারা সমাজের ভাল চাচ্ছি, নাকি যারা এর বিরোধিতা করছে তারা সমাজের ভাল চায়? বিবাহ বিচ্ছেদ তো সবার জন্য নয়। যার ক্ষেত্রে প্রয়োজন, এটা তার জন্য। মানুষের জীবনের নানাধরণের জটিলতা থাকে –গোপনে অথবা প্রকাশ্যে। বিবাহ বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ করে দিয়ে কি সবার সমাধান সম্ভব? যার প্রয়োজন, তার অধিকারে অন্যরা কেন বাধা দেবে? সভ্য মানুষরা অন্যের অধিকারে বাধা দেয় না।

Manual2 Ad Code

বাস্তব পরিস্থিতির কারণে ইদানিং অনেকে সমঝোতার মাধ্যমে নোটারি পাব্লিকের কাছে গিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের কাগজে সই করে। এভাবে অনেক হিন্দু নারীর অন্য জায়গায় বিয়েও হচ্ছে। এই পদ্ধতিটা আসলে সম্পূর্ণ ভুয়া, আইন বহির্ভূত এবং অবৈধ। বিদ্যমান হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনো অধিকারই নেই। এরকম বিয়ের ফলে যে সন্তান উৎপাদন হয়, আইনের চোখে সেই সন্তানও অবৈধ। সেই শিশুটি বড় হলে হিন্দু আইন অনুযায়ী পুত্রের সমান সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারও তার নেই। এরকম আরও বহু জটিলতা আছে।
ইংরেজদের বানানো হিন্দু আইন অনুযায়ী ধর্মান্তরীত হওয়া অথবা যৌনকর্মীর খাতায় নাম লেখানো ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার নেই। হ্যা ভাই, হিন্দু মেয়েদের বিবাহিত জীবন ছেড়ে বেশ্যাবৃত্তিতে প্রবেশের অধিকার এবং সুযোগ দেওয়া আছে। ধর্মান্তরিত হলে বা বেশ্যাবৃত্তিতে প্রবেশ করলে হিন্দু বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব। কিন্তু পুনরায় বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বাঁচার অধিকার আইনে নেই।

এবার বলুন দেখি আপনারা কোনটা ভাল মনে করেন? আমি বিশ্বাস করি আপনারা বেশিরভাগ মানুষ সমাজের মঙ্গল চান; কিন্তু কিছু সংখ্যক টাউট নেতার বক্তব্যের কারণে কেউ কেউ হয়তো বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। যারা আইন সংস্কারের বিরোধিতা করছে তাদের কাছে দয়া করে এসব প্রশ্নের উত্তর নিন। যদি সনাতন ধর্ম এবং হিন্দু সমাজকে ভালবাসেন তবে জেদাজেদি নয়– জ্ঞান, যুক্তি এবং বিবেকবোধের মাধ্যমে সমাজের কল্যণের জন্য এই বিষয়গুলোর সমাধানের চিন্তা করুন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code